মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থানার দুর্গম পাহাড়ি এলাকার জঙ্গি আস্তানা থেকে আটক ১৩ জনের মধ্যে ৩ জনের বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ নলতা গ্রামে।
তাদের একজন শরীফুল ইসলাম মোড়ল (৪০), তার স্ত্রী আমিনা বেগম (৩৮) ও একমাত্র মেয়ে হাবিবা বিনতে শরিফুল (২০)।
গতকাল শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করেন।
এসময় ঐ জঙ্গী আস্তানায় ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৩কেজি বিস্ফোরক ও ৫০টি ডেটোনেটর, ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা, প্রশিক্ষণ সামগ্রী, কমব্যাট বুট, বক্সিন ব্যাগ এবং কয়েক বস্তা জিহাদি বই জব্দ করা হয়েছে।
সিটিটিসির বিশেষ ইউনিটের প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সরেজমিনে খলিলনগরের ৩ জন আটকের ব্যাপারে স্থানীয়রা জানান, আটককৃতদের মধ্যে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নলতা গ্রামের তিনজন একই গ্রামের। শরিফুল ইসলাম ও আমিনা পরষ্পর স্বামী-স্ত্রী এবং হাবিবা তাদের একমাত্র মেয়ে। তারা আরো দাবী করেন, তাদের মেয়ে হাবিবা বিনতে শরিফুল’র স্বামী আমিনুল ইসলামও গত বছরের ২০ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ থেকে জঙ্গী হিসেবে আটক হয়েছিল। গত প্রায় সপ্তাহ দু’য়েক পূর্বে তারা আমিনুলের জামিন ধরতে ঢাকায় গিয়েছিল। এরপর তারা আর বাড়িতে ফেরেনি।
তালার খলিলনগর ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের সাবেক মহিলা ইউপি সদস্য ময়না বিবি ও স্থানীয় খালেক সরদার বলেন, খবরের মাধ্যমে তাদের আটকের খবরে তারা রীতিমত হতবাক হয়েছেন। তাদের জানা-চেনামতে শরিফুল খুবই শান্ত ও ভালো ছেলে বলে পরিচিত। সে রাস্তার পাশে একটি ঝুপড়ি ঘর বেঁধে স্ত্রী-সন্তানসহ সেখানেই বসবাস করে। সাইকেল সারাইয়ের কাজ করে সেখান থেকেই জীবিকা নির্বাহ করতো বলেও জানান তারা।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২০ নভেম্বর সিরাজগঞ্জে শরিফুলের একমাত্র মেয়ের জামাই জঙ্গী হিসাবে ধরা পড়লে ঐ পরিবারে মূলত অন্ধকার নেমে আসে। এলাকার সবাই জানে জামাইকে ছাড়াতে ১৫/১৬ দিন আগে একটি গরু বিক্রি ও জমির হারির প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ বাড়ি থেকে বেরিয়ে এখনো বাড়িতে ফেরেনি তারা।
তবে সর্বশেষ তারা মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার দূর্গম পাহাড়ী এলাকার জঙ্গী আস্তানা থেকে আটকের খবরে স্থানীয়রা রীতিমত হতবাক হয়েছেন।
তালা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চৌধুরী রেজাউল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ব্যাপক তথ্যানুসন্ধানে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আটককৃতদের বিষয়ে ব্যাপক খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। পরে এ ব্যাপারে বিস্তাারিত জানানো হবে।
অন্যদিকে অভিযানের পর সিটিটিসির বিশেষ ইউনিটের প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল নতুন একটি উগ্রবাদী সংগঠন ব্যাপক সংখ্যক লোকদের উগ্রবাদের দীক্ষা দিয়েছে। আমরা জানতে পারি, মৌলভীবাজারের যেকোনো একটি পাহাড়ে তারা তাদের আস্তানাটি তৈরি করেছে। গতকাল আমরা চূড়ান্ত তথ্য পাই। ঢাকায় আমরা একজনকে গ্রেপ্তার করেছি, যিনি এই জঙ্গি আস্তানা থেকে তার পরিবারকে আনার জন্য গিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, এটি নতুন একটি সংগঠন, এর নাম ইমাম মাহমুদের কাফেলা। বাংলাদেশে যেসব নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আছে, সেগুলোর বাইরে এটি একটি নতুন সংগঠন। এই সংগঠনের যে মূল ব্যক্তি তার নামও আমরা পেয়েছি। আশা করা হচ্ছে, আমরা তার পর্যন্ত দ্রুত পৌঁছাতে সক্ষম হব।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//