Print Date & Time : 13 May 2025 Tuesday 12:07 am

ঝিনাইদহে পুকুর সেচা পানিতে ধান ও বীজতলা নষ্ট করার অভিযোগ

ঝিনাইদহে পুকুর সেচা পানিতে কৃষকের পাঁকা ধান ও ধান বীজতলা নষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার সকালে সদর উপজেলার বাথপুকুরিয়া গ্রামের মাঠে, ৪০ বিঘা জমির পাঁকা ধান ও ধান বীজতলা (পাতো) পানিতে তলিয়ে যাওয়ার অভিযোগে নজরুল নামে এক কৃষক বাদি হয়ে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাদপুকুরিয়া গ্রামের মাঠে পাঁকা ধান কাটা চলছে। চারিদিকে জমির মাটি শুকুনো থাকার কারনে সকল কৃষক মাঠেই ধান শুকায়ে বিচুলি (গরুর খাবার) করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বর্ষাকালে মাঠের পানি নিষ্কাসনের জন্য যে খাল ব্যবহার করা হয়, সেই খাল দিয়েই মাঠে ঢুকছে পানি। ওই পানিতে তলিয়ে গেছে পাঁকা ধান ও বীজতলা। কয়েকজন কৃষক ধানবীজতলার পানি সেচে চারাগুলো বাঁচানোর চেষ্টা করছে। এগুলো বৃষ্টির কোন পানি নয়, পুকুর সেচা পানি। পুকুর সেচা বন্ধ না হলে ওই মাঠের কৃষকেরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাদপুকুরিয়া গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলামের লিখিত অভিযোগে জানা যায়, তিনিসহ মাঠের কৃষকেরা পাঁকা ধান কাটার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এবতাবন্থায় ডহর-পুকুরিয়া গ্রামের ওমর আরী ভূইয়া, করম আলী ভূইয়া, রেকমত আলী, কেরামত আলী এবং সামসুদ্দিন’রা দীর্ঘ ১৪/১৫ দিন ধরে রাতের আঁধারে পুকুর সেচা পানি কৃষের পাঁকা ধানক্ষেতে দিয়ে আসছে। কৃষকেরা বারবার ধানি জমিতে পানি দিতে নিষেধ করলেও কোন কর্ণপাত করেনি। এরপর তারা জমিতে পানি না ঢোকার জন্য খালের মুখে বাঁধ দেয়। তারপাও রাতের আঁধারে বাঁধ কেটে পাঁকা ধানক্ষেতে পানি দিয়ে আসছে। পরিকল্পিত ভাবে পুকুরের পানি পাঁকা ধানক্ষেতে যাওয়ার কারনে ওই মাঠের কৃষকদের ১২ লক্ষ টাকা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়,পুকুর মালিকেরা প্রভাবশালী হওয়ায় পেশি শক্তির প্রভাব ঘাটিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরেই ধান কাটার মৌসুমে পুকুর সেচে তাদের জমিতে পানি দিয়ে একই রকম ক্ষতি করে আসছে।
কৃষক আব্দুল কাদের ঢাকা পোস্টকে জানান, উপর থেকে কোন বৃষ্টি নাই। ভুইয়ারা পুকুর সেচতেছে, তাদের অনুরোধ করে বলেছিলাম, চাচা আপনারা পুকুর সেচা কয়টা দিন বন্ধ করেন। পাকা ধানগুলো গুছায়ে নিই, চারটে বিচলী হবে। তারপরও তারা কোন কথা শুনেনি। মাঠে ধান কাটতে এসে দেখি পানিতে ধান গুলো তলিয়ে গেছে, ধানবীজও নষ্ট হয়ে গেছে।

একই মাঠের কৃষক আজিজুল , আব্দুল গাজি, শ্রী সন্তোষ কুমার, মোঃ আতা মিয়া ও নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, মাঠে যখন নতুন পানি দেখি তখনিই বুঝতে পারি পুকুর সেচা পানি মাঠে ঘুটছে। তখনিই আমরা সবাই মিলে ভূইয়াদের পুকুরের পানি পাঁকা ধানক্ষেতে দিতে নিষেধ করি। ভেবেছি আর হয়তো পানি দিবে না। কিন্তু সকালে ধান কাটতে এসে দেখি ধানক্ষেতের মধ্যে হাটু সমান পানি। তলিয়ে গেছে বীজতলা। এখন ধানগুলো কোনরকম রক্ষা করতে পারলেও বিচুলী হবে না, আবার শ্রমিক খরচও বেশি লাগবে। এই অবস্থায় ১২/১৩ লক্ষ টাকার ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন তারা।


অভিযুক্ত পুকুর মালিকেরা ঢাকা পোস্টকে জানান, বিগত ১০ দিন আগেই তাদের পুকুর সেচা হয়ে গেছে। পুকুরের পানি ঢুকে ধান নষ্ট হচ্ছে, কৃষকেরা তাদের কাছে এমন কোন অভিযোগ করেনি। বর্তমানে পাশের পুকুর মালিকেরা পুকুর সেচে পানি বাহিরে দিচ্ছে।

ডাকবাংলা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ তৌহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভুক্তভোগিরা থানায় লিখত অভিযোগ করলে, থানা থেকে আমার কাছে প্রেরণ করেন। যার সরোজমিন পরিদর্শন করে সত্যতা পাওয়া গেছে। কৃষকের পাঁকা ধান ও বীজতলা ক্ষতি হয়েছে। বুঝাই যাচ্ছে পুকুর মালিকেরা যোগসাজসে পুকুর সেচে এবং ওই পানির কারনেই এমন ক্ষতি হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

খালিদ সাইফুল /দৈনিক দেশতথ্য