মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা:
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গোড়াই শিল্পাঞ্চলের গোড়াই-সখীপুর-ঢাকা রোডে সিএনজি স্টেশন দখল ও চাঁদা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে যুবলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। দফায় দফায় সংঘর্ষে গোড়াই শিল্পাঞ্চলের হাটুভাঙ্গা এলাকায় এক রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। আহতদের মধ্যে গুরুতর ৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনেছেন। ঘটনার পর দুই গ্রুপই একে অপরকে দায়ী করে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করেছেন। চাঁদার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে এক গ্রুপে নেতৃত্বে দিচ্ছেন খান আহমেদ শুভ এমপির ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) মীর আসিফ অনিক এবং অপর গ্রুপে নেতৃত্বে দিচ্ছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার তাহরীম হোসেন সীমান্তের পক্ষের ও সাবেক চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টুর পুত্র মীর মইন হোসেন রাজিব। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। আজ রবিবার (৭ জুলাই) মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চলের হাটুভাঙ্গা রোডে দুপুরে এ ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, গোড়াই শিল্পাঞ্চলের গোড়াই-সখীপুর-ঢাকা রোডে ১৫০ টির মত সিএনজি চলাচল করে আসছে। সিএনজিগুলো, বাঁশতৈল, তক্তারচাল, সখীপুর, গারোবাজার, নলুয়া, সাগরদিঘি, পাথরঘাটাসহ বিভিন্ন রোডে চলাচল করছে। সিএনজি স্টেশন দখল ও চাঁদা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন ধরে চাঁদার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে খান আহমেদ শুভ এমপির পিএস মীর আসিফ অনিক এবং অপর গ্রুপের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার তাহরীম হোসেন সীমান্তের পক্ষের ও সাবেক চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টুর পুত্র মীর মইন হোসেন রাজিবের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে ইতিপুর্বে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে।
সিএনজির চালক ও যাত্রীগন অভিযোগ করেন, শ্রমিক সংগঠনের নামে গোড়াই-সখীপুর-ঢাকা রোডের ১৫০ টি সিএনজি থেকে প্রতিদিন ৫০ টাকা হারে চাঁদা দিতে হচ্ছে। প্রতি দিন চাঁদা উত্তোলন হয় প্রায় ৭ হাজার ৫০০শ টাকা। এভাবে প্রতি মাসে চাঁদা উঠেছে প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং এবং বছরে চাঁদা উঠেছে প্রায় ২৭ লাখ টাকা। দীর্ঘ দিন এই চাঁদা উত্তোলন করেছেন যুবলীগ নেতা মীর মইন হোসেন রাজিব। গত সংসদ নির্বাচনের পর এই চাঁদা উত্তোলন করছেন এমপির ব্যক্তিগত সহকারী মীর আসিফ অনিকের লোকজন।
এমপির ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) ও যুবলীগ নেতা মীর আসিফ অনিক অভিযোগ করেন, টাঙ্গাইল জেলা অটোরিকসা, অটোটেম্পো ও সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি-৩০০৮ এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গোড়াই-সখীপুর রোডে সিএনজি স্টেশনে চাঁদা উত্তোলনের জন্য টিপু সুলতানকে সভাপতি এবং মো. মঞ্জুরুল হক খানকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি দিয়েছেন। এই কমিটিই বৈধ কমিটি এবং এই কমিটির নেতারা সিএনজি স্টেশন নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। মীর মইন হোসেন রাজিব সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নাম ভাঙ্গিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে জোর পুর্বক শ্রমিকদের জিম্মি করে চাঁদা উত্তোলন করতো। ঐ কমিটির কোন ভিত্তি নেই। আজ রবিবার সন্ত্রাসী মীর মইন হোসেন রাজিব ও অস্্রধারী গুন্ডা বাহিনী সিএনজি স্টেশনে গিয়ে জাহাঙ্গীর মাষ্টারকে মারপিট করে টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং অবৈধ ভাবে সিএনজি স্টেশন দখলের চেষ্টা করে। এই ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পরলে সাধারণ শ্রমিক ও এলাকার লোকজন মিলে তাদের ধাওয়া করলে সংঘর্ষ বাঁধে। রাজিবের নেতৃত্বে বাহার, দুলাল, নজরুল, একাব্বর, আলম, মাইন, রাফি, নাজিম, দুলাল ও শাহিদসহ দুই শতাধিক সন্ত্রাসী দেশীয় অস্্র নিয়ে হামলা চালায়। হামলা ও দেশীয় অস্্েরর কোপে তার পক্ষের মীর হাসিব রেজা, মীর রাহীব, আলামিন, ফরহাদ ও রবিনসহ ৬-৭ জন আহত হয়। তাদের হাসপালে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে থানায় মামলা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ ব্যাপারে সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টুর পুত্র ও টাঙ্গাইল জেলা যুবলীগের নেতা মীর মইন হোসেন রাজিব অভিযোগ করেন, টাঙ্গাইল জেলা অটোরিকসা, অটোটেম্পো ও সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি-৩০০৮ এর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল দর্পন ও সাধারণ সম্পাদক মো. আতিক খান গোড়াই-সখীপুর রোডে সিএনজির স্টেশনে চাঁদা উত্তোলনের জন্য মীর ইসতিয়াককে সভাপতি এবং মো. নজরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছরের জন্য একটি কমিটি দিয়েছেন। এই কমিটি বৈধ এবং এরাই এখন চাঁদা উত্তোলন করেছে। মীর আসিফ অনিকের কমিটির কোন ভিত্তি নেই। এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে স্টেশন দখল করতে চাচ্ছে। আজ রবিবার অনিকের নেতৃত্বে মীর হাসিব রেজা, মীর রাহীব, রবিন, ফরহাদ ও আলামিনসহ ২০০-৩০০শ সন্ত্রাসী বাহিনী অস্্র নিয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। হামলায় তার পক্ষেল অভি, নাজিম উদ্দিন, বাহারসহ ৫-৬ জন আহত হয়। গুরুতর অবস্তায় তাদের মির্জাপুর কুমদিনী হাসপাতাল এবং টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অপর দিকে এ রিপোর্ট পাঠানো পর্যন্ত উভয় গ্রুপের মধ্যে গোড়াই শিল্পাঞ্চলে টান টান উত্তেজনা থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যে কোন সময় বড় ধরনের সংঘর্ষ হতে পারে বলে আশংকা করছেন এলাকাবাসি। হাটুভাঙ্গা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রেজাউল করিম বলেন, গোড়াই শিল্পাঞ্চলে দুই পক্ষের মধ্যে সিএনজি স্টেশন দখল নিয়ে গন্ডগোলের খবর পেয়ে অতিরিক্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পাঠানো হয়েছিল। বড় ধরনের অপৃতিকর ঘটনা ঘটেনি। উভয় পক্ষ অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//৭ জুলাই ২০২৪//

Discussion about this post