Print Date & Time : 3 July 2025 Thursday 9:12 pm

গৌতম সাধুর আগমনে বিনোদগঞ্জ উৎসবে সরব

আধুনিক কপিলমুনির রুপকার ও বিনোদগঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু। তার পৌত্র গৌতম সাধু। তিনি শেঁকড়ের টানে ভারত থেকে কপিলমুনিতে এসেছেন। জন্মের পর এটা তার দ্বিতীয় বার আপন ঠিকানায় ফেরা। প্রথম বার বাবার হাত ধরে এসেছিলেন প্রায় ৫০ বছর আগে। তবে দ্বিতীয় বার তাঁর দেশে ফেরা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে তৈরী হয়েছিল নানা অনিশ্চয়তা। তবে সর্বশেষ সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রায় সাহেবে বিনোদ বিহারী সাধুর স্মৃতি সংরক্ষনে কাজ করে যাওয়া অন্যতম প্রধান সংগঠন বিনোদ স্মৃতি সংসদের ছায়াতলে গত ৭ মে দুপুরে বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে স্বপরিবারে কপিলমুনিতে পৌছেছেন তিনি।

১০ মে রায় সাহেবের ১৩৩ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে পৈত্রিক নিবাসে এবারের আগমন। ৭ মে দুপুরে বিনোদ স্মৃতি সংসদ তাকে নিয়ে শোভাযাত্রসহ কপিলমুনিতে পৌছালে আগে থেকেই অপেক্ষমান ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শিশু-কিশোর, আবাল,
বৃদ্ধ-বণিতারা আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। জড়িয়ে ধরে অনেকেই কেঁদে ফেলেন। এ যেন দীর্ঘ দিন বিনোদ শূণ্যতায় তৃষ্ণার্ত মানুষের পরম প্রাপ্তি।

মানুষের মিলন মেলায় চড়ে তিনি প্রথমেই দাদুর প্রতিষ্ঠিত বেদ মন্দিরে সংরক্ষিত তাঁর মূর্তিতে পুষ্পমাল্য অর্পন করেন। পূজা দেন শিব মন্দির ও বেদ মন্দিরে। এরপর বিনোদ বিহারী সাধুর প্রতিষ্ঠিত জনপদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ কপিলমুনি সহচরী বিদ্যা মন্দির প্রাঙ্গনে প্রতিস্থাপিত রায় সাহেবের মূর্তিতে। এরপর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির আহমেদসহ
শিক্ষক-কর্মচারীরা তাকে নিয়ে যান বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কক্ষে। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর চরম তৃপ্তিতে পৌছান পূর্ব-পুরুষদের গন্ধমাখা বিনোদভবনে। সেখানে অপেক্ষমান রায় সাহেবের ভাই কুঞ্জ বিহারী সাধুর ওয়ারেশদের পরিবার তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করে নেন। এসময় উলু ও শঙ্খ ধ্বণিতে চারপাশ মুখরিত হয়ে উঠে। পায়ে হেঁটে কিছুক্ষণ বিনোদ ভবন পায়চারীর পর ফের বেরিয়ে যান ঐতিহাসিক কালী মন্দিরে। সেখানে পূজা দিয়ে চলে যান বিনোদ স্মৃতি সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এ্যাড.দীপংকর কুমার সাহার বাসভবনে। বর্তমানে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন।

এদিকে গৌতম সাধু কপিলমুনিতে আগমনের পর গত তিন’দিনে স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক-সাংষ্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন তাঁর সাথে। এসময় আবেগে প্রায় সকলেই চোখ
ভেজাচ্ছেন। সাক্ষাৎ শেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা তার প্রতিক্রিয়ায় লেখেন, বিনোদ বিহারী সাধুকে কখনো চোখে দেখেননি, ছুঁয়ে দেখা হয়নি তাই। তবে গৌতম সাধুকে মনভরে অপলক দেখলেন,
ছুঁয়েও দেখা হল। এমন তৃপ্তি নিয়ে অনেককেই তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করতে দেখা যাচ্ছে।

ইতোমধ্যে রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর ১৩৩ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে তাঁর প্রতিষ্ঠিত কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দিরের পক্ষে ৯ মে (সোমবার) তাঁর অপর সৃষ্টি অমৃতময়ী মিলনায়তনে আয়োজিত কর্মসূচীর শুরুতে রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন, আনন্দ শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা, পুরস্কার প্রদান ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়৷

রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর ১৩৩ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বিনোদ স্মৃতি সংসদের কর্মসূচীর মধ্যে ছিল, তাঁর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমালা অর্পন, আনন্দ শোভাযাত্রা, স্মরণসভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে
উপস্থিত ছিলেন, খুলনা-৬(পাইকগাছা-কয়রা) এর সংসদ সদস্য আলহাজ্জ্ব আক্তারুজ্জামান বাবু।

এবি//দৈনিক দেশতথ্য//মে ১১,২০২২//