ছয়টি মহাদেশে এই পদে নিয়োগ পেয়েছেন আরো ছয়জন
দেশতথ্য রিপোর্ট:
শিরোনামের যে কোন উত্তর নেই তা নয়। উত্তর তো আছেই। কিন্তু কি সেই উত্তর? ঢাকার চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিন গরম নিয়ে একটি বক্তব্য দিয়েছেন। সেই বক্তব্য ভাইরাল হয়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছে।
সাংবাদিক ইউটিউবার ফেসবুকাররা তাকে নিয়ে প্রতিদিন বানাচ্ছেন নানা ধরণের কমেডি। এ নিয়ে চলছে আলোচনা ও সমালোচনা। কেউ বলছেন, তাপমাত্রার ভয়াবহ উৎকণ্ঠায় প্রশ্ন উঠেছে সিটি করপোরেশনের চিফ হিট অফিসারের কাজ কী। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে মুখরোচক আলোচনা।
ইতোমধ্যেই ফেসবুকার পাঁচু কাকা ও যশোরের এই হ্যালোর কবীর বিন সামাদ হিট অফিসারের বক্তব্যের উপর কমেডি ভিডিও বানিয়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে।
এসব কারনে অনেকেই বলছেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের মেয়ে বুশরা আফরিনকে হিট অফিসার পদে নিয়োগ পক্ষপাতদুষ্ট। তার কার্যপদ্ধতির কোনো কিছু স্পষ্ট নয়। বুশরা আফরিনের নিয়োগের পর থেকে তার দায়িত্ব নিয়ে জনমনে অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়। বুশরার দায়িত্ব গ্রহণ ইতোমধ্যেই বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু তার কাজের দৃশ্যমান কোনো কিছু এখনো দেখা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বিশ্বের অনেক বড় শহরে তাপমাত্রা রেকর্ড গড়ছে। এই বৈশ্বিক সমস্যা নিরসনে মার্কিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আর্শট-রক এবং এক্সট্রিম হিট রেজিলিয়েন্স অ্যালায়েন্স (ইএইচআরএ) ২০২১ সাল থেকে কাজ করছে।
তাপমাত্রা কমাতে বিশ্বের কয়েকটি মহাদেশে পাইলট প্রজেক্ট শুরু করেছে তারা। জাতিসংঘের সহযোগী এই সংগঠনটি বিশ্বে প্রথমবারের মতো চিফ হিট অফিসার পদ তৈরি করে পাইলট প্রজেক্ট নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও হিট অফিসার পদে গত বছর বুশরা আফরিনকে তারা নিয়োগ দিয়েছে। তাদের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশন।
সাধারণত স্থানীয় কর্মকর্তাদের মাধ্যমেই চিফ হিট অফিসার নিয়োগ করা হয়। আর্শট-রকের নিয়োগ প্রক্রিয়ার নীতিমালা অনুযায়ী হিট অফিসার নিয়োগ পেয়ে থাকেন। সংস্থাটি প্রতিটি মহাদেশে একজন হিট অফিসার নিয়োগ দেবে।
এ পর্যন্ত ৬টি মহাদেশে চিফ হিট অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরে লস এঞ্জেলস, মিয়ামি, মেলবোর্ন, এথেন্স এবং ফ্রিটাউনে চিফ হিট অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এদের একজন এলিনি মাইরিভিলি। তিনি এথেন্সের চিফ হিট অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি স্থানীয় এবং বৈশ্বিক উভয় ক্ষেত্রে তাপমাত্রা কমানোর জন্য কাজ করছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি-ডেড কাউন্টিতে আর্শট-রকের চিফ হিট অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন জেন গিলবার্ট। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব, জলবায়ু দুর্যোগ প্রশমন এবং অভিযোজন এবং শহরের স্থিতিস্থাপকতায় তার ৩০ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা আছে। তিনি শহরে গ্রিন স্পেস বাড়ানো এবং তাপপ্রবাহ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করছেন।
আফ্রিকা মহাদেশের চিফ হিট অফিসার হলেন ইউজেনিয়া কার্গবো। দেশটির ফ্রিটাউন শহরে আর্শট-রকের চিফ হিট অফিসার হিসেবে তিনি নিযুক্ত। তিনি শহরের তাপমাত্রা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। শহরায়ণের কারণে ফ্রিটাউন শহরটি যেসব সমস্যা মোকাবিলা করছে তিনি তা চিহ্নিত করেছেন। এ জন্য তিনি শহরের তাপমাত্রা কমাতে এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের রক্ষা করতে বেশ সৃজনশীল সমাধান খুঁজে বের করছেন।
