Print Date & Time : 15 May 2025 Thursday 9:14 pm

ঘাটাইলে খেজুরের রস ও গুড় তৈরিতে ব্যস্ত গাছিরা

মোঃ খায়রুল ইসলাম, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতাঃ শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে, খেজুরের গুড়ের চাহিদা। চারপাশে ধুম পড়েছে পিঠা উৎসবের। এতে টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে খেজুর রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় শীত মৌসুমে গ্রামাঞ্চলে ঘরে ঘরে খেজুর রস ও গুড় দিয়ে তৈরি পিঠার উৎসব হয়ে থাকে। হরেক রকম বাহারি পিঠাপুলি ও পায়েসে ছড়াচ্ছে খেজুর গুড়ের সুগন্ধি। খেজুর গুড় ছাড়া যেন পিঠা উৎসব রয়ে যায় অপূর্ণ। তাই শীতের সময় গাছিরা খেজুরের রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
গাছিরা জানায়, প্রতিদিন বিকেলে খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিষ্কার করে ছোট-বড় মাটির হাড়ি বেঁধে রাখা হয়। পরদিন ভোরে এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে থাকেন। পরে টিনের একটি পাত্রে ২-৩ ঘন্টা জ্বাল করে পাটালি ও মুঠো গুড় তৈরি করা হয়।

জানা গেছে, উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চল গুলোতে বেশ খেজুর গাছ রয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ রস থেকে গুড় তৈরিতে তেমন পারদর্শী না হলেও এসব এলাকায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলা থেকে আসা গাছিরা মৌসুমের শুরুতেই মালিকদের কাছ থেকে খেজুর গাছ চুক্তিতে নিয়েছেন। শীত মৌসুমে এসব খেজুর গাছ থেকে রস আহরণ ও গুড় তৈরি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পাহাড়ি এলাকা সাগরদীঘি অঞ্চলে রাজশাহীর বাঘা উপজেলা থেকে আসা খেজুর রস সংগ্রহকারী মো. আলমগীর হোসেন জানায়, একেক বছর দেশের ভিন্ন ভিন্ন জেলায় গিয়ে রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি করছেন তারা। এবার সাগরদীঘি ও লক্ষ্মীন্দর এলাকায় বিভিন্ন গ্রামে খেজুর গাছ লিজ নিয়েছেন তারা।

তারা বলেন, শীতের মৌসুমে ৪ মাস এসব খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় উৎপাদন করবেন। দীর্ঘ দিন ধরে এভাবেই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের মাধ্যমে চুলার আঁচে পাটালি ও মুঠো গুড় তৈরি করে থাকেন।

তারা আরও বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর চিনির বাজার চওড়া হওয়ায় গুড়ের বাজারেও কিছুটা চাপ পড়েছে। তাই এইবার কিছুটা বেশী লাভের আশা করছেন তারা।

লক্ষ্মীন্দরের বেইলা এলাকার আমজাদ আলী বলেন, শীতকাল মানেই মা, দাদী কিংবা নানীর হাতে তৈরি পিঠা খাওয়ার ধুম। তাই খাঁটি রসের গুড়ের তৈরী পিঠার স্বাদই আলাদা।

গুড় বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম জানায়, শীত মৌসুমের শুরুতেই খেজুর রস থেকে তৈরি গুড় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে। বাজারে খেজুর গুড়ের চাহিদা বেশি।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান বলেন, খেজুর গাছ পরিবেশ বান্ধব একটি বৃক্ষ। এই গাছ দুর্যোগ প্রতিরোধে ভুমিকা রাখে। বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে। শীতকালে বাংলাদেশের সর্বত্রই খেজুর রস, খেজুর গুড় বাঙালি সংস্কৃতিতে রসঘন আমেজ লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশের মাটি ও কোমল প্রকৃতি হওয়ায় খেজুর গাছ বেড়ে ওঠার জন্য বেশ উপযোগী। রাস্তা, বাঁধ, পুকুর পাড় এমনকি খেতের আইল এবং আবাদি জমিতে এ বৃক্ষ বেশ ভালো জন্মে।

দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//