চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের খোয়াজনগর আজিমপাড়া এলাকার আয়ুব বিবি সড়কের প্রবেশমূখ সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী ও যানবাহন চলাচলে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এলাকাবাসী উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, এ সড়কের প্রবেশমূখ প্রশস্ত করে ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচল উপযোগী করা খুবই প্রয়োজন। এর কারণে আবার সড়কের অবকাঠামোগত দুর্বলতা, নাকি সচেতনতার অভাব—কোনটা বেশি দায়ী সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনেও প্রশ্ন জেগেছে।
যদিও স্থানীয়রা বলেছেন, ‘অদক্ষ, অপ্রাপ্তবয়স্ক ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞ চালক, যানবাহনের বেপরোয়া গতি এবং ট্রাফিক আইনের প্রতি পথচারীদের অসচেতনতা বৃদ্ধির কারণে এ সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা।
জানা যায়, এ সড়কের দুপাশে ভাসমান দোকান ও ব্যাটারিচালিত রিকশা দখল করে রাখেন আয়ুব বিবি সড়কের প্রবেশমূখ। ফলে, পথচারি ও ছোট ছোট যানবাহনগুলোকে প্রায় দশ ফুটের এই জায়গাটুকু চরম ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয়। অন্যদিকে, সেতু সংলগ্ন এ সড়কের চৌরাস্তা মুখে কোন স্পীড ব্রেকার ও সড়কে সাদা দাগ কেটে ভাইব্রেটর না থাকায় দ্রুত গতিতে যানবাহন চলতে গিয়ে প্রায়শ দুর্ঘটনা ঘটছে।
এতে সাধারণ পথচারিদের ভোগান্তি বেড়েছে। পাশাপাশি স্কুল কলেজের শত শত শিক্ষার্থীর অভিভাবককেও সড়কে ঝূঁকি বাড়ায় ভাবিয়ে তুলেছে। গত এক বছর যাবত এই অবস্থা চলে আসলেও এটি নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই সড়ক ও জনপদ বিভাগের। উপজেলা প্রশাসন কিংবা এলজিইডিও নীরব। যদিও এলাকাবাসীর দাবি, বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটার আগে এটির স্থায়ীভাবে সমাধান তৈরি হওয়া।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আয়ুব বিবি সড়কের প্রবেশ মুখের দু’পাশে ভাসমান একাধিক ঝুঁপড়ি দোকান। চোর রাস্তার মোড়ে এলোমেলো ব্যাটারি চালিত রিক্সা ও সিএনজি। পাশে সেতু ও খাল। রাস্তা প্রশস্ত না হলেও এ সড়কের প্রবেশমূখে মিলিত হয়েছে আজিমপাড়া সড়ক। অন্যপাশে, আয়ুব বিবি কলেজ রোড। মাঝখানে চরপাথরঘাটার প্রধান সিডিএ সড়ক। কিন্ত জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ঝূঁকিপূর্ণ আয়ুব বিবি সড়কের প্রবেশমূখ।
আশেপাশেই রয়েছে অনেকগুলো বহুতল ভবনের বাড়িঘর। রয়েছে ব্যাংক-বীমা এনজিও, আজিম-হাকিম স্কুল, আয়ুব বিবি স্কুল এন্ড কলেজ ও নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কোচিংসেন্টারসহ দোকানপাট। ফলে, ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সি নারী-পুরুষ।
স্থানীয় ব্যবসায়ি মো. শাহাজাহান বলেন, ‘গতকালও আয়ুব বিবি কলেজ রোডে রাস্তার মাথায় ৩ রাস্তার মোড়ে বাস-সিএনজি দূর্ঘটনায় এক ছাত্রী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে।কিছু দিন আগেও একটি শিশুিএ জায়গায় দুর্ঘটনায় মারা গেছে। এখানে প্রায়শ প্রতিদিনই যানবাহন ও চলাচলরত মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।’
সিএনজি চালক শফি ও ফারুক বলেন, ‘সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আমাদের যেতেও ভয় হয়। এ সড়কে স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের কথা চিন্তা করে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী। বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা চাইলে একটি সমাধান ও নিরাপদ সড়কের ব্যবস্থা করতে পারেন।’
চরপাথরঘাটা এলাকার বাসিন্দা সেলিম খান বলেন, ‘আয়ুব বিবি সড়কের প্রবেশ মূখ খুব ঝূঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। রাস্তার জায়গা দখল করে দুপাশে সড়ক দোকান। এতে এ সড়কে থাকা সেতুর উপর দিয়ে দ্রুত গতিতে যান চলাচল করে। একই সময়ে চৌরাম্তার মুখে লোকজনের চলাচলের নানা দুর্ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
চরপাথরঘাটা এলাকার ইঞ্জিনিয়ার সেলিম উদ্দিন ও ফারুক হোসাইন জানান, ‘অবকাঠামোগত দুর্বলতার থেকে অসচেতনতা অনেক বেশি দায়ী। গ্রামের মূল সড়কগুলোর পাশে অধিকাংশই ভাসমান হকার, সিএনজি রিকশা ও ট্যাক্সি স্ট্যান্ড, অস্থায়ী বাজার ইত্যাদি দখল করে আছে সড়ক। সর্বোপরি চালক ও পথচারী উভয়ের সচেতনতা দরকার। পাশাপাশি এ সড়কে একজন ট্রাফিক পুলিশ যথাযথ দায়িত্ব পালন করলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব।’
খোয়াজনগর এলাকার জনপ্রতিনিধি আবদুন নুর বলেন, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে হলে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি সড়ক প্রশস্ত করে ফুটপাত দখলমুক্ত করা, পথচারীদের সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
কর্ণফুলী উপজেলা এলজিইডি অফিসের প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘সিডিএ সড়কটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের। আমরা চাইলেও কিছু করতে পারি না। কারণ আয়ুব বিবি সড়কের ভেতরের রাস্তাটা হয়তো এলজিইডির।’
দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, ‘প্রধান সড়কে রোড ডিভাইডার ও স্পিড ব্রেকার চাইলেই দেওয়া যায় না। সড়ক ও জনপদ বিভাগের নানা নিয়ম রয়েছে। তবুও স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও স্থানীয়দের সুবিধার জন্য যদি কিছু করার থাকে তাহলে আলোচনা করে বিবেচনা করা যেতে পারে।’
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//

Discussion about this post