মোঃ খায়রুল ইসলাম, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা: টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার নজুনবাগ এলাকায় ফসলি জমি ও ঘনবসতি এলকায় গড়ে উঠেছে অবৈধ কয়লার কারখানা।
কারখানায় সংরক্ষিত বনেরকাঠ পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে কয়লা। কারখানার ধোঁয়ায় ক্ষতি হচ্ছে ফসলের। কাঠের যোগান দিতে উজাড় হচ্ছে বন, ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য।
উপজেলার দিগড় ইউনিয়নের নজুনবাগ এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে কয়লার কারখানাটি। সরেজমিনে দেখা যায়, কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করার জন্য মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বড় বড় আকারের ছয়টি চুলা। ঘনবসিত পূর্ণ এলাকা ও ফসলি জমির পাশে নির্মাণ করা হয়েছে কারখানাটি। কারখানার মালিক স্থানীয় বাসিন্দা লিটন মিয়া। এসব চুলায় প্রতিদিন শত শত মণ কাঠ পুড়িয়ে তৈরি করা হয় কয়লা। সংরক্ষিত বন থেকে সংগ্রহ করা কাঠই হচ্ছে কারখানাটির কাঁচামাল। এক শ্রেনির অসাধু কাঠ ব্যবসায়ীরা বনের কাঠ কেটে এসব কারখানায় সরবরাহ করে। কয়লা তৈরির সময় কারখানার চুল্লির ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন থাকে পুরো এলাকা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ধোঁয়ার কারণে কারখানার আশপাশের জমির ধান ও অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়া বৃদ্ধ, শিশুসহ অনেকেই শ্বাসকষ্ট ও নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ধরনের কারখানা বন্ধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আবেদন জানান তাঁরা।
কারখানায় কাজ করা দুই শ্রমিক জানান, স্থানীয় ইটভাটার পাশাপাশি কারখানাটিতে কাজ করেন তাঁরা। কারখানাটির কয়লা, হোটেল, জুয়েলারি দোকান ও কামার শিল্পসহ নানা কাজে ব্যবহার করা হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিদিন শত শত মণ বনের কাঠ পোড়ানো হয় এই কারখানায়। ধোঁয়া ও ছাই উড়ে ফসলের ওপর পড়ায় এর ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। নানা রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
দিগড় ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন ফনি জানান, বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে কারখানার মালিক লিটন মিয়া বলেন, ‘অনেক লোকই অবৈধভাবে ব্যবসা করছেন, তাঁদের তো কিছু হয় না। আমরা করলেই দোষ।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইফুর রহমান খান বলেন, কাঠ পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়ায় অতিমাত্রায় কার্বন নির্গত হয়। এতে পরিবেশ দূষিত হয়। এ ছাড়া মানুষ অ্যাজমা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করা সম্পূর্ণ অবৈধ। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//