চট্টগ্রামের বিজ্ঞ তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ নুশরাত জাহানের আদালত ওয়াসার বিরুদ্ধে জনৈক ছৈয়দ মো.এনামুল হক মুনিরী কতৃক দায়েরকৃত প্রতিনিধিত্ব মূলক অপর মোকদ্দমা ১৫৩/২০ খারিজ করে দিয়েছেন।
গত ৩০ মে বিজ্ঞ আদালতে ওয়াসার পক্ষে মামলাটি দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের অর্ডার ৭,রুল ১১(ডি) ও ১৫১ ধারা অনুযায়ী অচল ও অরক্ষণীয় হওয়ায় আর্জি খারিজের আবেদন করে। বাদী পক্ষ গত ১৬ জুন লিখিত আপত্তি দাখিল করলে দোতরফা শুনানী হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে অদ্য প্রচারিত আদেশে বিজ্ঞ আদালত উক্ত মামলা খারিজ করেন।
ওয়াসার আইন উপদেষ্ঠা এডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আইনানুগ স্বত্ব,স্বার্থ,অধিকার,দখলহীন ব্যক্তি কতৃক দায়েরকৃত মামলা সুনির্দিষ্ট প্রতিকারআইনের ৪২ ধারানুযায়ীও অচল হয়।
চার হাজার কোটি টাকায় নির্মিতব্য চট্টগ্রাম ওয়াসার সুয়ারেজ প্রকল্পের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে দোতরফা শুনানী শেষে নিষেধাজ্ঞার আবেদনও খারিজ করা হয়।
ভূমি অধিগ্রহন সংক্রান্ত উক্ত মামলাটি অচল হওয়ায় আদালত কতৃক অদ্য প্রচারিত আদেশের ফলে চট্টগ্রাম ওয়াসার চার হাজার কোটি টাকার সুয়ারেজ প্রকল্পের কাজে আর কোন আইনী প্রতিবন্ধকতা রইলো না।
চট্টগ্রামের বিজ্ঞ ৩য় যুগ্ম জেলা জজ নুশরাত জাহান এর আদালত গত ০৪/০৪/২২ ইং একতরফা শুনানী অন্তে ১নং বিবাদী ওয়াসা ও ২নং বিবাদী সরকার পক্ষে জেলা প্রশাসককে আপত্তি দাখিল অন্তে শুনানী পর্যন্ত অন্তর্বতীকালীন অস্থায়ী নিষেধজ্ঞার আদেশ দ্বারা বারিত করেন। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পটি থমকে যায়।
উল্লেখ্য যে, চট্টগ্রাম ওয়াসা, জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ভূমি প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে হালিশহরের ওয়াসার সুয়ারেজ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ অবৈধ ঘোষণা চেয়ে ২০২০ সালে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক মামলাটি দায়ের করেছিলেন জনৈক সৈয়দ মুহাম্মদ এনামুল হক প্রকাশ ছৈয়দ মুহাম্মদ এনামুল হক মুনিরী, পিতা- মৃত সৈয়দ মোঃ নুরুদ্দিন প্রকাশ চেয়ারম্যান সাহেব, ঠিকানা- পীর বাড়ি, ৩৭ নং মুনির নগর ওয়ার্ড, বন্দর, চট্টগ্রাম ।
অন্তর্বতীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশটি সম্প্রতি সংবাদ পত্রে প্রকাশিত হলে চট্টগ্রাম ওয়াসার পক্ষে ১০/০৪/২০২২ ইং তারিখ ওকালতনামা যোগে হাজির হয়ে নিষেধজ্ঞার বিরুদ্ধে ১১/০৪/২০২২ ইং তারিখ লিখিত আপত্তি দাখিল করলে দোতরফা সূত্রে শুনানী হয় ।
উভয়পক্ষকে শুনানী শেষে আদালত আদালত ১৮/৪/২২ নিষেধাজ্ঞা খারিজ আদেশটি প্রচার করেন । আদেশে বিজ্ঞ আদালত উল্লেখ করেন, ” মুলত প্রকল্পটি একটি বৃহৎ জনস্বার্থের জন্য গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্প এবং বর্তমানে প্রকল্পের কাজ চলমান এবং বাদী ও অন্যান্য ভূমি মালিকদের যদি যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া না হয় তবে তা আদায়ের জন্য একটি চলমান প্রকল্পের কাজ ব্যহত রাখলে তা বাদী পক্ষেরও অন্যান্য ভূমি মালিকদের ক্ষতির তুলনায় বেশী ক্ষতির আশংকা তৈরি করবে ।
এছাড়াও যেহেতু মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে স্থানীয় জেলা প্রশাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নিমিত্তে অধিগ্রহণকৃত ভূমি, ভূমি মালিকগণের বরাবরে পুনরায় ফিরিয়ে দেবার সুযোগ নাই মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ভূমি মালিকগণের ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির সুযোগও যেহেতু বন্ধ হয়ে যাবে না সেহেতু এক্ষেত্রে বাদীর এবং অন্যান্য ভূমি মালিকগণের অপূরণীয় ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না এবং সুবিধা অসুবিধাতার ভারসাম্য বিবেচনায় বাদীর আবেদন মঞ্জুর করা হলেই বরং বিবাদী পক্ষের অনুকূলে ক্ষতির পরিমাণ যা মূলত একটি জাতীয় স্বার্থকে ব্যাহত করবে প্রতীয়মান হওয়ায় সার্বিক বিবেচনায় বাদী তার প্রার্থীত প্রতিকার পেতে হকদার নহে ।
আদেশ হয় যে, অত্র অস্থায়ী নিষেধজ্ঞার দরখাস্তটি ১নং বিবাদীর বিরুদ্ধে দোতরফা সূত্রে ও অন্যান্য বিবাদীর বিরুদ্ধে এক তরফা সূত্রে নামঞ্জুর করা হইলো । অত্র আদেশ দ্বারা বিগত ০৪/০৪/২২ ইং তারিখের এক তরফা অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ রদ রহিত করা হইল ।”
আর্জি খারিজের দরখাস্ত শুনানীকালে ওয়াসার পক্ষে বিজ্ঞ আইন উপদেষ্টা মানবাধিকার আইনবিদ জিয়া হাবীব আহ্সান বলেন, ‘প্রকল্পটি জনস্বার্থে সরকারের একটি চার হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প ।
এটা চট্টগ্রামের সুয়ারেজ সিস্টেমকে আধুনিকরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ গ্র্যান্ট যা কোন ঋণ নয় । এটি চট্টগ্রামকে হেলদি সিটি রূপায়ন প্রকল্প বা বিশাল কর্মযজ্ঞ ।
চট্টগ্রাম ওয়াসার জন্য সরকারের সানুগ্রহ অনুমোদন গ্রান্ড প্রায় চার হাজার কোটি টাকার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কর্তৃক মনিটরিং করা হচ্ছে ।
বিবাদী ওয়াসার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট জিয়া হাবীব আহ্সান, এডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ হারুন, এডভোকেট মোঃ সাইফুদ্দিন খালেদ, এডভোকেট মোঃ হাসান আলী, এডভোকেট মোহাম্মদ বদরুল হাসান, এডভোকেট মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন (আরমান) প্রমুখ । বাদী পক্ষে শুনানীতে অংশ নেন ব্যারিস্টার আফরোজা আকতার ও এডভোকেট মামুন সহ সঙ্গীয় আরো কয়েকজন ।
আর//দৈনিক দেশতথ্য//২৮ জুন-২০২২//

Discussion about this post