চট্টগ্রাম কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটা ইউপি নির্বাচন আগামী ১৫ জুন। বিধি অনুযায়ী সকলে প্রচারণা শুরু না হলেও নানা কৌশলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে নেতাকর্মীরা মাঠ চষে ফেলছেন। অন্যদিকে ২৭ তারিখ প্রতীক পেলেও মতবিনিময় সভা ও নিজ বাড়ির আঙিনায় কয়েকটি উঠোনবৈঠক করলেও আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্রপ্রার্থী এখন অনেকটা নীরব বলে খবর পাওয়া যায়।
সরেজমিনে জানা যায়, দলের বাহিরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া, ভেতরে বাহিরে নানা কোন্দল, প্রশাসনিক নানা বার্তা কর্মীদের মাঝে মামলা-হামলার ভয় ঢুকে যাওয়ায় অনেকটা নির্জীব হয়ে রয়েছে আনারসের কার্যক্রম।
জানা যায়, দেশে স্থানীয় সরকার বিভাগের সর্বশেষ স্তর ইউনিয়ন পরিষদে ২০১৬ সালে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন শুরু হয়। সেই অনুযায়ি চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন হাজী ছাবের আহমদ। তিনি চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে দুবার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
এবারে তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে আনারস প্রতীকে একই পদে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এবারের নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু করে তিনি চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে ৬ হাজার পিস পোস্টার, ৬০ পিস বড় ব্যানার ও ঘরে ঘরে ৫ হাজার স্টিকার সাঁটালেও সব পোস্টার ব্যানার রাতারাতি গায়েব হয়ে যায় বলে তিনি অভিযোগ করেন। ওদিকে, নৌকা প্রার্থীরও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর। নির্বাচন অফিস বলছেন, দুই প্রার্থীরা নিজেরাই আচরণ বিধি ভঙ্গ করে লিখিত অভিযোগ করছেন। তবে নির্বাচন অফিসের কোন পদক্ষেপ এখনোও চোখে পড়েনি।
সরেজমিনে আরও জানা গেছে, চরপাথরঘাটা ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে সেলিম হকের পক্ষ নৌকার প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা লীগ ও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শত শত নেতাকর্মী। পুরো ইউনিয়ন জুড়ে তাদের ব্যাপক ব্যানার, ফেস্টুন এবং বিলবোর্ড। এসব টাঙিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়েন তাঁরা।
অন্যদিকে ২৭ মে এর পর থেকে আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী ছাবের আহমদের কর্মী সমর্থকরা কিছু ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার টাঙানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু যেখানেই তাঁর ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হয়, সেখান থেকেই রাতারাতি সেসব প্রচারণা উধাও হয়ে যায়।
পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী অভিযোগ করেছেন তাঁদের প্রচারণা বন্ধ করে দিয়ে প্রতিপক্ষরা মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকে, আনারস বা চশমার নেতৃত্বে কোনো ওয়ার্ডেই নেতাকর্মীদের কোনো কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না। অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন দুই প্রার্থী। এমন পরিস্থিতিতে ইসি মাঠ পরিদর্শন করলে নির্বাচন বন্ধ হওয়ারও আশঙ্কা করছেন নির্বাচন বিশ্লেষক ও স্থানীয় সচেতন মহল।
চরপাথরঘাটা এলাকার ভোটার বিপ্লব ও সুমন বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর নেতাকর্মীদের নীরব ভূমিকার কারণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একচেটিয়া ভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রচারণা এত বেশি হচ্ছে যে অন্য কোন প্রার্থীর কথা শোনাই যাচ্ছে না। এ বিষয়ে তাঁরা বলেন, ‘দলীয় সভা করার জন্য বড় কোনো পরিসর চাইলেও অনুমতি দিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। তাহলে কিভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নেতাকর্মীরা মাঠে নামবে?
নৌকা মার্কার এক কর্মী মাসুদ বলেন, ‘আনারস সব দিক থেকেই ব্যর্থ হয়ে জনসমর্থন হারিয়েছেন। এবার আর জনগণ তাঁদের প্রচারণায় কান দিচ্ছেন না। কারণ তাঁদের নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্বের কারণেই তাঁরা মাঠে নামতে পারছে না। এখানে প্রশাসন কী করবে?
মাঠের চিত্র বলছে, আনারস প্রতীকের কর্মী সমর্থকরা এখনো ঘরবন্দি। তাঁদের নিজ প্রার্থীর বাড়ির উঠোন বৈঠকেই গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিছুতেই তাঁরা নির্বাচনী কার্যক্রম পুরোদমে চালাতে পারছে না। সব মিলিয়ে বেশ বেকায়দায় দুপ্রার্থী। সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সব দিকে চলছে প্রচার প্রচারণা। এ অবস্থায় স্বতন্ত্ররা সব দিক থেকেই পিছিয়ে পড়েছে। নানা কারণে মাঠে নামার সাহস পাচ্ছে না তাঁদের কর্মী সমর্থকরা।
ফলে, সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে আস্থার সংকট। প্রথম কয়েকদিন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় কিছুটা জানান দিলেও মাঠে দাঁড়াতেই পারছেন না স্বতন্ত্র দলের নেতাকর্মীরা। মাঠের দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে মনোবল হারাচ্ছেন আনারসের কর্মী সমর্থকরা। এমন প্রশ্ন এখন জনমনে আলোচনা চলছে।
হাজী ছাবের আহমদ এর নির্বাচনে অংশগ্রহণ আর প্রচার-প্রচারণায় শুরুতেই কিছুটা চমক থাকলেও এখন অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। কি কারণে থেমে রয়েছেন সে বিষয়ে তিনি কোন মুখ খুলছে না। তবে তিনি বলছেন, এটা কোনো ভোটের পরিবেশ হতে পারে না। নির্বাচন অফিস স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য ভোট আয়োজনে ব্যর্থ। মাঠে সবাই সমান অধিকার পাচ্ছে না।
আর//দৈনিক দেশতথ্য//১ জুন-২০২২//

Discussion about this post