জে, জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগরে গড়ে উঠেছে মেসার্স প্যারাগন ব্রিকস ফিল্ড। যে ভাটার কালো ধোঁয়ায় বিপন্ন পরিবেশ। সাথে হুমকিতে সবুজ প্রকৃতি।
অভিযোগ, বিষয়টি অবগত থেকেও নির্বিকার স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর। অথচ ইটভাটা প্রস্তুত ও নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৩ তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, জনবসতিপূর্ণ এলাকা (আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক) আশপাশে ইটভাটা করা যাবে না। কিন্তু এসব নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কাই করছেন না ভাটার মালিক মোহাম্মদ ফারুক।
জানা যায়, চরলক্ষ্যা মৌজার বিএস ১৬৩ ও ৬৮৫ দাগের জমিতে ইটের ভাটা করতে ২০২২ সালের ২৬ জুন লাইন্সেস এর আবেদন করেন। জেলা প্রশাসক শর্ত সাপেক্ষে আগামী ২০২৫ সালের ৩০ জুন অবধি লাইন্সেস প্রদান করেন। মাত্র ৫০০ টাকার লাইন্সেস দিয়ে বছরে ৬ কোটি টাকা ব্যবসা করার নিয়মনীতির দুর্বলতা কোথায় তা জানা যায়নি।
তবে ইট প্রস্তুতে শর্ত ছিল, ইটভাটায় কোন অবস্থাতেই জ্বালানি কাঠ ব্যহার করা যাবে না। জেলা প্রশাসকের অনুমোদন ব্যতিত ইট প্রস্তুত করিবার উদ্দেশ্যে মজা পুকুর বা খাল বা বিল বা খঁড়ি বা দিঘি বা নদ নদী বা হাওড় বা চরাঞ্চল বা পতিত জায়গা হতে মাটি কাটা যাবে না। ইটভাটায় ইট পোড়ানো কাজে নির্ধারিত মান মাত্রার সালফার, অ্যাশ, মারকারি বা অনুরুপ উপাদান সংবলিত কয়লা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না। যার কোনটাই মানছেন না প্যারাগন ব্রিকস ফিল্ড।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্যারাগন ব্রিকস ফিল্ড লোকালয়ের ভেতরে হওয়ায় ইটভাটাকে ছাড়পত্র প্রদান করা হয়নি। তবে ওই ভাটার মালিকরা এসব আমলে না নিয়ে বছরের পর ধরে ভাটা পরিচালনা করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, জেলা উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংস্থাকে ম্যানেজ করেই প্রভাবশালীরা ভাটা পরিচালনা করছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনেকটাই অপারগ।
জানতে চাইলে মেসার্স প্যারাগন ব্রিকস ফিল্ড এর মালিক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘আমার লাইসেন্স আছে, যার নং-৩৭১/২২। পরিবেশের ছাড়পত্র নেই সেটা সত্য। তবে চেষ্টা করছি পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নিতে। নদী থেকে মাটি তুলে ভাটায় ইট প্রস্তুত করা হয় সেটা সত্য নয়।’
ইছানগর এলাকার জাফর আলম বলেন,‘ইটভাটার মালিক কার শক্তিতে ইট ভাটা চালাচ্ছে তা আমরা জানি না। প্রশাসন কেনো নিশ্চুপ আমরা তাও বুঝতে পারছি না। অতি দ্রুত ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরিবেশ বিপর্যয় হয়ে পড়বে।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিচালক মোঃ ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‘ভাটা নির্মাণের আগে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক। অথচ ভাটা মালিকরা অবৈধভাবে ইট তৈরি ও বিক্রি করলেও কাউকে তোয়াক্কা করছেন না।’
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিতে হয়। যেগুলোকে ছাড়পত্র দেওয়া হয় না, তাদের এক বছর সময় দেওয়া হয় ভাটা সরিয়ে নেওয়ার জন্য। এর বাইরে যেসব ভাটা ছাড়পত্র ছাড়া চলছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//