Print Date & Time : 15 July 2025 Tuesday 4:44 am

চট্টগ্রামে রোগীর রক্ত নিয়ে চলছে বাণিজ্য

জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রামে রোগীর রক্ত নিয়ে চলছে ভয়ঙ্কর বাণিজ্য। গড়ে ওঠেছে নানা সিন্ডিকেট। ব্লাড ব্যাংক নামে খোলা হয়েছে ডজন ডজন প্রতিষ্ঠান। যারা কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছেন না। তথ্য মিলে, নগরীর ওআর নিজাম রোডে সিটি মেট্রোপলিটন ব্লাড ব্যাংক, পাঁচলাইশের ফজলুল কাদের রোডে বসুন্ধরা ব্লাড ব্যাংক, জিইসি মোড়ে রাইজিং ব্লাড অ্যান্ড ট্রান্সফিউশন সেন্টার, মুরাদপুরে পিপলস ব্লাড ব্যাংক, চান্দগাঁওয়ে মোহরা সিদ্দিক ব্লাড ব্যাংক, চকবাজারে চাঁদনী ব্লাড ব্যাংক এবং আন্দরকিল্লায় অবৈধভাবে রক্ত ব্যবসা করতে দেখা গেছে ফাতেমা বেগম রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংক কে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ভেজাল রক্ত নিয়ে মৃত্যুর পথে পা বাড়ায় হাসপাতালের অনেক মুমূর্ষু রোগী।

চট্টগ্রামে বছরে প্রায় এক কোটি হাজার ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। চমেকসহ পাঁচটি ব্লাড ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বছরে সংগৃহীত রক্তের মধ্যে প্রায় ৯ শতাংশই দূষিত। নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা করেই রোগীর শরীরে রক্ত দিতে হয়। কিন্তু সে নিয়মও অনেক প্রতিষ্ঠান মানছে না।

রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ রক্ত পরীক্ষা করে কখনো হেপাটাইটিস-বি, কখনো এইচআইভি, কখনো হেপাটাইটিস-সি, কখনো ম্যালেরিয়া, কখনো সিফিলিসের জীবাণু পাচ্ছেন। পেশাদার রক্তদাতা থেকে রক্ত সংগ্রহ করে তা অনুমোদনহীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাজারে বিক্রি করায় বাড়ছে সংক্রামক রোগের ঝুঁকিও। যদিও চট্টগ্রামে রক্ত নিয়ে অবৈধ বাণিজ্য ক্রমশ বাড়লেও আশ্চর্যজনকভাবে নীরব দায়িত্বশীল সব কর্তৃপক্ষই।

মহানগরের বাইরে ব্লাড ব্যাংকের কার্যক্রম মনিটর করার কথা সিভিল সার্জন অফিসের। মহানগরের ভেতরে এ কার্যক্রম তদারকি করার কথা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের। তবে মহানগরের রক্ত ব্যবসা তদারকির দায় সিভিল সার্জনেরও। রক্ত ব্যবসার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সরকার এভাবে দায়িত্ব নির্ধারণ করে দিলেও তা পালন করছে না কেউ।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের রক্ত নিয়েও চলছে অবৈধ বাণিজ্য। ডাক্তারদের ‘রক্তের চাহিদাপত্র’ লেখার সময় ৮ ধরনের নির্দেশনা অনুসরণ করতে অনুরোধ করে রেড ক্রিসেন্ট। এর মধ্যে রোগীর নাম, বয়স, লিঙ্গ; ভর্তির রেজিস্ট্রেশন নম্বর, বেড-ওয়ার্ড, রক্তের গ্রুপ, পরিমাণ ও ধরন, চিকিৎসকের পুরো নাম ও পদবি, সিলযুক্ত স্বাক্ষর ও তারিখ উল্লেখ করতে বলা হয়। কিন্তু কেউ এ নিয়ম মেনে দিচ্ছেন না রক্তের চাহিদাপত্র। ফলে, বন্ধ করা যাচ্ছে না স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের রক্ত নিয়ে চলা অবৈধ বাণিজ্যও।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা: মো: মহিউদ্দিন এর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘রক্ত নিয়ে ব্যবসা কিংবা রোগীদের কোন ভাবেই হয়রানি করা যাবে না। বিষয়টির খোঁজ খবর নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেবো শিগগরই।’

দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//