মোঃ রাসেল বরগুনাঃ অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন ৫৫ বছর বয়সী চায়না (হিজরা)। সেখানেও ছিল নানা বিড়ম্বনা। তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) মানুষ হওয়ায় কেউ বাসা ভাড়া দিতে চাইত না। দিলেও সময়-অসময়ে সমাজের (!) চাপে বের করে দেওয়া হতো তাকে। মানুষ হিসেবে কোনো মর্যাদা ছিল না। রাস্তাঘাটে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের পাশাপাশি নানা কটুবাক্য ছুড়ে দিত লোকজন। মানুষের কাছে চেয়ে-চিন্তে খাওয়া সমাজের অবহেলিত এক জনগোষ্ঠীর মানুষের এভাবেই দিন কেটেছে। সম্প্রতি তৃতীয় লিঙ্গের এসব মানুষের মর্যাদা ফিরেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানে আশ্রয়ও মিলেছে। সরকারের তরফে নেওয়া পুনর্বাসনের নানা পদক্ষেপে এখন বদলে গেছে তাদের জীবনযাত্রা।
বাহা মনির মতো২২ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এখন বরিশাল বিভাগের বরগুনার সদর উপজেলার খেজুরতলা গ্রামের স্থায়ী বাসীন্দা।’মুজিববর্ষে দেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’- শেখ হাসিনার এমন অঙ্গীকার বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য ২ ইউনিটের সেমি পাকা ঘর ও ২ শতাংশ খাস জমির দলিল দেয়া হবে তাদের। তিনজন গুরু মায়ের (হিজড়াদের নেতা) অধীনে থাকা মোট ২২ জন হিজড়ার নামে বরাদ্দকৃত ঘর বানিয়ে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।বরগুনা জেলায় মোট ৭৯ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রয়েছে। এই ২২ জন বাদে ঘর না পাওয়া ৫৯ হিজড়ার জন্যও পর্যায়ক্রমে ঘর তৈরির উদ্যোগ চলছে।
এই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ ঘর পাবার আনন্দে আত্নহারা হয়ে গেছেন। এখন তাদের একটাই দাবী তাদের যাতে একটা কর্মসংস্থান করে দেয়া হয় যাতে তাদের অন্যের কাছে হাত পেতে কিছু না নিতে হয়।
বরিশাল বিভাগে এই প্রথম কোনে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে গৃহ দেয়া হচ্ছে।এই গৃহ দেয়ার মধ্য থেকে সমাজের মধ্য থেকে বৈষম্য চল যাবে এমনটা মনে করছে সমাজ বিশ্লেষকরা।
তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য চায়না বলেন, আমার ১০ বছর বয়সে আমাকে ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় আমার সংগ্রামের জীবনে, এখনে সেখানে থাকতে হতো কেউ ঠাই দিতো না। কেউ ঘর ভাড়া দিতে চাইতো না,যারাও বা দিতো অনে্যর চাপে পরে বাসা থেকে নেমে যেতে বলতো। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের একখান পাকা ঘর দিয়েছেন। আমাকে মাথা গোজার ঠাই দিয়েছেন, দুই শতাংশ জমির দলিল দিয়েছেন। এখন আর আমাকে কেউ গৃহহীন বলতে পারবে না আমি অনেক খুশি।
তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য মৌসুমী বলেন, আমি এই ঘর পেয়ে অত্যন্ত খুশি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের পরিচয় দিয়েছেন আগে আমাদের কোনো পরিচয় ছিলো না, এখন আমাদের ডিজিটাল আইডি কার্ড দিয়েছেন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর একটি দাবী যে সে যাতে আমাদের একটা কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি করে দেয়।
লাকুরতলা নিবাসী তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য মৌসুমী বলেন, আমরা এতটাই খুশি যেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।আমরা একসময় সমাজ থেকে বিতারিত ছিলাম তবে এখন আর বিতারিত নই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের যে সন্মান দিয়েছেন তাতে আমার আত্যন্ত আনন্দিত।
বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, আমার এই পর্যায়ে তৃতীয় লিঙ্গের ২২ সদস্যকে ঘর দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে তাদের যে সদস্যরা ঘর পায়নি তাদেরকে ঘর দেয়া হবে। আমাদের আরো কিছু নতুন ঘর তোলা হচ্ছে সেই ঘর গুলো তোলা হয়ে গেলে বরগুনায় হবে দেশে সবচেয়ে বৃহত্তম আশ্রয়ন প্রকল্প।
প্রসঙ্গত, ২৬ এপ্রিল ঈদ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ- ২ প্রকল্পের আওতায় বরগুনায় দুই শতক জমিসহ সেমিপাকা ঘর পেয়েছেন ৪১১ ভূমি ও গৃহহীন পরিবার। মঙ্গল বার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভিক্ষুক, স্বামী পরিত্যক্তা, শারীরিকভাবে অক্ষম, তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিকে ৫০টি ঘর হস্তান্তর করে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। দুই কক্ষের প্রতিটি ঘরে রয়েছে একটি টয়লেট, একটি রান্নাঘর,বারান্দা । ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলো প্রধানমন্ত্রী।
দৈনিক দেশতথ্য//এল//

Discussion about this post