শাহ্ আলম ভূঁইয়া, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: স্বামী মারা গেছেন ৩৫ বছর আগে। জীবিত তৃতীয় ছেলের বয়স ৮৬। বয়সের কারণে শরীরের ত্বকে ভাঁজ পড়েছে আমেনা খাতুনের। বয়সের ভারে লাঠির সাহায্য ছাড়া হাঁটতেও পারেন না। চোখে কম দেখেন, কানেও শোনেন কম। অথচ জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুলে এই বৃদ্ধার বয়স মাত্র ৩৩ বছর। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৬৫ বছরের আগে বয়স্ক ভাতা পাওয়ার সুযোগ নেই, তাই তিনি বয়স্কভাতা পাচ্ছেন না।
আমেনা খাতুনের বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার গালাগাঁও ইউনিয়নের দর্জিগাতী গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের প্রয়াত ছমেদ আলীর স্ত্রী। চার ছেলে মারা গেছেন। এক ছেলে জীবিত থাকলেও তিনিও বয়সের ভারে ন্যুব্জ। অভাব-অনটনের সংসারে আমেনা খাতুন থাকেন নাতির সঙ্গে।
পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় এলাকাবাসী অনুমান করে বলছেন,
আমেনা খাতুনের মোট সাত সন্তান ছিলেন। এরমধ্যে পাঁচজন ছেলে ও দুইজন মেয়ে। বর্তমানে বড় ছেলে মো. ইয়াকুব আলী এবং দুই মেয়ে সখিনা খাতুন ও রাশিদা খাতুন বেঁচে আছেন। জন্মের পরপরই আমেনার বড় দুই ছেলে মারা যায়। এরপর জন্ম হয়েছে মো. ইয়াকুব আলীর। পরিচয়পত্র অনুযায়ী ইয়াকুব আলীর বর্তমান বয়স ৮৬ বছর। আমেনার পাঁচ ছেলের মধ্যে ছোট দুই ছেলে আবদুল মান্নান ও আবদুল হাই সম্প্রতি মারা গেছেন।
পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের জানান, ২০০৮ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র পান আমেনা খাতুন। তার জন্ম ১৯০২ সালে হলেও পরিচয়পত্রে লেখা রয়েছে ১৯৮৯ সাল। শুরুর দিকে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে তেমন গুরুত্ব দেননি। পাঁচ বছর আগে আমেনার এক নাতনির কলেজপড়ুয়া ছেলে রাকিবুল হাসান পরিচয়পত্রে জন্মতারিখ সংশোধনের উদ্যোগ নেন। দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য তিনি গালাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ে যাওয়া-আসা করলেও এখনো বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি।
রাকিবুল হাসানের কথায়, অন্তত পাঁচ বছর ধরে তিনি পরিচয়পত্র সংশোধনের চেষ্টা করছেন। এ সময়ের মধ্যে গালাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও বদল হয়েছেন। তবে বর্তমান চেয়ারম্যান সংশোধনের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন।
আমেনা খাতুন বলেন, ‘নাতির সংসারে থাকি। সবাই আমারে অনেক আদর করে। তবে নাতি আর ছেলের অবস্থাও ভালো না। আমার থাকার ঘর নাই। নাতির ঘরের এক পাশে থাকি। সরকার যদি আমারে ভাতা দেয়, তাহলে আমার নাতি আর ছেলের ওপর কিছুটা চাপ কমতো।’
আমেনা খাতুনের ছেলে মো. ইয়াকুব আলী (৮৬) বলেন, ‘আমার ছোট দুই ভাই মারা গেছেন। আমারও বয়স হয়েছে। মাকে খুব বেশি দেখাশোনা করতে পারি না। আমার ছোট ভাইয়ের ছেলে মো. শামীম মাকে দেখাশোনা করে। বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা হলে উপকার হতো।’
গালাগাঁও ইউপির চেয়ারম্যান আবদুর রহমান তালুকদার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমেনা খাতুনের জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুলের বিষয়টি তিনি কিছুদিন আগেই জেনেছেন। তার জানামতে, আমেনা খাতুন এই গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুলের কারণে তিনি বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন না। তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে অতি দ্রুত আমেনা খাতুনের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেন।
দৈনিক দেশতথ্য//এল//

Discussion about this post