এস এ শফি, সিলেট : সিলেটের জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটের জারা লেবুর কদর এখন দেশে বিদেশে। বিশেষ জাতের এই লেবু বিদেশে রপ্তানির ফলে বদলে যাচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্যের চাকা। দুই উপজেলায় জারা লেবু চাষ করে প্রায় ২শ’ কৃষক পরিবার এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন। পাশাপাশি অন্যান্য ফসলের চেয়ে ফলন বেশি হওয়ায় এবং বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় বাণিজ্যিকভাবে জারা লেবু চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছে কৃষক পরিবারগুলো।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, জৈন্তাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর, হরিপুর, বাগেরখাল, শিকারখাঁ, উৎলারপার, চিকনাগুল ইউনিয়নের উমনপুর, পানিছড়া, ঠাকুরের মাটি, নিজপাট ইউনিয়নের কালিনঞ্জিবাড়ি ও গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বানিগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলের টিলা ভূমিতে বাণিজ্যিকভাবে শতাধিক বাগানে জারা লেবু চাষ হচ্ছে। এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা জারা লেবু ক্রয় করতে আসে। উন্নত প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবসায়ীরা দেশের বাইরে লন্ডন, আমেরিকা, সিংঙ্গাপুর, কাতার, সৌদি আরব, কুয়েত, আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে।
এই অঞ্চলের অধিকাংশ কৃষক অন্যান্য ফসল চাষাবাদ দিয়ে অধিক মুনাফার আশায় জারা লেবু চাষের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে এলাকার বেকারত্ব দূর হচ্ছে এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে গ্রামের সাধারণ লোকজন। একসময় প্রচুর জমি বছরে পর বছর অনাবাদী থাকতো। এখন এসব জমির কদর অন্য সব জমির চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।
জারা লেবুর কলম করা চারা রোপণের ২ বছর পর হতে ফলন আসতে শুরু হয় এবং গাছগুলো থেকে পাঁচ বছরের অধিক সময় ফলন পাওয়া যায়। জারা লেবুর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর ঘ্রাণ চমৎকার, খুব সুস্বাদু ও টক জাতীয় ফল। লেবুটি দেখতে অনেকটা কুমড়ার মতো।
জৈন্তাপুর উপজেলার বাগেরখাল গ্রামের কৃষক জসিম উদ্দিন জানান, জারা লেবু চাষের জন্য আমাদের এলাকাটি খুবই উপযোগী। আমাদের পূর্ব পুরুষরা জারা লেবু চাষ করেছেন শুধু নিজ পরিবারের জন্য, আমরা এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে শুরু করেছি।
একই গ্রামের কৃষক ইলিয়াস আহমদ জানান, দীর্ঘদিন থেকে আমি লেবু চাষ করে আসছি। পতিত জমিতে জারা লেবু চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ ও রোগবালাই প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় কীটনাশক এবং উন্নত জাতের চারা সরবরাহ করছে। এর মাধ্যমে লেবু চাষীরা জারা লেবু বিদেশের বাজারে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালক (পিপি) কৃষিবিদ মোঃ আনিসুজ্জামান বলেন, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুরের মাটি ও আবহাওয়া সাইট্রাস জাতীয় ফলের জন্য উপযোগী। এখানে রয়েছে উঁচু নিচু টিলা, ফলে বৃষ্টির পানি গাছের গোড়ায় জমে থাকতে পারে না। এজন্য এ দু উপজেলায় সাইট্রাস ও লেবু জাতীয় ফসল কম খরচে বেশি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর নিয়মিতভাবে কৃষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও চারা সরবরাহ করছে। তাছাড়া কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শও দেয়া হচ্ছে। ফলে দিন দিন এসব উপজেলায় লেবু চাষীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ৩০ জুন২০২৪

Discussion about this post