অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ হাসনা ফারুকীর বদলীতে অশ্রুসিক্ত হাওরের অধিকাংশ নারী। সম্প্রতি তিনি কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল মেডিকেল কলেজের সহকারী রেজিষ্টার হিসেবে বদলী হয়েছেন।
সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারী তিনি সহকারী সার্জন পদে অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেছিলেন। এরপর থেকে হাওরের প্রান্তিক জনগোষ্টীকে তিনি নিরলস ভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছিলেন।
অনেকের হৃদয়ে তিনি স্থান করে নিয়েছিলেন একজন জনবান্ধব মমতাময়ী চিকিৎসক হিসেবে। তিনি চলে যাওয়াতে হতাশায় ভূগছেন হাওরের নারীরা।
জান্নাতুল ফেরদৌস (২৫) নামের এক মহিলা জানালেন, আমার বৃদ্ধা মা অসুস্থ থাকা অবস্থায় মাতৃস্নেহে তিনি আমার মায়ের চিকিৎসা করে সুস্থ্য হতে সহযোগিতা করেছেন। আমি তাকে বিদায় জানাতে এসেও পাইনি। কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, হাসনা ফারুকীর মত চিকিৎসক আবার অষ্টগ্রামে আসবেন কিনা আমি জানিনা।
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও প্রায় আড়াই লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত এক হাওর জনপদ কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম। এই বৃহত্তর জনগোষ্টীর একমাত্র আশ্রয়স্থল অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
২০১৩ সালে এ হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবলের অভাবে দশ বছর পরে ৩১শয্যার জনবল নিয়েই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এ হাসপাতাল।
এখানে কোন চিকিৎসক এসে থাকতে চাননা। যেখানে কোন চিকিৎসক যোগদানের আগেই বদলীর চিন্তা মাথায় নিয়ে আসেন সেখানে ডাঃ হাসনা ফারুকী যোগদানের পর থেকে নিরলস ভাবে কাজ করে গেছেন। হাওরের নিরন্ন মানুষের সাথে মিশেছেন আপন জনের মত। তিনি এখানে নরমাল ডেলিভারী থেকে শুরু করে রোগীদের সেবা দিয়েছেন ঠিক মাতৃস্নেহে।
তিনি শুধু এক চিকিৎসকই নন তিনি একাধারে একজন ভাল উপস্থাপিকা, ভাল গায়িকা। এজন্য বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণেও ছিল তার পদচারনা। তাই তার এ বদলিতে উপজেলার সাংস্কৃতিক অঙ্গণেও বিরাজ করছে নিরব শূন্যতা।
এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুল্লাহ-আল-শামীম এ প্রতিনিধিকে জানান, আমি হাসনা ফারুরীর সাথে মাত্র ২০দিন কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এসময়টাতে সকল কাজেই আমি তাকে পাশে পেয়েছি। নরমাল ডেলিভারীতে তিনি সর্বোচ্চ সময় নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে কাজ করেছেন । আমি বিজয়ের মাসের আগেই অষ্টগ্রামে ওটি চালু করতে চাই। এসময়ে তার মত একজন আন্তরিক ও অভিজ্ঞ চিকিৎসককে আমার সহকর্মী হিসেবে পেলে আমি যেমন উপকৃত হতাম তেমনি উপকৃত হত অষ্টগ্রামের সাধারণ মানুষ।
এ বিষয়ে ডাঃ হাসনা ফারুকী এ প্রতিনিধিকে বলেন, যদিও প্রথম দিকে হাওরে আসতে ভয় পেতাম কিন্তু এখন আমি হাওরের মায়ায় পড়ে গেছি। হাওর ছেড়ে এখন আর যেতে ইচ্ছে করছেনা শুধু উচ্চ শিক্ষা জনিত কারনে, আমার ক্যারিয়ারের স্বার্থে এ বদলী মেনে নিতে হচ্ছে। এফসিপিএস শেষ করে বড় কোন পদে গিয়ে আবারও এই হাওরে এসে, হাওরবাসীর সেবায় নিজকে বিলিয়ে দেবার ইচ্ছা রাখি। এজন্য আমি সকলের দোয়া চাই।
খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ২৫ আগষ্ট ২০২৩