আবেদ হোসাইন:
রঙিন ঝলমলে আলোর ভুবনের বাসিন্দাদের জীবন প্রদীপ দপ করে নিভে যাওয়া সংগত কারণেই চমকে দেয়, ভাবিয়ে তোলে; বিশেষ করে চলচ্চিত্রশিল্পে। কারণ তাদেরকে আমরা চিনি তাই আমাদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়। শোবিজ মিডিয়াটা খুব ফার্স্ট লাইফ ও রঙিন। বাইরে থেকে যতটা রঙিন মনে হয় ভেতরে তারচেয়ে ভয়াবহ রকমের অন্ধকার। রঙিন জীবনটাকে মানুষ দেখেন কিন্তু অন্ধকার জীবনের অংশটা তাকে একাই বহন করতে হয়। এই মানসিক চাপটা সবাই নিতে পারে না। হতাশ হয়ে যান। তখনি ঘটে অনাকাঙ্খিত আত্মহত্যার ঘটনা:
ডলি আনোয়ারঃ
সত্তর দশকের জনপ্রিয় ও প্রতিভাবান টিভি ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ডলি আনোয়ার। ডলি আনোয়ারের চলচ্চিত্রযাত্রা শুরু হয় ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ দিয়ে। ছবির প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত নারীনেত্রী ও লেখক ড. নীলিমা ইব্রাহিম এবং প্রখ্যাত চিকিৎসক ও বারডেমের প্রতিষ্ঠাতা ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিমের মেয়ে তিনি। পরিবার, সম্পদ, যশ, খ্যাতির কমতি ছিল না। তবুও ১৯৯১ সালের ৩ জুলাই মাসে ডলি আনোয়ার বিষপান করে আত্মহত্যা করেন।
মডেল সুমাইয়া আজগর রাহাঃ
অভিনেত্রী ও মডেল ও লাক্স-তারকা সুমাইয়া আজগার রাহার মোহাম্মদপুরের চানমিয়া হাউজিংয়ের ২ নম্বর সড়কের ৪১/সি মেঘহিল ভবনের চতুর্থ তলার বি-১০ ফ্ল্যাটে আত্মহত্যা করেন। প্রেমিক চলচ্চিত্র নায়ক অনন্ত জলিল, বয়ফ্রেন্ড শাকিব ও নিজ পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণে লাক্স তারকা সুমাইয়া আজগর রাহা আত্মহত্যা করেছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল মিডিয়াপাড়ায়।
মিতা নূরঃ
নব্বই দশকে টিভির মিষ্টিমুখ মিতা নূর। বিজ্ঞাপন বা নাটক; সবখানেই নিয়মিতই দেখা মিলতো লাস্যময়ী এই অভিনেত্রীর। ২০১৩ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসার ড্রয়িংরুম থেকে অভিনেত্রী মিতা নূরের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
মঈনুল হক অলিঃ
বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী, থিয়েটার-কর্মী, মডেল ও অভিনেতা মঈনুল হক অলি। ২০১২ সালের ২৭ মার্চ গভীর রাতে আত্মহত্যা করেছেন মডেল ও অভিনেতা অলি।
সালমান শাহঃ
ঢাকাই সিনেমার অমর নায়ক সালমান শাহ। তার মৃত্যু এই ইন্ডাস্ট্রির কাছে দারুণ এক শোকের, আক্ষেপের এবং যাতনার। ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে যখন নক্ষত্র হয়ে জেগেছিলেন বাংলা সিনেমার আকাশে ঠিক তখনই নিভে গেলেন সালমান। মাত্র ২৭ বছর বয়সে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পৃথিবী ছেড়ে চলে যান জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ। অভিযোগ উঠে যে, তাকে হত্যা করা হয়; কিন্তু তার সিলিং ফ্যানে ফাঁসিতে হত্যাকাণ্ডের কোনো আইনি সুরাহা শেষ পর্যন্ত হয়নি। তুমুল জনপ্রিয় একজন অভিনেতা কেনে হুট করে আত্মহত্যা করে বসলেন সে প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি।
নায়লাঃ
লোকনাট্য দল বনানীর একজন সদস্য ছিলেন নায়লা। ২০১৫ সালের ২০ মার্চ তিনি আত্মহত্যা করেন। শ্যামলীর বাসা থেকে নায়লার সিলিং ফেনে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পিয়াস রেজাঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও উদয়ীমান সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন নাঈম ইবনে পিয়াস রেজা। ২০১৪ সালের রোজা ঈদের দিন ছিলো। সেদিনই ফ্যানের সঙ্গে প্রেমিকার ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন এই গায়ক।
নায়ার সুলতানা লোপাঃ
বিটিভিতে প্রচারিত হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় ‘এইসব দিনরাত্রি’ ধারাবাহিক নাটকের টুনি চরিত্রে অভিনয় করা নায়ার সুলতানা ওরফে লোপা। ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর রাতে আত্মহত্যা করেন লোপা নায়ার। গুলশান ১ নম্বরের ১২৬ নম্বর রোডের নিজ ফ্ল্যাট থেকে নায়ার সুলতানার লাশ উদ্ধার করে গুলশান থানার পুলিশ।
অভিনেত্রী তমা খান ইতিঃ
শোবিজে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন তমা খান। কিন্ত সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি তার। গতবছর (২০১৯) ৯ মে রাজধানীর মিরপুরে চিত্রপরিচালক শামীম আহমেদ রনির সাবেক স্ত্রী ও অভিনেত্রী তমা খান গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে খবর পাওয়া যায়।
হুমায়রা হিমু:
২ নভেম্বর ২০২৩ সালে মারা যান ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু। তাঁর মৃত্যু নিয়ে তৈরি হয়েছিল রহস্য। কেউ বলছেন আত্মহত্যা, কেউ বলছেন হত্যা। পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে পুলিশ বলছে এটি আত্নহত্যা। হুমায়রা হিমুর শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন না থাকলেও তার গলায় রশির দাগ পাওয়া গেছে বলে জানিয়ে ছিলো পুলিশ।
রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী সাদী মহম্মদ:
দেশের অন্যতম গুণী রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী সাদী মহম্মদ মারা গেছেন। বু্ধবার ১৩ মার্চ ২০২৪ রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়।ছোট ভাই নৃত্য শিল্পী শিবলী মহম্মদ বলেন, ‘আজও তানপুরা নিয়ে বড় ভাই সংগীত চর্চা করেছেন। সন্ধ্যার পর হঠাৎ দেখি ঘরের দরজা বন্ধ। তখন দরজা ভেঙে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করি।’প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post