নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁয় গলায় দড়ি প্যাঁচানো অবস্থায় সাবিনা ইয়াসমিন (৪০) নামে এক এনজিও কর্মকর্তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে নওগাঁ শহরের রজাকপুর মধ্য পাড়া এলাকার লিয়াকত আলীর বাসার দ্বিতীয় তলায় লাশটি পাওয়া যায়। লাশটি সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ছিল।
সাবিনা ইয়াসমিন পালিয়ে যাওয়া সুরমা মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ এর প্রধান কার্যালয়ে সহকারি হিসাব রক্ষক ছিলেন। বিষয়টি নওগাঁ পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান সাগর নিশ্চিত করেছেন। এই এনজিও’র কারণে সে আত্মহত্যা করেছে বলে অনেকে মনে করছেন।
সাবিনা ইয়াসমিন জেলার মান্দা উপজেলার কসব ইউনিয়নের চকবালু (আমিনগঞ্জ) এলাকার মৃত সৈয়দ পিয়াদার মেয়ে। সে উপজেলার জোতবাজার নুরুল্যাবাদ এলাকার হেলালের স্ত্রী। রাত নয়টার দিকে নিহতের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন তার দুলাভাই হোসেন আলী।
জানা যায়, সুরমা মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ নামের এই সংস্থা বেশ কিছু দিন আগে শত শত মানুষের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়। ফলে তাদের সকল শাখার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম বিপদে পড়ে যায় ওই এনজিওর কর্মকর্তা কর্মচারীরা। কারন এনজিও মালিকদের চাপে পড়ে তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করতে বাধ্য হয়।
সাবিনা পরিচিতজনদের কাছ থেকে টাকা আমানত হিসেবে এনে সমিতিতে জমা দিয়েছিলেন। হঠাৎ সমিতি উধাও হয়ে যাওয়ায় সে পড়ে যায় বিপদে। আমানতকারীদের চাপ সহ্য করতে না পেরে সে আত্মহত্যা করতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। তবে তার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায়নি।
বাড়িওয়ালা লিয়াকত আলী বলেন, সাবিনা গত বছরের পহেলা মার্চ মাসে তার বাসায় ভাড়া উঠেন। তার স্বামী দেশের বাহিরে থাকেন। অফিস সংলগ্ন বাড়ি হওয়ায় দুইতালার একটি ফ্লাটে ভাড়া নিয়ে একা থাকতেন সাবিনা।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (৮ মার্চ) জেলার মান্দায় আমানতের টাকা ফেরত নেওয়ার চাপে সিরাজুল ইসলাম বকুল (৪৫) নামে এক এনজিও কর্মকর্তা গ্যাসবড়ি (ইঁদুর মারার বিষের ট্যাবলেট) আত্মহত্যা করেন বলে জানা যায়। সন্ধ্যার পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তিনি সুরমা মাল্টিপারপাসে পলাশবাড়ি শাখায় ব্যবস্থাপক পদে কর্মরত ছিলেন। কশব গ্রামের ইয়াদ আলী সরদারের ছেলে ছিলেন।
গত দুই সপ্তাহ আগে এই শাখা কার্যালয় তালাবদ্ধ করে আমানতকারীদের জমা করা অন্তত ৬ কোটি টাকা নিয়ে রাতারাতি উধাও হন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আমানতকারীদের চাপের মুখে শুক্রবার বিকেলে টাকা ফেরত দেওয়ার দিন ধার্য ছিল। এ অবস্থায় শুক্রবার দুপুরের দিকে গ্যাসবড়ি (ইঁদুর মারার বিষের ট্যাবলেট) খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন সিরাজুল ইসলাম। পরে তাকে উদ্ধার করে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হলে সন্ধ্যার পর তিনি মারা যান।
এতে দিশোহারা হয়ে পড়েন ৮৮ থেকে ৯০ জন আমানতকারী। সংস্থায় জমা করা অন্তত ৬ কোটি টাকা ফেরত পাওয়া নিয়েও শঙ্কায় তারা। এই টাকা শুধু মাত্র একটি শাখার। এর আরও কয়েকটি শাখা অফিস ছিল। বর্তমানে সবগুলোই বন্ধ রয়েছে।
নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আব্দুল গফুর বলেন, নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। যেহেতু দরজা জানালা লাগানো ছিল, তাই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে সে আত্মহত্যা করতে পারে। তারপরও ময়নাতদন্তের পর সঠিক কারণ জানা যাবে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//২২ মার্চ ২০২৪//