লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম দুই জেলা হতে আগত নানা রঙের না চমকপদ বাহারী নামের নৌকা। এসব নৌকার মাঝিরে গাঁয়ে ছিল বর্ণিল পোষাকে সজ্জিত। ১০টি নৌকার চেপে মাঝি-মাল্লা গণ প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে আসেন। তাদেও কণ্ঠে ছিল ভাটিয়ালি, জারি, সারি ও ভাওয়াইয়া গানের সুর। ঢাক-ঢোলের ঝন্দেও তালে তালে বৈঠা মেরে মেওে পানির ছলাত ছলাতছল ছন্দ তুলে এগিয়ে চলছে নাও। এই নৌকা বাইচ দেখতে হাজার হাজার দর্শক ভীড় করেছে রত্নাই নদীর দুই পাড়ে। শনিবার বিকালে ছুটির দিন থাকায় উপচে পড়া ভীর ছিল নদীর ধারে। নদী পাড়ের মানুষে এই আয়োজন ৩টি কারনে একটি ঐতিহ্য রক্ষা , অন্যটি অর্থনৈতিক প্রবাহ সৃস্টি ও তৃতীয়টি পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করা। এই ঐতিহ্যবাহী মেলা গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে।
এই বৈচিত্রময় নৌকা বাইচের আয়োজনটি ছিল জেলার সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের চর খাটামারীতে গতকাল শনিবার বৈকালে। সদর উপজেলার কুলাঘাট ও বড়বাড়ী ইউনিয়নের মানুষ কলাখাওয়া ঘাটের (রত্নাই বাজার সংলগ্ন) পাড়ে প্রতিবছর এই আয়োজন করে থাকে। রত্নাই নদীর তীরে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ খেলা কে কেন্দ্র করে মাসব্যাপী প্রস্তুতি থাকে নৌকা বাইচে অংশ নেয়া প্রতিযোগিদের। তারা নতুন নৌকা বানায় বা সংস্কার করে। কে কে নৌকায় মাঝি মোল্লঅ হবে তাদের নৌকা চালাতে মাস ব্যাপী নদীতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ঐ দিন নদী পাড়ে মেলায় দেশের ঐতিহায্যবাহী খাবারের দোকানদারদেও খবর দেয়া হয়। সেখানে পিঠা পায়েস, চিড়া, মুড়ি, দৈই, মিষ্টি, জিলাপি, খুরমা, গজা, গুলগুলা, সন্দেশ, মাখন , ঘি, পাওয়া যায়। বিশাল মাছের বাজারও বসে। নদীর মাছ, বড় পুকুরের দেশে মাছ পাওয়া যায়। এক কথা গ্রামীণ বাজার মেলার মত করে। এই মেলায় কৃষি উপকরন, ধানকাটার কাস্তে, কোদাল, মই, খন্তা, পাসুন, হাসুয়া, নাঙ্গল, জোংগাল, বাঁশের তৈরী নানা রংগের তৈজসপত্র, গৃহস্থালি পণ্য কত কি। আসলে এই মেলা গ্রামীণ অর্থনৈতিক প্রবাহের একটি কৌশল। মেলা ঘিওে এখানে দেশীয় পণ্যে বাজারে কয়েক কোটি টাকর পণ্য কেনা বেঁচা হয়। দুর দুরান্ত হতে মানুষ আসে। শ্রমিক, কৃষিজিিব, পরিবহন শ্রমিক, গ্রামীণ কারিগর সকলের পকেটে টাকা ঢুকে। কেউ সেবা দিয়ে, কেউ পণ্য বেছে। আবার কেউ আনন্দ বেছে, কেউ আনন্দ পেতে অর্থ খরচ করে। মেলোয় গিয়ে কেউ খালি হাতে ফিওে না কেউ খুশি নিয়ে ফিরে, কেউ পণ্য বেছে খুশি হয়ে ফিরে। প্রতিটি গ্রামীণ মেলার অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। যদি মেলাটি দেশীয় পণ্য ও দেশীয় শিল্পকে প্রট্রোনাস করার জন্য হয়। সাথে সাথে ঐতিহ্য রক্ষাও হয়। এটাই বাংলার কৃষ্টিকালর্চার।
এই নৌকা বাইচ উপলক্ষ্যে রত্নাই নদীর দুই ধারে গ্রামীণ লোকজ সংস্কৃতির মেলায় হাজারো মানুসের ঢল নামে। মেলায় গ্রামীণ রকমারি মিষ্টি জাতীয় খাবার, পিঠা, পুলি, মুড়ি, মুরকি, খৈই, দই, নাডু, বাতাসা, প্রভূতি মজাদার খাবরের পরসা সাজিয়ে বসে ছিল দোকানিরা। এসব দোকানিরা সারা বছর সারা দেশ ঘুরে ঘুরে মেলা করে বেড়ায়। লালমনিরহাটের বান্দের বাজার বনিক সমিতির আয়োজনে এ নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা ৬টায় নৌকা বাইচ শেষ হয়। এই নৌকা বাইচ দেখার জন্য রত্নাই নদীর দুই তীরে দুপুর হতে লোক সমাগম শুরু হয়। নদীর তীরে হাজার হাজার শিশু, নারী, পুরুষ ও পর্যটকরা উপস্থিতি ছিল। দুই তীরের দর্শকরা ছিল আনন্দ উৎসব মুখর পরিবেশে। নৌকা বাইচে অংশ গ্রহনকারী সকলকে শান্তনা পুরস্কার দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এবারের প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পদ্ধতিটি ছিল ব্যাতিক্রমি কারণ বড়বাই ইউনিয়নে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন অনুস্ঠিত হবে। তাই নৌকা বাইচ নিয়ে পুরস্কারের কমবেশী হলে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সকলকে পুরস্কৃত করা হয়।
জা// দৈনিক দেশতথ্য// ২৩ অক্টোবর ২০২২//

Discussion about this post