চট্টগ্রাম কর্ণফুলীর জুলধা ইউনিয়ন পরিষদে জন্মনিবন্ধন, প্রত্যয়ন, জন্মসনদ ও ওয়ারিশ সনদে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অর্থ আদায় করছেন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা ও পরিষদ সংশ্লিষ্টরা। শুধু তাই নয়, ৪৫ দিন বয়স পর্যন্ত শিশুর জন্ম সনদ ফ্রি দেয়ার কথা থাকলেও সেখানেও নেয়া হচ্ছে টাকা।
তবে ভুক্তভোগীরা এমন অভিযোগ করলেও তা অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আমাদের প্রতিবেদক পরিষদে গিয়ে দীর্ঘ দুই ঘন্টা চেষ্টা করেও উদ্যোক্তার রুমে প্রবেশ করতে পারেননি। কেননা বুঝার উপায় নেই। এটা যে একটা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। ভেতরে টাকার লেনদেন। বাহিরে দরজা বন্ধ।’ অপরদিকে জুলধা এলাকার মোঃ হাসান আলী ও মোতালেব নামে দুই ভুক্তভোগি বলেন, ‘টাকা দিলে ভেতরে কাজ সেরে জানালা দিয়ে কাগজপত্র ছুড়ে দেন তাঁরা। না হলে কথা নেই। পরিষদে বসা লোকজনের যে ভাব তাতে মনেহয় পরিষদ যেন তাদের বাপ দাদার সম্পত্তি। ক্ষোভ প্রকাশ করে এমন মন্তব্য করতে করতে পরিষদ ছাড়লেন ওই দুজন।
ওদিকে সাংবাদিক পরিচয় জেনে কৌশলে এড়িয়ে যেতে যান পরিষদ সচিব সমীরণ বল । পরে জুলধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী নুরুল হক চৌধুরীর কাছে সেবা প্রতিষ্ঠানের দরজা বন্ধ করে কিভাবে লেনেদেন চলছে এই পুরো বিষয়টি উপস্থাপন করলে তিনিও একই সুরে কবিতা শোনালেন, ‘আপনি সচিব ও উদ্যোক্তার সাথে কথা বলুন। ওদের বক্তব্য নেন। ওরা কেন দরজা বন্ধ করল। কি কারণে কি করছে ভেতরে। প্রতিবেদক জানতে চাইলেন আপনি পরিষদের চেয়ারম্যান। আপনি বিষয়টি জানেন কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি অন্য দিকে চলে যান।
ইউনিয়নের তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘সবার কাছ থেকে সরকারি ফি নেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত ফি’র চেয়ে কিছু বেশি নিচ্ছে হয়তো। কারণ সরকার তো আমাদের বেতন দেয় না। এটুকু সার্ভিস চার্জ না নিলে আমরা চলবো কীভাবে? উদ্যোক্তা হোসেনের বিরুদ্ধে সেবাপ্রার্থীদের অভিযোগ তিনি পরিষদে বসে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবসা করছেন। মানুষের কথা শোনার চেষ্টা করেন না। যদিও পরিষদের বেশির ভাগ দেয়ালে ব্যাংক এশিয়ার পোস্টার সাটানো দেখা যায়। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনিও।
কয়েকবার চেষ্টা করার পর পরিষদ সচিব সমীরণ বলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। বাড়তি কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না। সরকারি নির্ধারিত ফি নেওয়া হচ্ছে। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে কি করছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানুষের ভিড় এ জন্য দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’ দরজা বন্ধ থাকলে সেবাগ্রহীতারা কিভাবে তাদের সমস্যার কথা জানাবে জিজ্ঞেস করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে জুলধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী নুরুল হক চৌধুরী বলেন, সরকারি নির্ধারিত ফি এর চেয়ে অতিরিক্ত কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না। ইউনিয়নের সব লোক আমার না। কিছু বিপক্ষের লোক নানা মিথ্যা অভিযোগ করছেন। সরকারি রেইটে টাকার রিসিভ দিয়ে কাজ করছি আমরা। যাদের কাছ থেকে বেশি টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ করতেছে, তাদেরকে আমার কাছে নিয়ে আসেন। আর কারো অভিযোগ থাকলে ইউএনও ডিসিকে জানাতে বলেন। এছাড়া কারো কথা পরোয়া করি না।
প্রসঙ্গত, সরকার নির্ধারিত ফি অনুযায়ী জন্মের ৪৫ দিন পর্যন্ত জন্মসনদ তুলতে কোনো টাকা লাগবে না। জন্মের ৪৫ দিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত ২৫ টাকা, সঙ্গে ১৫% ভ্যাট, পাঁচ বছর পরে ৫০ টাকা, সঙ্গে ১৫% ভ্যাট, জন্মতারিখ সংশোধনের জন্য আবেদন ফি ১০০ টাকা এবং ১৫% ভ্যাট, জন্মতারিখ ছাড়া নাম, বাবার নাম, মার নাম-ঠিকানা ইত্যাদি তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন ফি ৫০ টাকা ও ১৫% ভ্যাট, বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় তথ্য সংশোধনের পর সনদের কপি সরবরাহ করার জন্য কোনো ফি লাগে না এবং বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় নকল সরবরাহ করতে ৫০ টাকা ও ১৫% ভ্যাট লাগবে।
আর//দৈনিক দেশতথ্য//২৬ মে-২০২২//

Discussion about this post