সুনামগঞ্জে পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নে ভিজিএফ এর চাল বন্টনে অনিয়ম, বরাদ্ধকৃত চালের কিছু অংশ কালোবাজারে বিক্রি এবং ইউপি সদস্যার সাথে অসদাচনের অভিযোগে চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
সোমবার (২৬ জুন) সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের বাংলোতে অভিযোগ দায়ের করেছেন পরিষদের ১ ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্যা তানজিনা বেগম। অভিযোগে চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা ও দফাদার লিলু মিয়াকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগে প্রকাশ, পবিত্র ইদুল আযহা উপলক্ষ্যে সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নে ১০ কেজি হারে ১৪৩৮ জন অতি দরিদ্র নাগরিককে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়।
বরাদ্দকৃত উক্ত চাল আনুপাতিক হারে বন্টনের জন্য ইউপি সদস্যা হিসেবে তানজিনা বেগমকে মাত্র ৮০টি কার্ড প্রদান করেন চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা।
সোমবার সকাল ১০ টা থেকে প্রত্যেক ইউপির সদস্য সদস্যা ও চেয়ারম্যানের বরাদ্দকৃত কার্ডের অনুপাতে কার্ড গ্রহীতাদেরকে ভিজিএফ এর চাল বিতরন শুরু করেন চেয়ারম্যান।
কিন্তু চাল বিতরনকালে পরিষদের কোন সদস্য সদস্যাদেরকেই তিনি ঘটনাস্থলে রাখেননি। এ সময় প্রচলিত বাটখারার পরিবর্তে চেয়ারম্যান তার প্রতিভূ জালাল মিয়ার মাধ্যমে একটি প্লাস্টিকের বালতি দ্বারা চাল প্রদান করেন।
চাল বিতরণের সময় প্রত্যেকেই ১০ কেজির স্থলে ৮ কেজি ও সাড়ে ৮ কেজি করে দেয়া হয়েছে। এব্যপারে চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা বলেন ক্যারিং খরচের জন্য ইচ্ছেকৃতভাবে ওজনে চাল কম দিচ্ছেন।
সোমবার বিকেলে চেয়ারম্যান গ্রাম পুলিশ সদস্যা মিনারানীকে তানজিনার কাছে পাটিয়ে অফিসে গিয়ে তার প্রস্তুতকৃত মাস্টাররোলে স্বাক্ষর করার জন্য চাপপ্রয়োগ করেন।
ইউপি সদস্যা তানজিনা বেগম অফিসে গিয়ে চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা ও ১নং ওয়ার্ডের সদস্য আফসান পারভেজকে দেখতে পান।
তানজিনা চেয়ারম্যানের পাঠানো মাস্টাররোলে স্বাক্ষর না করায় আমির হোসেন রেজা ও গ্রাম পুলিশ লিলু মিয়া অফিসের সাঁটার ফেলে তাকে তালাবদ্ধ করে মারপিটের জন্য উদ্যত হন। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান তানজিনার কাছ থেকে তার স্বাক্ষরিত ৬টি ভিজিএফ কার্ড জোরপূর্বকভাবে কেড়ে নেন। তারা তানজিনা বেগমকে খুন করার হুমকী দিয়ে অশালীন ভাষায় গালিগালাজও করেছেন বলে অভযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফলে ৬ জন কার্ডধারী তাদের বরাদ্দকৃত চাল পায়নি। এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, চাল বন্টনের সময় ইউপি সদস্যদের অনেকেই ছিলেন। অনেকেই মাস্টাররোলে স্বাক্ষর দিয়ে গেছেন। আর যারা উপস্থিত ছিলেননা তারা চেয়েছিলেন নিজেরা ভাগ ভাটোয়ারা করে চালগুলো নিয়ে নেবেন।
আমি না দেওয়ায় তারা আমার উপর অভিযোগ করেছেন। পরিষদের সদস্যা তানজিনা বেগম রাগ করে মাস্টাররোলে স্বাক্ষর দেননি বলেও জানান তিনি।
তানজিনা বলেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ফোন করলে তিনি কল রিসিভ না করায় জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানায়। তাঁর নির্দেশমতো সোমবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের বাসভবনে গিয়ে অভিযোগটি দাখিল করি।
সুরমা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান খুরশেদ আহমেদ ও মাজেদা বেগম বলেন,চেয়ারম্যানের উশৃঙ্খল আচরনে আমরা অতিষ্ট। আমরা ৯ জন ইউপি সদস্য ও সদস্যাগণ উক্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহোদয়ের কাছে আমাদের দায়েরকৃত অভিযোগটি তদন্তাধীন রয়েছে। তারা বলেন,গত ২ বছর ধরে ৪টি ইদুল ফিতর ও ইদুল আজহা উপলক্ষ্যে সরকারের বরাদ্দকৃত ভিজিএফ এর চাল ওজনে কম দেয়াসহ তিনি ক্যারিং খরচ এর কথা বলে তার ইচ্ছেমতো বরাদ্দকৃত চাল বিক্রি করে গরীব মানুষের হক আত্মসাৎ করেন। রিলিফ এর চাল চুরি এবং ইউপি সদস্যা,সদস্য,গ্রাম পুলিশ ও উপকারভোগী নারীপুরুষদের সাথে অসদাচরন ও অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করা উক্ত চেয়ারম্যানের নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। এর আগেও পরিষদের সকল সদস্য সদস্যারা তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনয়ন করলে সরকার তাকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সাসপেন্ড করেন বলেও জানান সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও সদস্যারা।
সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মানিক মিয়া বলেন,সরকারের বরাদ্দকৃত ভিজিএফ এর চাল জনপ্রতি ১০ কেজি হারে সঠিকমতো মাফ করে দেয়ার সুনির্দিষ্ট নির্দেশ রয়েছে। কোন চেয়ারম্যান যদি ওজনে কাউকে কম দেন এবং বরাদ্দকৃত চালের কিছু পরিমাণ চাল বিক্রয় করে ক্যারিং খরচ বহন করেন তাহলে এর জন্য ঐ চেয়ারম্যানই দায়ী হবেন।
দায়েরকৃত অভিযোগের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন ইউপি সদস্যার দায়েরকৃত অভিযোগের ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

Discussion about this post