Print Date & Time : 20 April 2025 Sunday 12:24 pm

চট্টগ্রামে পাহাড় অঞ্চলে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা উচ্ছেদ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: উচ্ছেদ অভিযানের পর আবারও কেউ যদি পাহাড়ের পাদদেশে ঘর-বাড়ি তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে মামলাসহ কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নগরের কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ওমর ফারুক। রোববার (১৯ জুন) পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী দুপুর ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানার এক নম্বর ঝিলের বরিশাল ঘোনা এলাকায় অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা উচ্ছেদ করার সময় তিনি এ কথা বলেন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ওমর ফারুক বলেন, এ জায়গাটা রেলওয়ের জায়গা। পাহাড়গুলো রেলওয়ের পাহাড়। এখানে থাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করে আমরা রেলওয়েকে বুঝিয়ে দিই। এরপরও দেখা যায়, কিছু লোক আবারও অবস্থান করতে চলে আসে। আমরা এখন কঠোর অবস্থানে রয়েছি। এর পরবর্তীতে যদি দেখা যায় যে, কেউ এখানে অবস্থান করার জন্য বা পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ঘর-বাড়ি তৈরি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলাসহ কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা উচ্ছেদে নিয়মিত কাজ করা হচ্ছে। তাদেরকে সরে যাওয়ার জন্য আগে থেকেই বলা হয়েছে। এরপরও তারা এখান থেকে তাদের মালামাল সরিয়ে নেয়নি। তারা তাদের নিজেদের অবস্থান দৃঢ় রাখতেই সরে যেতে চায় না।

তিনি আরও বলেন, এখানে যতগুলো অবৈধ স্থাপনা রয়েছে সবগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। তারা নিজ দায়িত্বে সরে না যাওয়াতেই আমাদের বাধ্য হয়েই তাদের স্থাপনাগুলো ভাঙতে হচ্ছে।

ওমর ফারুক বলেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান স্যারের নির্দেশনায় আমরা আজকে এখানে র‌্যাব, পুলিশ, আনসার, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ে ৪ টিমে বিভক্ত হয়ে চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এখানে যতগুলো ঘর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে সেগুলো উচ্ছেদ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন, অনেকগুলো ঘর আমরা উচ্ছদ করেছি। পাশাপাশি আজ সারাদিন এ কাজ চলবে।

এখানে যতগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ঘর থাকবে সবগুলো উচ্ছেদ করা হবে। একইসঙ্গে যারা এখান থেকে বিচ্যুত হবে তাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা আছে। সেখানে সবার জন্য খাবার ও অবস্থানের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
ইউটিলিটি সার্ভিসগুলো জন্য বিভিন্ন লাইন বা মিটারের লাইন রয়েছে এবং ওই সেবা সংস্থাগুলোর মানুষরাও এখানে আছেন; এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিবেন কিনা— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইউটিলিটির যে ব্যবহারটা এখানে হচ্ছে, সেটার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, সে অনুযায়ী এটারও একটা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এখানে স্থাপনা উচ্ছেদের সময় যতগুলো বৈদ্যুতিক লাইনের মিটার পেয়েছি তা আমরা জব্দ করেছি। সেগুলো আমরা নিয়ে যাব। এছাড়া বৈদ্যুতিক লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রাম নদী-খাল রক্ষা আন্দোলন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আলীউর রহমান, ২০০৭ সালে চিহ্নিত চট্টগ্রাম মহানগরীর আটাশটি পাহাড় থেকে তিন হাজারের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীকে বিগত ১৫ বছরে উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে প্রতি বছর বর্ষা আসলে হচ্ছে পাহাড় ধস ঘটছে প্রাণহানি। পাহাড়ের পাদদেশে কবর রচিত হলে উচ্ছেদ অভিযান চলে। এর চেয়ে বড় প্রশাসনিক দৈন্যতা আর কি হতে পারে।

এর আগে,শনিবার (১৮ জুন) চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান ঝিলের বরিশাল ঘোনা এলাকায় অতি ঝুঁকিপূর্ণ ১২০টি স্থাপনা উচ্ছেদের ঘোষণা দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযানে পর্যায়ক্রমে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। উল্লেখ, শুক্রবার (১৭ জুন) দিবাগত রাতে চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানা এলাকায় পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় ৪ নিহত ও ৬ জন আহত হয়েছেন।