অন্যদিকে বংলাদেশে প্রথম হিট অফিসার বুশরা আফরিন। বুশরা শুধু ঢাকা নয়, এশিয়া মহাদেশেরও প্রথম চিফ হিট অফিসার। সে হিসেবে তার কাছ থেকে এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের শিকার মানুষদেরও প্রত্যাশা রয়েছে। কিন্তু অন্য দেশের হিট অফিসাররা যখন কুল পেভমেন্ট, গাছ লাগানো এবং ক্যানোপি তৈরির মতো ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন সেখানে বুশরা আফরিনিএসব কোন কিছুই না করে তাপমাত্রা নিয়ে একটি বক্তব্য দিয়ে হিট অফিসার পদটিকে কমেডির খোরাক হিসেবে যোগান দিয়েছেন।
ঢাকার চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিন বলেছেন, ‘গরম থেকে বাঁচতে বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে এবং যথাসম্ভব ছায়ার মধ্যে থাকার চেষ্টা করতে হবে। অসুস্থ বোধ করলে বিশ্রাম নিতে হবে, আর বেশি খারাপ লাগলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশন যথাসাধ্য চেষ্টা করছে পানীয় জলের সুব্যবস্থা বাড়ানোর জন্য। একই সঙ্গে ‘কুলিং স্পেস’ এর ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে পথচারীরা বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পান। আমাদের অবশ্যই আরও বেশি করে গাছ লাগাতে হবে এবং পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণে এগিয়ে আসতে হবে। গত এক বছরে আমরা বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বস্তি এলাকায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। কারণ, তারা অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী। এসব জায়গায় গাছ লাগানোর মাধ্যমে এবং এসব গাছের রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে তাদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া আবহাওয়া অধিদফতরসহ বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি এবং এনজিওর সঙ্গে আমরা শিগগিরই যুক্ত হয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছি। কল্যাণপুর ও বনানীতে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে আমরা ‘নগর বন’ তৈরি করতে যাচ্ছি। যা একই সঙ্গে শীতলকরণ, বায়ুদূষণ রোধ এবং মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি করবে।
মূলত হিট অফিসাররা নগরের বাসিন্দাদের তাপ সুরক্ষা প্রদানের কর্মকান্ডকে ত্বরান্বিত করে চরম তাপের ঝুঁকি এবং প্রভাব কমাতে কাজ করেন। এর সঙ্গে তাপমাত্রা সহনীয় রাখতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পদক্ষেপকে সমন্বয় করেন তারা। নগরের তাপমাত্রা কমাতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মতো নানা ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে থাকে এই অফিসাররা। সহকর্মীদের মাঝে চরম তাপের ঝুঁকি এবং সমাধান সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো, সম্প্রদায় এবং আশপাশের এলাকার মধ্যে যেগুলো চরম তাপের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলো চিহ্নিত করা, তাপ তরঙ্গের পরিকল্পনা এবং তাপ মোকাবিলায় বিজ্ঞান সম্মত পদক্ষেপ নেওয়াও তাদের কাজ। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বয় করা, দীর্ঘমেয়াদি তাপ ঝুঁকি কমানো এবং শীতলকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হিট অফিসারদের দায়িত্ব।
গত এক বছরেও তার কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। ফলে এ নিয়ে নানা মাধ্যমে আলোচনায় সরব রয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।
সে যাই হোকনা কেন, হিট অফিসার কি করেন তা দেখার জন্য এখনো অপেক্ষায় চেয়ে আছেন ঢাকাবাসী।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//২৬ এপ্রিল ২০২৪//

Discussion about this post