কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: জেলা পরিষদ কুষ্টিয়ার সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল আজমের বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। তার এই দূর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে অফিসের স্টাফরাও ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। ষ্টাফরা তার বিরুদ্ধে মুখ খুললে তাদের বিরুদ্ধে উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের কাছে নালিশ করবেন বলেও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে গিয়ে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য মিলেছে। ওই অভিযুক্ত ব্যক্তি সাংবাদিকের উপস্থিতিতে টের পেয়ে সকল স্টাফদের ডেকে বলেন যখনই সাংবাদিক আমাদের অফিসে আসবে সবাই একসাথে হবেন আর বলবেন আমাদের স্যার অনেক ভালো মানুষ। এমন কথাই বললেন অফিসের এক ষ্টাফ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৫ বছর ধরে ডেপুটেশনে কর্মরত আছেন জেলা পরিষদ কুষ্টিয়ার সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল আজম। কুষ্টিয়া-২ ভেড়ামারা-মিরপুর আসনের সাবেক এমপি কামরুল আরফিনের বিয়াই পরিচয় দিয়ে দীর্ঘ নিয়োগ বাণিজ্য, ঘুষ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানা ধরনের অনিয়ম দুর্নীতির সাথে নিজেকে জড়িয়ে বনে গেছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়।
বিশ্বস্থ সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে ২০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ভাগ্নে মোঃ নাসমুদ্দোহাকে জেলা পরিষদের সাঁটলিপিকার পদে চাকুরী দেন সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল আজম। ঐ নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব ছিলেন তিনি। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই ভাগ্নেকে পরীক্ষার প্রশ্ন সরবরাহ করেন আজম। সেই প্রশ্ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মেধা তালিকায় স্থান করে নেন ভাগ্নে নাসমুদ্দোহা। মামার জোরে চূড়ান্ত তালিকায়ও স্থান পান তিনি। সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ পেতে যে বয়সসীমা নির্ধারণ করা আছে সেই বয়সসীমার খুব কাছাকাছি ছিলেন ভাগ্নে নাসমুদ্দোহা। সেজন্য তড়িঘড়ি করে চাকুরি নিতে মামাসহ তৎকালীন স্থানীয় সরকারের উপ- পরিচালক মৃনাল কান্তি দে, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলাম ও নির্বাহী কর্মকর্তা মুন্সী মনিরুজ্জামানকে ২০ লক্ষ টাকা ঘুষ হিসেবে দিতে হয় তাকে।
এদিকে মামার জোরে চাকুরি পাওয়ার মাত্র ৩ বছরের মধ্যে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সাঁটলিপিকার থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা বনে গেছেন নাসমুদ্দোহা। ২০২২ সালে তৎকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা অবসরে গেলে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা মুন্সি মনিরুজ্জামানের শেষ কর্মদিবসে নিয়ম বহির্ভূতভাবে নাসমুদ্দোহাকে দায়িত্ব দিয়ে যান মনিরুজ্জামান। নিয়ম রয়েছে, প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে দায়িত্ব পালন করতে হলে একজন কর্মকর্তাকে নিম্নমান সহকারী পদে ৩ বছর, উচ্চমান সহকারী পদে ৩ বছর ও প্রধান সহকারী পদে ৫ বছর চাকুরি করার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। তাছাড়া সাঁটলিপিকার থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পেতে গেলে অবশ্যই ১০ বছর চাকুরিরত থাকার নিয়ম রয়েছে। তবে নাসমুদ্দোহাকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দিতে এসব কোন নিয়মই মানা হয়নি।
কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ নাসমুদ্দোহার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, নিয়ম মেনেই তাকে প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর থেকে বেশি কিছু তিনি বলতে পারবেন না। সব বিষয়ে জানতে হলে দপ্তরের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) জয়নুল আবেদীন স্যারের সাথে কথা বলতে হবে।
এবিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নুল আবেদীনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তার দপ্তর থেকে জানা যায়, জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়ন পেতে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন।
বিষয়টি নিয়ে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল আজমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, অফিসে আসেন অফিসে বসে কথা বলব এবং সাবেক এমপি কামরুল আরফিনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরোও বলেন, তিনি আমার চাচাতো ভাইয়ের ভগ্নিপতি।
হাফিজ//দৈনিক দেশতথ্য//১৮ সেপ্টম্বর,২০২৪//

Discussion about this post