নিজস্ব প্রতিবেদক : মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান মোস্তাকিম জনি। বাবা মোঃ লোকমান হোসেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। যা আয় করেন তা দিয়েই অতি কষ্টে চলে ৫ সদস্যের সংসার। ৫ সদস্যের ওই সংসারে মা গৃহিণী, তিন ছেলেই করছেন লেখাপড়া। বাবার একার পক্ষে সংসার চালানো কষ্টকর। তা অনেকটা বাধ্য হয়েই অনলাইনে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করেছেন মোস্তাকিম জনি।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, জনি ঘরে বসেই এখন আয় করছেন বৈদেশিক মুদ্রা। বড় ভাইয়ের পাশাপাশি ছোট ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ চালানো এবং সংসারের হাল ধরেছেন অল্প বয়সেই।
মোস্তাকিম জনির বাড়ি নাটোরে গুরুদাসপুর উপেজালার সীমান্ত নাছিয়ার কান্দি গ্রামে। তাঁর বাবা মোঃ লোকমান হোসেন এলাকায় কোকারিজের ব্যবসা করলেও বয়সের ভারে এখন পারছেন না ওই ব্যাবসা করতে। মা রুবিনা বেগম একজন গৃহিণী। তিন ভাইয়ের মধ্যে মোস্তাকিম জনি মেজো। বড় ভাই শরিফুল ইসলাম ঢাকা কলেজ থেকে গণিতে মাস্টার্স করে এখন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকতা করছেন। পাশাপাশি বিসিএস পরিক্ষার চেষ্টা করছেন। ছোট ভাই মনিরুল ইসলাম উচ্চ মাধ্যমিক প্রথমবর্ষের ছাত্র।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মোস্তাকিম জনি ২০১৪ সালে একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে মাইক্রোসফট অফিস অ্যাপ্লিকেশনের ক্লাস নিতেন। এখানে কাজ করে যা পেতেন, তা দিয়ে নিজের খরচ চলত। তাঁর বাবা কোকারিজ এর ব্যবসা করলেও বড় ভাই শরিফুল ইসলাম চাকরি পাওয়ার পরে সেটা ছেড়ে দেন। মোস্তাকিম জনি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে কাজ করার পাশাপাশি গ্রাফিক্স ডিজাইন ভিডিও এডিটিং, ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টের কাজ শিখেছিলেন। তার বাবা ব্যবসা ছেড়ে দেয়ার পর তিনি অনলাইনে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং
ডিজিটাল এয়ার নামের একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন।
ডিজিটাল এয়ার নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন , ভিডিও এডিটিং ও ডিজিটাল মার্কেটিংসহ বিভিন্ন কাজে সেবা দিয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল এয়ার। তরুণ এই উদ্যোক্তা মোস্তাকিম জনি স্বপ্ন দেখেন তার এই প্রতিষ্ঠানকে একটি ইনস্টিউট হিসেবে গড়ে তোলার, যেখানে তরুণরা প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে পারবে। পড়াশোনার পাশাপাশি তরুণরা যেন আয় করতে পারে ডিজিটাল প্লাটর্ফম থেকে এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
তরুণ উদ্যোক্তা মোস্তাকিম জনি বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে আইটি সেক্টর অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। দিনদিন প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসা খাত বাড়ছে, মানুষ প্রযুক্তির দিকেই বেশি ঝুঁকছে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে মানুষ তার ব্যবসা এগিয়ে নিতে পারে। তাই প্রযুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম দেশের শিল্প বাণিজ্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে প্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই।
অনেক তরুণ চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভোগে, সরকার প্রযুক্তিখাত বেশ উন্নতি করেছে, এখন যে কেউ চাইলে নিজের ক্যারিয়ার প্রযুক্তিতে গড়তে পারে। হতাশায় না থেকে প্রযুক্তি নির্ভয় হয়ে ক্যারিয়ার গড়ার অনেক বড় সম্ভবনা আছে আর তরুণদের এটি কাজে লাগানো উচিত বলে মনে করেন ডিজিটাল এয়ার নামে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও তরুণ উদ্যোক্তা মোস্তাকিম জনি।
মোস্তাকিম জনি ইতিমধ্যে প্রায় ত্রিশটি দেশের ক্লায়েন্ট এর সাথে কাজ করছেন। এসব কাজের বিনিময়ে ঘরে বসেই উপার্জন করছেন বৈদেশিক মুদ্রা। এসব কাজ করে মোস্তাকিম জনি মাসে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ ইউএস ডলার আয় করছেন। তার অধীনে স্থানীয় অনেকজন বেকার যুবক ফ্রিলান্সিংয়ে কাজ করছেন । তাঁরাও এখন স্বাবলম্বী।
মোস্তাকিম জনি নানুপুর ওবাইদিয়া মাদ্রাসায় উচ্চমাধ্যমিক পাস করে তিনি চট্টগ্রামের দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে ভর্তি হন। নানুপুর ওবাইদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আবু জাফর বলেন, ছোটবেলা থেকেই মোস্তাকিমের কম্পিউটারে কাজ করার প্রতি বেশ মনোযোগ ছিল। তাঁর স্বপ্ন ছিল আইটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার। সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে পড়াশোনার পাশাপাশি ঘরে বসেই অনলাইনে কাজ করছেন তিনি এখন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার ও উদ্যোক্তা ।
মোস্তাকিম জনি আরও বলেন, তিনি ইউটিউবে ভিডিও দেখে দেখে ও চট্টগ্রামের কিছু বড় ভাইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে এসব কাজ শিখেছেন। তিনি আরও বলেন, যাঁরা সঠিক প্রশিক্ষণের অভাবে এসব কাজ শুরু করতে পারছেন না, তাঁরা ইউটিউব ও গুগলের সাহায্য নিয়ে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারেন। তবে অবশ্যই তাঁকে অধ্যবসায়ী ও পরিশ্রমী হতে হবে।

Discussion about this post