অনিশ্চয়তায় ৫ লাখ একর জমির বোরো চাষাবাদ
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : পদ্মা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের খালে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে অনিশ্চয়তায় পড়েছে ৪ জেলার ১৩টি উপজেলার প্রায় পৌনে ৫ লাখ একর জমির বোরো চাষাবাদ।
জানা যায়, ১৫ জানুয়ারি সেচ প্রকল্পের আওতায় থাকা সব খালে পানি আসার কথা ছিল। কিন্তু ভেড়ামারায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের ক্যানেলে পানির দেখা মেলেনি। পদ্মা নদীতে বড় আকারের চর পড়া ও পানির স্তর নেমে যাওয়াকেই প্রধান কারণ হিসেবে দুষছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
ভেড়ামারার গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) পাম্প হাউজ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫১ সালে প্রাথমিক জরিপের পর ১৯৫৪ সালে জিকে সেচ প্রকল্প অনুমোদন পায়। ১৯৫৯ সালে প্রধান পাম্প হাউজের কার্যক্রম চালু হয়। ১৯৬২-৬৩ সালে প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে জিকে সেচ প্রকল্প চালু করা হয়। তখন চাষযোগ্য ফসলি জমি ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৬০০ হেক্টর। পরবর্তী সময় পাম্পের ক্যাপাসিটি কমার সঙ্গে সঙ্গে জমির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৯৫ হাজার ৬১৬ হেক্টর।
শুরুতে তিনটি পাম্প দিয়ে বছরে ১০ মাস (১৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত) দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পানি উত্তোলন করা যেত। বাকি দুই মাস রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পাম্প তিনটি বন্ধ রাখা হতো। তিনটি পাম্প সচল থাকলে চার জেলার ১৯৩ কিলোমিটার প্রধান খাল, ৪৬৭ কিলোমিটার শাখা খাল ও ৯৯৫ কিলোমিটার প্রশাখা খালে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়।
আর সেচ প্রকল্পের প্রধান এবং শাখা খালগুলোতে পানি থাকলে এখান থেকে কৃষকরা নিরবচ্ছিন্ন সেচসুবিধা পান। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে খনন না করায় ক্যানালগুলোর পানি ধারণক্ষমতা কমে গেছে। কোথাও কোথাও এর শাখা খালগুলো মরে গেছে বলেও জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জিকে সেচ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে চার জেলার ১৩টি উপজেলার প্রায় পৌনে ৫ লাখ একর জমি। এই সেচ প্রকল্পের পানির ওপর নির্ভরশীল কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা এই চার জেলার ১৩টি উপজেলার কয়েক লাখ কৃষক। তিনটি পাম্পের মধ্যে দুটি পাম্প গত কয়েক বছর আগে থেকেই অচল হয়ে গেছে। পানির লেভেল কমে যাওয়ায় অন্যটিও বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন বোরা চাষিরা।
কৃষক মসলেম হোসেন বলেন, জিকে সেচ খালের পানি দিয়ে চাষাবাদ করতে খরচ হয় বিঘাপ্রতি মাত্র ৩০০ টাকা। অন্যদিকে ডিজেল চালিত স্যালো ইঞ্জিন দিয়ে চাষাবাদে খরচ ৮-১০ হাজার টাকা। এত বিপুল পরিমাণ খরচের কারণে অনেক জমি তাই অনাবাদি থেকে যাচ্ছে। কৃষক মোতাহার রহমান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এখন পদ্মা নদীর চরে ড্রেজিং করছে। কিন্তু এটা অনেক আগে থেকেই শুরু করা উচিত ছিল।
ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা সুলতানা জানান, জিকে প্রজেক্টের আওতায় ভেড়ামারার দুটি ইউনিয়ন চাঁদগ্রাম ও বাহিরচরের ১ হাজার ৫৩০ হেক্টর ফসলি জমি রয়েছে। এর মধ্যে বোরো ধানের আবাদ ৬৩৫ হেক্টর, সরিষা আবাদ ১১৯ হেক্টর, বাদবাকি ভুট্টা, গমসহ অন্যান্য। ইতিমধ্যে কৃষকদের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছি। অনেককেই বিএডিসি সেচ প্রকল্পে আওতায় এনেছি।
ভেড়ামারার জিকে পাম্প হাউজের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, প্রতি বছর ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ অক্টোবর এই ১০ মাস সেচ প্রকল্পের কাজ চলে। এটি মূলত পদ্মা নদীর পানি দ্বারাই পরিচালিত হয়। কিন্তু বর্তমানে নদীতে বড় আকারের চর পড়েছে। পানির লেভেল ৫.৫ মিটারে নেমে এসেছে। যার কারণে পানি সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। আমরা ড্রেজিংয়ের কাজ চলমান রেখেছি। পানির লেভেল যদি ঠিক থাকে এবং নদীর ড্রেজিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়, তাহলে শীঘ্রই সেচ প্রকল্প শুরু করতে পারব।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//মার্চ ৪, ২০২৫//

Discussion about this post