চট্টগ্রাম রেলওয়ের ১২ হাজার বর্গফুট জমি অবৈধভাবে ট্রাক রাখার জায়গা (পার্কিং স্পট) হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ট্রেন যাত্রীদের গাড়ি রাখার স্থানটিকে ট্রাক রাখার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ ব্যাপারে স্টেশন মাস্টার ও রেলওয়ে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কতৃপক্ষ।
তবে জেলা ট্রাক ও মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের এক সহ-সভাপতি নাম অপ্রকাশে বলেন, ‘চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের ওই স্থানটি অনেক দিন ধরেই ট্রাক টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রেলের জমি হলেও রেলের নিয়ন্ত্রণে নেই এটি। সেখানে সিন্ডিকেট করে ট্রাক রাখার বাণিজ্য চলছে বহুদিন। এতে আমাদের আপত্তি আছে। দ্রুতরেলওয়ে স্টেশন থেকে এসব ট্রাক সরানো দরকার।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা এসব সারি সারি ট্রাক দেখে বুঝার উপায় নেই এটি ট্রাক টার্মিনাল না রেল স্টেশন। এসব দৃশ্য দেখে দেশী বিদেশী ট্রেন যাত্রীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সংশ্লিষ্টদের অবহেলা এবং উদাসীনতার কারণে গুরুত্বপ‚র্ণ এলাকা রেলস্টেশনটি এখন বস্তিতে পরিণত হয়েছে। রেলস্টেশনের পাশে যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য রাখা পার্কিং এর জায়গাটি পুরো বেদখল হয়ে গেছে।
অভিযোগ অনেকের এটি ট্রাক টার্মিনালে পরিণত করেছেন শুধুমাত্র রেলের হর্তাকর্তারা। বাণিজ্যিক ট্রাক স্টেশন হিসেবে প্রতিরাতে ভাড়া দিচ্ছেন রেলের জায়গা। এখানে রাখা প্রতি ট্রাকের ভাড়া ১৫০ টাকা, ছোট ট্রাক ১৩০ টাকা, কার ৩০ টাকা, বাইক ২০ টাকা। বেশির ভাগ জায়গা দখল করেছে ট্রাকে। প্রতিদিন শত শত ট্রাক এখানে রাখা হয়। দিনশেষে সিন্ডিকেটের পকেটে যাচ্ছে ট্রাক রাখার টাকা। মাস শেষ লাখ লাখ টাকা। বছরে কোটি টাকার বাণিজ্য শুধু ট্রাক থেকেই! যেন এসব দেখার রেলে কেউ নেই।
স্থানীয়রা জানান, যাত্রীদের কারপার্কিং এর স্থলে ভারি যানবাহন সারিবদ্ধভাবে লরি, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, রিক্সা ও সিএনজি অটোরিকশা এবং ভাসমান দোকান বসানো হয়েছে। প্রতিটি দোকান থেকে দৈনিক চাঁদা আদায় করা হয়। একইভাবে পার্কিং এর জায়গা অলিখিতভাবে লিজ দেয়া হয়েছে ট্রাক চালকদের কাছে। স্টেশন মাস্টার, বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সিআই, জিআরপি পুলিশের ইনচার্জ টাকার বিনিময়ে রেলস্টেশনের উভয় পাশে ৩ শতাধিক ট্রাক রাখেন প্রতিরাতে।
স্থানীয়রা আরও জানান, এসবের কারণে সাধারণ যাত্রীরা তাদের গাড়ি পার্কিং করতে পারেন না। এসব ট্রাক রাখার কারণে পথচারী ও যাত্রীদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ওই এলাকার ফুটপাতেও বসানো হয়েছে শতাধিক দোকান। ভাসমান দোকানের কারণে ফুটপাত দিয়ে পথচারীদের চলাচলের উপায় নেই। রেলওয়ের পুরো খালি জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। এছাড়া যাতায়াতে রাস্তার ওপরে, রেল স্টেশনের দুইপাশে বিভিন্ন ধরনের দোকান বসানো হয়েছে।
দোকানদারেরা জানান, স্টেশন মাস্টার, রেলওয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং জিআরপি কর্মকর্তাকে দৈনিক ৫ শত টাকা করে দেয়া হয়। আর এ টাকার বিনিময়েই রেলস্টেশনে পাশে দোকান বসানোর সুযোগ দেয়া হয়।
তবে এসব কথা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রেল কতৃপক্ষ।
জানতে চাইলে রেলওয়ের প‚র্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ‘রেলের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পার্কিং ইজারা দেওয়া হয়েছিল। তার মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন করে আবারো পার্কিং ইজারা দেওয়া হবে। টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু কোন লরি, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান রাখার জন্য রেলওয়ে পার্কিং ইজারা দেওয়া হয়নি। কারণ এসব পার্কিং এর জায়গায় যাত্রীদের গাড়ি রাখার জন্য। যদি কোন কারণে কেউ ট্রাক রাখেন তাহলে সেটা অবৈধ। তাছাড়া বিষয়টি আমরা জেনেছি। রেলের ওই ফাঁকা জায়গাটিতে ট্রাক রাখা নিষেধ। কেউ নিষেধাজ্ঞা না মানলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সম্প্রতি চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, দোকানপাট দেখে দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বহিষ্কার করেন রেলমন্ত্রী মোঃ ন‚রুল ইসলাম। তাঁরা হলেন রেলওয়ে প‚র্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শামস মো. তুষার ও স্টেশন ব্যবস্থাপক রতন কুমার চৌধুরী।
আর//দৈনিক দেশতথ্য// ১১ জুন-২০২২//