টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে গোটা সিলেট নগরী। মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে বেশিরভাগ এলাকাই পানিতে তলিয়ে গেছে।
সড়ক, বাসাবাড়ি, দোকান পাট সব পানিতে একাকার । পানি ঢুকে পড়েছে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়ও। বেড়েছে সুরমা নদীসহ জেলার সবকটি নদী খাল বিলের পানি।
তিন দিন ধরে সিলেটে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। শুক্রবার থেকে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। শুক্রবার রাত থেকেই পানি ঢুকতে শুরু করে নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে।
শনিবার সকালের মধ্যে তলিয়ে যায় নগরীর বেশিরভাগ এলাকা।শনিবার সকাল বেলা সাড়ে ১২টায় এ রিপোর্ট লেখার সময়ও বৃষ্টি হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর এমএজি ওসমানী মেডিকেলে কলেজ হাসপাতাল, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কাজলশাহ, শাহজালাল উপশহর, দরগামহল্লা, কালীঘাট, বাগবাড়ি, কানিশাইল, লামাপাড়া, লালা দিঘিরপাড়, মাছুদিঘিরপাড়, বাদামবাগিছা, শাহপরান, কুয়ারপাড় উপশহর, সোবহানীঘাট, যতরপুর, শিবগঞ্জ, মাছিমপুর, কামালগড় ও দক্ষিণ সুরমার পিরোজপুর, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনসহ সিলেট নগরের বেশিরভাগ এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে বাসাবাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলার সবকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। নিচু এলাকার ঘর বাড়ীতে পানি ঢুকে পড়েছে।
নগরীর পাঠানটুলা এলাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক এবং ষ্টেশন রোড লাউয়াই সড়কে ও কোমড় পর্যন্ত পানি জমেছে বলে জানাগেছে। ফলে এই সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ মো সজিব হোসাইন জানান, শুক্রবার সকাল ৬ টা থেকে শনিবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ৩৫৭.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া আজ সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১০২ মিলিমিটার।
নগরীর শাহজালাল উপশহর এলাকার বাসিন্দা আবু তুরাব বলেন – আমরা একটি ভবনের ২ তলায় থাকি। কিন্তু নিচ তলায় রাতে পানি ঢুকে পড়েছে। এর বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। আমাদের পাড়ার অধিকাংশ বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।
নগরীর অন্যতম উঁচু এলাকা শাহী ঈদগাহ। শুক্রবার রাতেই এই এলাকার বেশিরভাগ বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে।এই এলাকার বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, রাতেই বাসায় পানি ঢুকেছে। সময় সময় পানি বাড়ছে। এ নিয়ে চলতি বছরে তিনবার ঘরে পানি ঢুকলো।
শাহী ঈদগাহর মতো নগরীর উঁচু এলাকা টিলাগড়, মেজরটিলা এলাকারও অনেক বাসায় পানি ঢুকে পড়েছে। আর নিচু এলাকার অনেক রাস্তায় কোমর পানি হয়ে গেছে।
নগরীর দরগাহ মহল্লার পায়রা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক মুহাম্মদ আমজাদ হোসাইন বলেন, টানা বর্ষনে পায়রা আবাসিক এলাকার বাসা বাড়ীতে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে করে স্হানীয় বাসিন্দাদের দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচ তলা পানিতে তলিয়ে গেছে । এতে ব্যাহত হচ্ছে সেবা কার্যক্রম। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
ওসমানী হাসপাতালের চিকিৎসক অরূপ রাউৎ জানান, ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এবং সকল ছাত্রাবাসের নিচতলা অবধি পানি উঠে গেছে। হাসপাতালের সামনের সড়কও জলের নিচে। হাঁটু পানি ভেঙেই ডাক্তাররা ডিউটিতে এসেছেন।
ভোরে নিজ এলাকায় জলাবদ্ধতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম। তার নিজের বাসাও জলমগ্ন। ভিডিওতে দেখা যায়- ফরহাদ চৌধুরীর বাসার নিচ তলায় পানি থৈ থৈ করছে। আসবাবপত্র অর্ধেক ডুবে আছে পানিতে।
কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মহানগরের ছড়া, নালা ও খালগুলো যথাসময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হলেও আমাদেরকে ফের জলাবদ্ধতার শিকার হতে হয়েছে। সুরমা নদী খনন না করলে এ ভোগান্তি থেকে আর রেহাই পাওয়া সম্ভব নয়।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ভারি বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি কমলে পানি নেমে যাবে।
তিনি বলেন, ড্রেন নালা পরিষ্কার রাখতে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে। এছাড়া সুরমা নদী খনন করানো জরুরি বলে তিনি জানান ।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ/