ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে অপেক্ষারত ক্ষিপ্ত যাত্রীরা। এমন নানা অভিযোগ তুলে প্রায় শতাধিক যাত্রী রেলস্টেশনে পাথর নিক্ষেপসহ হামলা করে।
বৃহস্পতিবার রাঁতে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি রেলস্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। এসময় স্টেশন মাস্টারসহ অন্যদেরও লাঞ্ছিতের চেষ্টা করেন উত্তেজিত যাত্রীরা।
ট্রেনের যাত্রী ও রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ভাড়া আন্তঃনগর ট্রেনের আর সেবার মান লোকাল ট্রেনের চেয়েও খারাপ। এছাড়াও ঢাকার কমলাপুর থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত চলে আন্তঃনগর টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেন। ফলে রাজধানী ঢাকা, টাঙ্গাইল ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার লোকজন সবচেয়ে বেশি এ ট্রেনে চলাচল করে। কিন্তু অন্যান্য লোকাল ট্রেনের চেয়ে আন্তঃনগর টাঙ্গাইল ট্রেনে ভাড়াও বেশি। অথচ এ আন্তঃনগর ট্রেনের সেবার মান লোকালের চেয়েও খারাপ অবস্থা। প্রতিদিন কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বিকেল ৬টায় এ আন্তঃনগর ট্রেনটি ছেড়ে আসার কথা থাকলেও ট্রেনটি ছাড়ে প্রায় ৭টায়। সেখানে ঘন্টাখানেক বসে থাকার পরও প্রায় প্রতি রেলস্টেশনে ঘন্টাখানেক ধরে দাড়িয়ে থাকে এ আন্তঃনগর ট্রেনটি। অথচ এ ট্রেনকে আটকে রেখে পিছন থেকে রাজশাহীগামী ও সামনে থেকে ঢাকাগামী ট্রেনগুলো অবাধে চলে যাচ্ছে। প্রতিদিনই ক্রসিংয়ের নামে কোনো না কোনো স্টেশনে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রাখে এ আন্তঃনগর ট্রেনটি। যাত্রীদের অভিযোগ এ ট্রেনকে অবহেলার চোখে দেখেন স্টেশন মাস্টাররাও। ৬টায় ছাড়লে ট্রেনটি ৮টায় টাঙ্গাইল পৌছানোর কথা থাকলেও আরো ৩ ঘন্টা বিলম্বে পৌছায় এ অন্তঃনগর ট্রেন। ফলে এ আন্তঃনগর টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনকে এতিম ট্রেন বলেও অবিহিত করেন অনেক যাত্রী। বেশি টাকা ভাড়া দিয়ে এ আন্তঃনগর ট্রেনে এলেও কম টাকা ভাড়া দিয়ে আগে গন্তব্যে চলে যাচ্ছে অন্য লোকাল ট্রেনগুলো। এ কারণে চাপা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ওই আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রীরা। গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৬টায় কমলাপুর থেকে এ ট্রেনটি ছাড়ার কথা থাকলেও ১ ঘন্টা বসিয়ে রেখে ট্রেন ছাড়ে ৭টার দিকে। এরপর গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলস্টেশনে ক্রসিংয়ের নামে দীর্ঘ সময় যাত্রা বিরতি দেওয়া হয়। পরে রাঁত ৯টার দিকে ওই ট্রেনটি গাজীপুরের কালিয়াকৈর বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি রেলস্টেশনে পৌছে। সেখানেও পূর্বের একই অজুহাতে রেলস্টেশন মাস্টার ট্রেনটি আটকে দেয়। এটা বসিয়ে রেখে একের পর এক দুরপাল্লার ট্রেন ও লোকাল ট্রেন ছেড়ে দেন স্টেশন মাস্টার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন ওই ট্রেনের প্রায় দুই শতাধিক যাত্রী। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে ক্লান্ত ওই ট্রেনের যাত্রী শিশু, নারী, বৃদ্ধসহ নানা শ্রেনী পেশার মানুষ। রাঁত সাড়ে ৯টার দিকে অপেক্ষারত উত্তেজিত হয়ে প্রায় শতাধিক ট্রেন যাত্রী স্টেশন ঘেরাও করে। এসময় তাদের অনেকেই ওই রেলস্টেশন লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করে। পরে উত্তেজিত যাত্রীরা স্টেশন মাস্টার কামরুল হাসানের অফিস কক্ষে ঢুকে কম্পিউটার ভাংচুরের চেষ্টা করে। এসময় তারা হামলা চালিয়ে ওই স্টেশনের দরজা-জানালা ভাঙচুর করার চেষ্টা করে। এক পর্যায় স্টেশন মাস্টার কামমরুল হাসানকেও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজসহ লাঞ্ছিত করার চেষ্টাও করে উত্তেজিত ট্রেন যাত্রীরা। খবর পেয়ে জয়দেবপুর রেলওয়ে ফাঁড়ি পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তেজিত যাত্রীদের বুঝিয়ে শান্ত করে। এরপর রাঁত প্রায় ১০টার দিকে ওই ট্রেনটি বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি রেলস্টেশ ছেড়ে চলে যায়।
তবে যাত্রীদের অভিযোগ, আন্তঃনগর ট্রেনে বেশি টাকা ভাড়া দিয়ে এ ট্রেনে চলাচল করছি। কিন্তু এ ট্রেনের সেবার মান অন্য লোকাল ট্রেনের চেয়েও খারাপ অবস্থা। এছাড়াও আন্তঃনগর টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনকে যেন অবহেলা না করা হয়। এটি যেন সময় মতো তার গন্তব্যে পৌছানোর দাবী যাত্রীদের।
জয়দেবপুর রেলওয়ে ফাড়ি পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শাহ আলম জানান, আমি ও আমার সঙ্গীও ফোর্স নিয়ে ওই রেলস্টেশনের পাশে মানিক মিয়া নামে এক কলেজ ছাত্রের লাশ উদ্ধার করতে যাই। ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের লাশ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়। এসময় খবর পেয়ে ওই রেলস্টেশনে গিয়ে উত্তেজিত যাত্রীদের বুঝিয়ে শান্ত করা হয়।
বঙ্গবন্ধু হাইটেক রেলস্টেশন মাস্টার কামরুল হাসান জানান, সিগনাল না পেয়ে ট্রেনটি ছেড়ে দিলে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটবে। এজন্য ওই ট্রেনটি স্টেশনে আটকে রাখা হয়। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ ও দুরপাল্লার ট্রেনগুলো চলাচলের সময় ওই আন্তঃনগর ট্রেনটি কিছুক্ষণ আটকে রাখা হয়। এটা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ। কিন্তু যাত্রীরা উত্তেজিত হয়ে স্টেশন ঘেরাও করে এবং অফিসের কম্পিউটারও ভাংচুরের চেষ্টা চালায়। তবে এ ঘটনাটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এব্যাপারে জানতে পাকশী বিভাগের রেলওয়ে প্রকৌশলী বীরবল মন্ডলের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তবে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি নন বলে তিনি কল বিচ্ছিন্ন করেন।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ/

Discussion about this post