রাজধানীর অদুরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আসনটি হচ্ছে গাজীপুর-১।
টানা তিন বার এ আসনটি দখল করে রেখেছেন আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট প্রার্থী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আলহাজ¦ এ্যাড. আ. ক. ম মোজাম্মেল হক (এমপি)। চর্তুথ বারের মতোও নৌকার আস্থায় এ মন্ত্রী। কিন্তু তাঁর আসনে অনেকটা সরবে আওয়ামীলীগ ও দলীয় সমর্থক তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী। সরগরম হয়ে উঠছে নিজেদের রাজনীতির মাঠ।
এতে নানা জল্পনা-কল্পনা ও আলোচনা-সমালোচনায় মুখরিত প্রার্থীদের সমর্থকরা।
নির্বাচন অফিস, এলাকাবাসী ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর-১ আসনটি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলা এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১ নং ওয়ার্ড থেকে ১৮ নং ওয়ার্ড এলাকা অর্থাৎ গাজীপুর মহানগরীর বাসন, কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর থানা এলাকা নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা হলো ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৪ এবং মহিলা ভোটার সংখ্যা হলো ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৫০৮। এছাড়াও মোট ভোট কেন্দ্র সংখ্যা ২৩৭টি ও বুথ সংখ্যা হলো ১ হাজার ৫১২টি। টানা তিন বার গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটি দখল করে রেখেছেন আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট প্রার্থী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আলহাজ¦ এ্যাড. আ. ক. ম মোজাম্মেল হক। এবার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও তিনিসহ এ আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। কিন্তু আবারও দলীয় মনোনয়ন পেলেন ১৯শে মার্চের মহানায়ক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী। দলের আস্থা ও জনগণের ভালবাসায় বিজয়ের মাধ্যমে চর্তুথ বারের মতোও আসনটি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে চান হেভিওয়েট এ মন্ত্রী।
এদিকে বিকল্প প্রার্থী (ডামি) রাখার দলীয় পরামর্শ, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আনতে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উন্মুক্ত করে দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ যেন নির্বাচিত হতে না পারে- এমন বক্তব্য দিয়েছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনগনকে ভোটমুখী করতে স্বতন্ত্র কৌশল হিসেবে এবার কিছুটা নরম সুর আওয়ামী লীগের। ফলে দলীয় প্রতীকের বিপক্ষে প্রার্থী হতে অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছেন নৌকা বঞ্চিতরা। তাই নৌকা বঞ্চিত অনেকে নৌকার বিপক্ষে নির্বাচনে লড়বেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে বুধবার দুপুর পর্যন্ত এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনজন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। এরা হলেন- কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাসেল, আওয়ামী সমর্থক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ কর্মী নূরে আলম সিদ্দিকী ও গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল হাসান সরকার রাসেল। নৌকার বিপক্ষে নিজেদের দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সরবে থাকায় সরগরম হয়ে উঠছে আওয়ামীলীগের রাজনীতির মাঠ। আর গুঞ্জন উঠেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন নৌকার প্রার্থী। এ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা ও আলোচনা-সমালোচনায় মুখরিত প্রার্থীদের সমর্থকরা। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা বলছেন, নৌকার বিপক্ষে লড়াই করেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেতে পারেন। অপরদিকে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা বলছেন, দেশে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে আওয়ামী সরকার। আর উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন মন্ত্রী। এছাড়াও দলীয় কর্মসূচীসহ বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে তিনি সবসময় মাঠে ছিলেন। ফলে উন্নয়নের ধারা ঠিক রাখতে মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে আবারও বিজয়ী করছেন বলেও জানিয়েছেন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরে আলম সিদ্দকী বলেন, আওয়ামীলীগকে ভালবেসে সবসময় মাঠে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা যাবে। সেজন্য আমি নির্বাচনে অংশ নিবো। এছাড়াও দল থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, সেটা পালন করবো। তবে নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী। সে অনুসারে আমি মাঠে কাজ করে যাচ্ছি।
অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম রাসেল বলেন, আওয়ামীলীগের মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছিলাম। আমাকে দেওয়া হয়নি। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যারা মনোনয়ন পাননি তারা ইচ্ছা করলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল হাসান সরকার রাসেল বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় এখন পর্যন্ত দলীয় কোন প্রভাব দেখা দেয়নি। সামনে যদি দলীয় প্রভাব দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করবো। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ের জন্য আমি শতভাগ আশাবাদী।
নেতাকর্মীদেরকে ঘরে ঘরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সালাম পৌঁছে দেওয়ার আহবান জানিয়ে নৌকার প্রার্থী আলহাজ¦ এ্যাড. আ. ক. ম মোজাম্মেল হক বলেন, জনগনকে বুঝান আগামী ৭ জানুয়ারী তারা যাতে নির্বিগ্নে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনিমার্ণে তারা যাতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করে। আর তিনি যেন দেশের উন্নয়নের যাত্রাকে অব্যাহত রেখে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে পারে।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, এ পর্যন্ত ১০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। আগামী ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময়। সেগুলো ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর বাছাই করা হবে। আর প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। এছাড়া ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ এবং ৫ জানুয়ারী থেকে প্রচার-প্রচারণা শুরু হবে। ৭ তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে নির্বাচনী মাঠে অতিরিক্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post