সিলেট প্রতিনিধি : শেখ হাসিনা সরকারের পতন আন্দোলন রুখতে গিয়ে রোষানলে পড়া সারাদেশের মতো সিলেটের পুলিশও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। এবার সেই ক্ষতি কাটিয়ে জনগনের আস্থা অর্জনে কাজ শুরুর করেছে সিলেট মেট্রাপিলিটন পুলিশ (এসএমপি)
এসএমপি সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ ও ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। বিশেষ করে থানা ও ফাঁড়ি গুলোতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের পর পুলিশ সদস্যদের ‘স্টেশন আউট’ হওয়ার ঘটনায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুলিশে।
ভেঙ্গে পড়ে পুলিশের পুরো সিস্টেম। গত দু মােিসর প্রচেষ্টায় অনেকটাই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে পুলিশ। ব্যবস্থাপনা ছাড়াও অপরাধ বিভাগ ট্রাফিক বিভাগ তাদের কার্যক্রম পুরো দমে চালু করেছে। অনেকটা গুছিয়ে নেয়া হয়েছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ‘সিস্টেম’। পুলিশের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকায় আন্দোলন ও বিক্ষোভকালে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় কোতোয়ালী থানা এলাকা। কোতোয়ালী থানা এবং এর তিনটি ফাঁড়ি পুরো ধ্বংস হয়ে যায় ৫ আগস্ট। থানা ছাড়াও বন্দরবাজার, লামাবাজার, ও সোবহানিঘাট ফাঁড়ি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরেজমিনে বন্দরবাজার ফাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সেদিনের অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুরো টিনশেড ঘরটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গুলি, অস্ত্র এবং মালামাল লুট হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর সিলেট নগরের বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছিল ১০১টি। সঙ্গে গোলাবারুদও লুট হয়েছিল।
এ পর্যন্ত জমা ও উদ্ধার হয়েছে ৮০টি। তবে গোলাবারুদের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে এখনো ২১টি অস্ত্রের হদিস পায়নি পুলিশ। এ ছাড়া গত ১৫ বছরে মহানগর এলাকায় অস্ত্রের লাইসেন্স করা হয়েছে ২৪৬টি।
এর মধ্যে লাইসেন্স নিয়েও অস্ত্র কেনেননি ১০ জন। এর বাইরে ৪৩টি অস্ত্র বিভিন্ন ব্যাংকের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত হয়। মহানগর এলাকায় জমাযোগ্য অস্ত্রের সংখ্যা ১৯৩। এর মধ্যে জমা হয়েছে ১৫৭টি। জমা হয়নি ৩৬টি আগ্নেয়াস্ত্র।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( চলতি দায়িত্বে) আকবর হোসেন এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, তাঁর থানা থেকে যেসব অস্ত্র লুট হয়েছিলো বা খোয়া গিযেছিলো সবগুলোই ফিরে পেয়েছেন। বেশীর ভাগ অস্ত্র র্যাব উদ্ধার করে দিয়েছে। কিছু গুলি পাচ্ছেনা। সেগুলো না পাওয়ার নানা কারণ থাকতে পারে। তবু তারা আশাবাদী পাবেন। বন্দর বাজার ফাঁড়ি প্রসঙ্গে তিনি বলেন,সেখানে অফিস করার মতো কোনো পরিবেশ নেই।
নতুন করে সংস্কার করে অফিসের পরিবেশ তৈরী করতে হবে। আপাতত সংশ্লিষ্টরা বাসা থেকেই দায়িত্ব পালন করছেন। লামাবাজার ফাঁড়ির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেখানে পিছনের দিকে দুটি রুম মোটামুটি কিছু ভালো আছে। সেখানে বসেই আপাততঃ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সোবহানীঘাট ফাঁড়ির নিচতলা দুতলা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আপাতত তিনতলা থেকে অফিসের কার্যক্রম চলছে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর এসএমপিতে নতুন কমিশনার হিসেবে মো. রেজাউল করিম পিপিএম দায়িত্ব নেয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাগুলো দ্রুত সংস্কার এবং পুরোদমে কার্যক্রম চালুর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
এ লক্ষে তিনি সবগুলো ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনার প্রয়োজনীয় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং দ্রুুত মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য পুলিশ হেড কোয়ার্টারে যোগাযোগ করেছেন।
ট্রাফিক বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ৪ ও ৫ আগস্টের পর ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রমে ভাটা পড়েছিলো। শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব পালন শুরু করে।
১২ আগস্ট থেকে সিলেট নগরে ট্রাফিক পুলিশ কাজ শুরু করে। এর পর থেকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসে পুলিশের কার্যক্রম। এখন নিয়মিত চেকপোস্টের পাশাপাশি প্রসিকিউশনসহ সড়ক আইনের যথাযথ প্রয়োগ শুরু হয়েছে।
এসএমপির উপ কমিশনার (ট্রাফিক) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের দৈনিক জৈন্তাবার্তা’কে বলেছেন ছাত্র জনতার আন্দোলনের পর কিছুটা তাদের কার্যক্রমে ভাটা পড়েছিলো। যারা কাজ থেকে সরে গিয়েছিলেন তারা কাজে যোগ দিয়েছেন দ্রুতই। ফলে ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম চালাতে তাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছেনা। প্রতিদিন ২৪টি পয়েন্টেই তাদের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার(মিডিয়া) মো. সাইফুল ইসলাম বলেছেন, নতুন কমিশনার হিসেবে মো. রেজাউল করিমের আগমনের পর এসএমপির সকল বিভাগকে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মেট্রো এলাকায় আইনশৃংখলা রক্ষায় ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অস্ত্র ও চোরাচালান রোধে ব্যাপক তৎপরতা চলছে। প্রায় অর্ধ কোটি টাকার চিনি উদ্ধ:ার করা হয়েছে গত এক মাসে।
এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যেসব কারণে পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিলো সেসব কারণ চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ফলে সামগ্রিক দিক থেকে এসএমপি এখন বেশ ভালো অবস্থানে আছে। জনগণের সঙ্গে আরো নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের জন্য কাজ করছি আমরা।

Discussion about this post