সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুর সংসদীয় আসনের টানা চার বারের মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ মো. একাব্বর হোসেন (৭৬) মারা গেছেন (ইন্নানিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। তিনি মির্জাপুর উপজেলা ্আওয়ামীলীগের দীর্ঘ দিনের সভাপতি। একজন সাধা মনের মানুষ ও স্বপ্ন দ্রষ্টার চলে যাওয়াতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর দ্ইুটায় রাজধানী ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মীর শীর শরীফ মাহমুদ এবং এমপি একাব্বর হোসেনের পুত্র ব্যারিষ্টার মো. তাহরীম হোসেন সীমান্ত মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ১৮ অক্টোবর তিনি ধানমন্ডীর বাসায় অসুস্থ্য হয়ে পড়লে প্রথমে আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত ২০ অক্টোবর প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশনায় ঢাকার সিএমএইচে ভর্তি করা করা হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি উচ্চ রক্ষচাপ, ডায়াবেটিস এবং তার দুটি কিডনি ড্যামেজ ছিল।
বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবন- একাব্বর হোসেন ১৯৬৫ সালের ১২ জুলাই মির্জাপুর উপজেলা সদরের পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের পুষ্টকামুরী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম মৃত মো. ওয়াজ উদ্দিন মিয়া এবং মাতার নাম রোজিনা বেগম। দুই ভাই ও ৬ বোনের তিনি চতুর্থ সন্তান। তার স্ত্রী ঝরনা হোসেন, এক পুত্র ব্যারিষ্টার মো. তাহরীম হোসেন সীমান্ত ও দুই কন্যা বড় মেয়ে একতা ও ছোট মেয়ে ঈশিতা রয়েছে।
তার সহপাঠি ও মির্জাপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. সালাউদ্দিন আহমেদ বাবর জানান, একাব্বর হোসেন ছিলেন অত্যান্ত মেধাবী ছাত্র। এসএসসি পাশ করার পর তিনি ঢাকা সরকারি তিতুমির কলেজে ভর্তি হন। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর একজন আদর্শ সৈনিক। প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে ছিল তার অগ্রনী ভুমিকা। ১৯৭৩ সালে সরকারি তিতুমির কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। এইচএসসি পাশের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হলের ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক এবং ১৯৭৮ সালে একই হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ১১ নং সেক্টর যুদ্ধ করেন। তিনি মির্জাপুর উপজেলা বিআরডিরি চেয়ারম্যান, ১৯৯০ সালে মির্জাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে অষ্টম মহান জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে মির্জাপুরে বিএনপির দুর্গ ভেঙ্গে আওয়ামীলীগের প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। একজন সাদা মনের মানুষ এবং তার বিপুল জনপ্রিয়তার কারনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোয়ন পেয়ে ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হন। টানা চার বারের এমপি হওয়ায় তিনি মির্জাপুর উপজেলাকে উন্নয়নের এক রোড মডেল হিসেবে উপহার দেওয়ার চেষ্টা করেন। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, বিদ্যুৎ, গ্যাস, শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন, চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল স্থাপন করে দৃষ্টান্ত রেখেছেন। তার অক্লান্ত চেষ্টায় মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগি সংগঠন সুসংগঠিত।
এদিকে শিক্ষার জন্য তিনি আলহাজ¦ শফিউদ্দিন মিঞা এন্ড একাব্বর হোসেন টেকনিক্যাল কলেজ, ঝরনা হোসেন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আলহাজ¦ শফিউদ্দিন মিঞা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পুষ্টআলহাজ¦ শফিউদ্দিন মিঞা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। তার এই মৃত্যুতে মির্জাপুরবাসি এক উজ্জল নক্ষত্রকে হারালো।
এদিকে সড়ক পরিহন ও সেতু মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. একাব্বর হোসেন এমপির মৃত্যুতে তার পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, সাধারন সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী মো. ওবায়দুল কাদের এমপি, টাঙ্গাইল-১ আসনের এমপি ও কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ভোলা, টাঙ্গাইল-২ আসনের এমপি তানবীর হাসান ছোট মনির, টাঙ্গাইল-৩ আসনের এমপি খান আতাউর রহমান, টাঙ্গাইল-৪ আসনের এমপি হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারি, টাঙ্গাইল-৫ আসনের এমপি মো. ছানোয়ার হোসেন, টাঙ্গাইল-৬ আসনের এমপি মো. আহসানুল ইসলাম হক টিটু, টাঙ্গাইল-৮ আসনের এমপি এড. জোহাহেরুল ইসলাম জহের, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা জননেতা ফজলুর রহমান খান ফারুক, সাবেক এমপি মো. আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসনক ড. মো. আতাউল গনি, টাঙ্গাইলের পুলিশ সরকার মোহাম্মদ কায়সার, মির্জাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমান, পৌরসভার মেয়র সালমা আক্তার শিমুল, এসিল্যান্ড মীর্জা জুবায়ের হোসেন, কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল বিডি লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজিব প্রসাদ সাহা, শিক্ষা পরিচালক ও একুশে পদক প্রাপ্ত প্রতিভা মুৎসুদ্দি, মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ রিজাউল হক শেখ দিপু, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মীর শরফি মাহমুদ, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আজাহারুের ইসলাম ও মীর্জা শামীমা আক্তার শিফা, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক দুর্লভ চন্দ্র বিশ্বাস, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মো. আবু আহমেদ, মির্জাপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. গোলাম ফারুক সিদ্দিকীসহ আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের নের্তৃবৃন্দসহ স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ। আগামীকাল বুধবার বাদ জোহর মির্জাপুর উপজেলা সদরের শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম মাঠে রাষ্ট্রী মর্যাদায় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে তার পরিবারের সদস্যগন জানিয়েছেন।

Discussion about this post