Print Date & Time : 14 May 2025 Wednesday 10:31 pm

ঘাটাইলে স্বাস্থ্যসেবার নামে অর্থ লুটের অভিযোগ

মোঃ খায়রুল ইসলাম, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতাঃ ঘাটাইল মধুপুর ও কালিহাতি উপজেলার স্বাস্থ্যখাত উন্নয়নে ২০১৭ সালে গৃহিত পাইলট প্রকল্পের নাম স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি (এসএসকে)। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ঘাটাইলে নিয়মনীতির কোনো বালাই নেই। প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই শুরু হয় প্রকল্পের কার্যক্রম। ফলে হাজারও কার্ডধারি এসএসকের কার্যক্রম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না।
এছাড়াও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে জাল জালিয়াতি আর বিল ভাউচারে গোজামিল দিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে লুটপাটের এসব চিত্র।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে ২০২০-২০২১ অর্থবছর পর্যন্ত এ প্রকল্পে সরকারের স্বাস্থ্য ইউনিট থেকে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ ছিল দুই কোটি ২৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা। প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল-উপজেলার প্রায় পাঁচ লাখ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ২৭ হাজার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এজন্য দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করা পরিবার চিহ্নিত করে নিবন্ধনের মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্যকার্ড প্রদান করা। কার্ডপ্রাপ্তরা চিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হবেন এবং ৫০টি রোগের যাবতীয় ব্যয় (রোগ নির্ণয়, ওষুধ, পথ্য চিকিৎসা) বিনামূল্য পাবেন। পাশাপাশি সুবিধা প্যাকেজের মাধ্যমে একটি পরিবার বছরে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত সেবা গ্রহণের সুবিধাপ্রাপ্ত হওয়ার কথা।
অথচ এ সুবিধা সম্পর্কে উপকারভোগীরা কিছুই জানেই না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসএসকে প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত সেবা পেয়েছে মাত্র দেড় থেকে দুই হাজার রোগী। শুরুতেই প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ছিলেন সেবার পরিবর্তে অর্থ ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত। ফলে ভেস্তে যায় প্রকল্পের লক্ষ্য।

গেল বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর সরজমিনে হাসপাতালে এসএসকের কার্ডধারীদের চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা মানিকপুর গ্রামের লাবনী বলেন, ২০১৭ সালে কার্ড নেওয়ার পর আজকে প্রথম এসেছি। এখন পর্যন্ত এসএসকে থেকে কোনো ওষুধ পাইনি।
একই কথা বললেন মমরেজ গলগন্ডা থেকে আসা লিপি বেগম ও দক্ষিণপাড়া গ্রামের সাহিদা নামে দুই কার্ডধারী।

নাগবাড়ি উত্তরপাড়া গ্রামের মনি বলেন, একবার চিকিৎসার জন্য রেফার্ড হয়ে টাঙ্গাইল যেতে হয়েছিল। কিন্তু এসএসকে থেকে কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি। এদিকে এসএসকের নামধারী যাদের রেফার্ড করা হয়েছে; এ রকম পাঁচজন রোগীর নাম ঠিকানা চাওয়া হয়েছিল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিববার পরিকল্পনা কর্মকর্তার (টিএইচএ) কাছে। কিন্তু তিনি ৩ মাসেও এ রকম কোনো রোগীর নামের তালিকা দিতে পারেননি। অথচ টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে এসএসকে রোগীর রেফার্ডের নামেই বিল করা হয়েছে ১৪ লাখ ৩৮ হাজার ২৫৪ টাকা। একই সঙ্গে স্থানীয় প্রাইম হাসপাতালের নামে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া বাবদ বিল পরিশোধ দেখানো হয়েছে ১৭ লাখ ৫১ হাজার ১১৮ টাকা। শুধু তাই নয়, এসএসকে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সরকারির অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া চালানের মাধ্যমে জমা দেখানো হয়েছে ৮ লাখ ৩৭ হাজার ৬৪০ টাকা। অর্থাৎ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অ্যাম্বুলেন্সের জন্য সর্বমোট বিল পরিশোধ দেখানো হয়েছে ৩৬ লাখ ২৭ হাজার ১২ টাকা।

অথচ অনুসন্ধানে এসএসকের মাধ্যমে কোনো রোগীকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে; এমন কোনো তথ্য মেলেনি। এছাড়া মেডিসিন ঠিকাদারের ওষুধ ব্যয় পরিশোধ করা হয়েছে এক কোটি ১৯ লাখ ৬৮ হাজার ৬৬০ টাকা। একই সঙ্গে এসএসকে আউট সোর্সিং কর্মচারীদের বেতন-বোনাসসহ ঠিকাদারের কমিশন ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ৪ লাখ ৭২ হাজার ১৯৭ টাকা। প্রকল্পের বিধি ১০.২ ধারা মোতাবেক এসএসকের সেবা উন্নয়নের লক্ষ্যে রি-এজেন্ট ও এক্সরে ফ্লিম ক্রয়সহ অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৩৯৪ টাকা। এভাবে অপ্রাসঙ্গিক বিল পরিশোধ দেখিয়ে বেশিরভাগ অর্থ লুটপাট করলেও অডিটে কোন আপত্তি নেই।
এ বিষয়ে টিএইচএ ডা. সাইফুর রহমান খান বলেন, প্রচারণার বিষয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের অনেকবার প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত নিয়েও কাজ হয়নি। আবারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া ২৭ হাজার কার্ডধারীর মধ্যে মাত্র দুই হাজার কার্ডের সুবিধা সম্পর্কে জানেন। নিজের একার স্বাক্ষরে বিলের কাগজপত্র পাঠান হয় এবং একক স্বাক্ষরে টাকা উত্তোলন হয়ে থাকে বলে তিনি জানিয়েছেন।

রোগি রেফার্ডের নামে অর্থ ছাড় করানোর বিষয়ে এসএসকের সমন্বয়কারী সাইদ বলেন, তিনি নতুর এসেছেন।

প্রকল্পের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম লেবু বলেন, এসএসকের লোকজন যথাযথভাবে বিল করে থাকে। আমি স্বাক্ষর দেই। এক্ষেত্রে যাচাই করার দরকার হয় না।

দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//