যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে মির্জাগঞ্জের পিঁপড়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি, পায়রা নদী ভাঙতে ভাঙতে বিদ্যালয়টির একেবারে কিনারে এসে ঠেকেছে। ঘটতে পারে প্রাণহানিও। এমনই অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত শ্রেণিকক্ষে বসে পাঠদান করেছে কমলমতি শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়টির নামে নিরাপদ স্থানে জমি থাকা সত্ত্বেও দুই জমিদাতার রশি–টানাটানিতে ভাঙনকবলিত এলাকা থেকে স্থানান্তর হচ্ছে না বিদ্যালয়টি । দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়টি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯২৬ সালে স্থাপিত হলেও বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয় ১৯৭৩ সালে । একসময় ছিলো বিদ্যালয়টির পাকা ভবন, ছিলো সাজানো-গোছানো আসবাবপত্র । শিক্ষার্থীদের কোলাহলে মুখর থাকত বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ এবং আশপাশ এলাকাগুলো । এখন যেকোনো মুহূর্তে নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে অনেক অভিভাবকরা সন্তানদেরকে পাঠাচ্ছেন না বিদ্যালয়ে । নদীতে ভেসে যাওার ভয়ে বিদ্যালয়টি ছেড়ে দিচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থীরা বর্তমানে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪১ জন। শিক্ষকদের ৭ টি পদ থাকলেও বর্তমানে শিক্ষক রয়েছে ৩ জন ।
দুই পক্ষের সমন্বয়হীনতায় ইতিমধ্যে ফেরত গেছে ভবন নির্মাণের জন্য সরকারি বরাদ্দের ২৫ লাখ টাকা। নিজ নিজ দান করা জমিতে ভবন নির্মাণের দাবিতে অনড় দুই দাতা। এতে চরম ঝুঁকি নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্থানীয় লোকজন জানান, পায়রা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে অনেকবার বিলীন হয়েছে বিদ্যালয়ের ভবন । ২০১৭ সালে বিদ্যালয়ের ভবনটি নদীভাঙনের কবলে পড়লে পাকা দ্বিতল ভবনটি নিলামে বিক্রি করে পাশের জমিতে একটি টিনশেড ভবন তৈরি করে সেখানে পাঠদান অব্যাহত রাখা হয়। বছর যেতে না যেতেই ২০১৮ সালে আবার বিদ্যালয়টি ভাঙনের কবলে পড়লে সরিয়ে নেওয়া হয় অন্য আরেকটি জমিতে। কিন্তু সেখানেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না এখন । নদী থেকে বিদ্যালয়টি ছিলো অনেক দূরে এখন নদীভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় দূরত্ব কমতে কমতে মাত্র ২০-২৫ ফুটের মতো বাকি রয়েছে । টিনশেড ভবনটির পরে কেবল একটি রাস্তা, তার পরেই নদী এসে ঠেকেছে । বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে বিদ্যালয়টির মেঝেতে । এতে শিক্ষার্থী,শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক ,।
বিদ্যালয়সংলগ্ন যে রাস্তাটির কথা বলা হয়েছে , সেটি মূলত পানি উন্নয়ন বোর্ডের গ্রাম রক্ষা বেড়িবাঁধ । নদীভাঙনের তীব্রতা এখন এতটাই বেশি যে সেই বাঁধেও লেগেছে ধস । যখন-তখন মাটির এই বাঁধ ধসে নদী গ্রাস করে নিতে পারে বিদ্যালয়টিকে।
বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব রক্ষার্থে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে স্থানীয় আইনজীবী ইউসুফ আলী ও ব্যবসায়ী মো. সাহাবুদ্দিন খান পৃথক স্থানে যথাক্রমে ৫০ ও ৬০ শতাংশ জমি বিদ্যালয়ের নামে দান করেছেন। ইউসুফ আলী ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ছিলেন । অপর দিকে মো. সাহাবুদ্দিন খানের বাবা লতিফ খান ও ছিলেন বিদ্যালয়টি পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি। নদীভাঙন থেকে বিদ্যালয়টি রক্ষা করতে দুজনই তাঁদের নিজ নিজ দান করা জমিতে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ তথা স্থানান্তরের দাবি জানিয়ে আসছেন । বারবার বৈঠক করেও তাঁরা কোনো ঐকমত্যে আসতে পারেননি । ২০১৯ সালে পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট একটি সেমিপাকা ভবন নির্মাণের জন্য ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। স্থান নির্ধারণ নিয়ে দুই পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারি বরাদ্দের সেই টাকা ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে সরকারি কোষাগারে ফেরত যায়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুজিত মজুমদার বলেন, ‘আমরা শিশুদের নিয়ে সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকি । ভবনটি নদীগর্ভে চলে যেতে পারে যেকোনো সময়। এতে খোয়া যেতে পারে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র । ঘটতে পারে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের প্রাণহানি । দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয় ভবনটি স্থানান্তর জরুরি হয়ে পড়েছে।’জমিদাতা মো. ইউসুফ আলী বলেন, ‘আশা করি, শিগগিরই এ ব্যাপারে আমরা একটি সমাধানে পৌঁছাতে পারব।’
অন্য জমিদাতা মো. সাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘জমি দিয়েছিলেন আমার বাবা মৃত আবদুল লতিফ খান। তিনি চেয়েছিলেন, তাঁর দান করা জমিতে বিদ্যালয়ের ভবনটি নির্মিত হোক। আমাদের দান করা জমিতেই বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রিয়াজুল হক বলেন, ‘দুই জমিদাতা সদস্যদের নিয়ে বেশ কয়েকবার সমঝোতার চেষ্টা করলে ও ব্যর্থ হয়েছি । এখনো চেষ্টা চলতেছে। আরও কিছুদিন দেখব। যদি সমঝোতা না হয়, উপজেলা শিক্ষা কমিটির সঙ্গে বসে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।’
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ৩ আগস্ট ২০২৩