Print Date & Time : 9 June 2025 Monday 9:26 pm

তফসিল ঘোষণার রাতেই আধিপত্য বিস্তার

খোকসা- কুমারখালী প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়ার খোকসায় নির্বাচনী তফশীল ঘোষনার রাতে আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে ঘুমন্ত গ্রামবাসীর উপর সন্ত্রাসীরা হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বুধবার রাত ১১ টার দিকে উপজেলার ওসমানপুর ইউনিয়নের ওসমানপুর গ্রামের কলপাড়া এলাকায় এঘটনা ঘটে।

এতে কমপক্ষে ১৬ টি বসত বাড়ি ও চারটি দোকান ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও আতঙ্ক সৃষ্টি করতে অসখ্য ফাঁকা গুলি ছুরা হয়েছে। তবে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন, প্রায় দুই ঘণ্টা যাবৎ সন্ত্রাসীরা তাণ্ডব চালালেও কোন পুলিশ আসেনি।

বৃহস্পতিবার সকালে কলপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১৬ টি বসতবাড়ি ও চারটি মুদি ও চায়ের দোকানে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। আতঙ্কে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা পালিয়ে গেছে। মহিলা ও শিশুরা রয়েছে আতঙ্কে। এছাড়াও আগ্নেয়াস্ত্রের খোল পাওয়া গেছে।

ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী জানায়, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওসমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ওহিদুল ইসলাম ডাবলু ও সাবেক ইউপি মেম্বর ওয়াজেদের নেতৃত্ত্বে সামিরুল, পাপ্পু,হেলাল, ময়েনসহ প্রায় অর্ধশতাধিক মাস্তান দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাদের উপর রাত ১১ টার দিকে হামলা চালায়। এমময় তারা ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। হঠাৎ গুলির বিকট শব্দে তাঁদের ঘুম ভেঙে যায় এবং সন্ত্রাসী তাণ্ডব দেখে তাঁরা পালিয়ে যায়। পরে সন্ত্রাসীরা তাঁদের প্রায় ১৬ টি বসতবাড়ি ও চারটি দোকানে ভাংচুর চালায় এবং লক্ষ লক্ষ টাকা ও সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়।

তাঁরা আরো জানায়, প্রায় দুইঘণ্টা ব্যাপী সন্ত্রাসীরা তাণ্ডব চালায়। কিন্তু রাতে কোন পুলিশ এলাকায় আসেনি। তাঁরা আতঙ্কে দিনাপতি করছেন।

একই গ্রামের বাসিন্দা শাজাহান আলী বলেন, আমি রাতে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলাম। রাত আনুমানিক ১১ টার আমার বাড়িতে একদল সন্ত্রাসী হামলা করে। ওই সময় আমি প্রাণ বাঁচাতে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে পালিয়ে যাই। পরে বাড়িতে ফিরে এসে দেখি আমার বাড়ির সকল জিনিস ভাঙচুর করে নগদ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে ঐ সন্ত্রাসীরা। তিনি আরো বলেন, আমার বাড়িটি সরকারের বরাদ্দ দেয়া একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের।

শাকেরা বেগম (৭৫) বলেন, সন্ত্রাসীরা ঘরের সব আসবাবপত্র ভাঙচুর ও লন্ডভন্ড করে। এর পর মেয়ের বিয়ে দেয়ার জন্য ৩ ভরি গহনা ও নগদ তিন লক্ষ টাকা সঞ্চয় করে রাখি সন্ত্রাসীরা তা নিয়ে যায়।

খোকন সেখের স্ত্রী আলেয়া খাতুন বলেন, তার স্বামী বাড়িতে না থাকায় রাতে সন্তানসহ ঘুমন্ত অবস্থায় একদল সন্ত্রাসীরা আমার বাড়িতে আক্রমণ চালিয়ে বাড়ি ঘরে লুটপাট চালায়। আমি প্রাণের ভয়ে আমার সন্তানকে নিয়ে পাশের বাড়িতে চলে যায়।

এ বিষয়ে মাজেদ বিশ্বাস বলেন, ডাবলু চেয়ারম্যানের আদেশে ওয়াজেদ মেম্বারের নেতৃত্বে রাতের আঁধারে আমাদের বাড়ি ঘরে হামলা চালায়। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

এবিষয়ে ওই এলাকার বর্তমান মেম্বর জহুরুল ইসলাম বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী বাহিনী আমার বাড়িসহ প্রায় ২০ জন সমর্থকের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট করেন। আতঙ্ক সৃষ্টি করতে অসংখ্য ফাঁকা গুলি মারে।

এবিষয়ে অভিযুক্ত সাবেক মেম্বর ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘ পনেরো বছর আগে মেম্বর ছিলাম। এবার আবার দাঁড়াবো। আমি বিএনপি সমর্থন করি। দুইমাস আগে জহুরুল মেম্বরের লোকজন আমার বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল। গতকাল রাতে গুলির শব্দ শুনেছি। আমি ঘটনার সাথে জড়িত নয়। আমার ছেলে পাপ্পু হয়তো ছিল।’

এবিষয়ে ওসমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ওহিদুল ইসলাম ডাবলু মুঠোফোনে বলেন, ‘ আমি পাঁচ মাস ঢাকায় আছি। আসন্ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী। জহুরুল মেম্বর নিজে নিজে এলাকায় ভাংচুর করে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।

কাজীর ব্রিজ এলাকর সমিরন ও রেশমা বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা প্রায় তিন ঘহন্টা ধরে হামলা চালায়। তারা আগের থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল। হামলাকারীরা তার প্রতিবেশী আফতাব শেখের একটি গরু, বাইসাইকেল লুট করে নিয়ে গেছে।’

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, ‘তিনি নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে খোকসার বাইরে আছেন। হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ্য ইউপি সদস্যকে অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। তিনি ফিরে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।’