চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট এলাকার যাত্রীছাউনির পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে কয়লার ড্যাম্প (কয়লার স্তূপ)। খোলা আকাশের নিচে একেকটি কয়লার স্তূপ যেন পাহাড়সম। স্তূপ করা এই কয়লার বিষাক্ত ধোঁয়া ও তার গ্যাসে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে চরপাথরঘাটাবাসী। পাশাপাশি এসব কয়লার স্তূপে দুর্ঘটনাবশত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কাও রয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট এলাকায় নদীপাড়ে যত্রতত্রভাবে রাখা হয়েছে কয়লার স্তূপ। রয়েছে বালি পাথরও।
তথ্য মতে, মেসার্স সাহারা এন্টারপ্রাইজ নামক একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এই বিপুল পরিমাণ কয়লা আমদানি করে ওখানেই মজুদ রেখে তা অন্যত্র বিক্রি করে থাকেন। এই কয়লার ডিপোতে নেই ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। তারপরেও হাজার হাজার মেট্রিক টন কয়লা অবৈধভাবে মজুদ রেখে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছিলো প্রতিষ্ঠানটি।
জানা যায়, বন্দরের জায়গায় অবৈধ ভাবে তারা কয়েকটি জেটিঘাট নির্মাণ করেছেন। শুধু চরপাথরঘাটার ব্রিজঘাট নয়, নতুনব্রিজের নিচ চরপাথরঘাটা অংশ এবং শিকলবাহা ও জুলধা ইউনিয়নের বিভিন্ন খোলা জায়গায় ইট, পাথর, বালি এবং কয়লা মজুদ করে অনেকেই নিরাপদে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। যারা এখনো ধরা ছোয়ার বাহিরে।
তথ্যসূত্র বলছে, এসব কয়লা গুলো প্রথমে জাহাজ থেকে নামিয়ে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে খোলা আকাশের নিচে ড্যাম্প করে রাখা হয়। তারপর পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কয়লা কিনে তা ট্রাকে লোড করে নিয়ে যান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। খোলা আকাশের নিচে রাসায়নিক এই কয়লা ড্যাম্প করায় চরপাথরঘাটার অনেক গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। মানুষ বসবাসের জায়গায় গ্রামের মধ্যে কয়লা রাখায় দিনরাত সবসময়ই বাতাসের মাধ্যমে কয়লার ধুলা ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। এসব ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় মানুষ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। শিশু, বয়স্কসহ সব বয়সের মানুষ ফুসফুসজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
ভুক্তভোগী খোরশেদ আলম জানান, ‘এই কয়লার কারণে ব্রিজঘাট বাজার ও আশেপাশের বাড়িঘরে বসবাস করা কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়িত ঘরের দরজা-জানালা, আসবাবপত্র, পোশাক-পরিচ্ছদ কয়লার ধুলায় সয়লাব হয়ে পড়েছে।’ তিনি আরও জানান, এমনকি পুরাতন ব্রিজঘাট এলাকার সব খাবারের দোকানে নাস্তা পানির সঙ্গে খেতে হচ্ছে কয়লার ধুলা।
চরপাথরঘাটার ব্যবসায়ি মোহাম্মদ আজগর জানান, ‘এই কয়লার বিষাক্ত ধুলায় যাত্রীছাউনি দিয়ে নিয়মিত আসা যাওয়া করা লোকজনের প্রায় শ্বাস-প্রশ্বাস কষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। চোখ জ্বালাপোড়া ছাড়াও ফুসফুস ও শ্বাসনালিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।’
চরপাথরঘাটা খোয়াজনগর এলাকার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর পাশে যাত্রীছাউনি অথচ লোকজন আসা যাওয়ায় নির্মল বাতাস গায়ে লাগিয়ে চলাচল করতে পারছে না। পাশে থাকা কয়লার ডিপো আর বালি পাথরের স্তুপে পরিবেশ দূষণ করে চরপাথরঘাটাকে পুরোপুরি গ্রাস করে নিয়েছে।’
চরপাথরঘাটা পুরাতন ব্রিজঘাট কয়লা ডিপোর মালিক দাবিদার আনোয়ার সাদত মোবারক এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডা. তৈয়ব আলী বলেন, ‘কয়লার ধোঁয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যত্রতত্রভাবে কয়লা রাখার জন্য প্রতিদিন হাসপাতালে আসছে স্বাসকষ্ট, ফুসফুসজনিত সমস্যা নিয়ে এলাকার অনেক রোগী। অন্য দিকে কয়লার ধূলিকণা ও কার্বনের কারণে এলাকার পরিবশের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। কয়লার ধূলিকণা বাতাসে মিশে পরিবেশকে করে তুলেছে দূষণীয়। সেই ধূলিকণা মানুষের নিঃশ্বাসের সাথে ভেতরে ঢুকে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।’
জানতে চাইলে কর্ণফুলীর এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘জনসম্পৃক্ত উন্মুক্ত এলাকায় কয়লা রাখা অবশ্যই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় খোঁজখবর নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম বলেন, ‘জনবসতির দেড় কিলোমিটারের মধ্যে কয়লার ডিপো করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। তাছাড়া কয়লার স্তূপে উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘিরে রাখার বিধানও রয়েছে। যার কিছুই মানছেন না কয়লা ব্যবসায়িরা। আইনে আরও বলছে ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত কোনো ব্যক্তি কয়লা, পাথর ও বালি মজুদ করতে পারবে না।’
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘কয়লা একটি দাহ্য পদার্থ, নিজে থেকেই এতে আগুন ধরে যেতে পারে এবং মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটতে পারে। জনবসতি পূর্ণ এলাকা থেকে কয়লার মজুদ দ্রুত অপসারণ করতে হবে।’
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//

Discussion about this post