শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট থেকে :
রংপুর অঞ্চলে পাঁচ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি।
তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদ সীমার ৫২ সেঃমিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ৫০ হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। কমপক্ষে ৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে।
রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জেলার প্রধান নদী তিস্তা ও ধরলা নদী। তিস্তা এই জেলার বুকচিঁড়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার দৈঘ্য প্রায় ১৩৫ কিঃমিঃ। ১৭৮৯ সালে অতিবৃষ্টি হতে তিস্তা নদীর সৃষ্টি। ভারতের সিকিম হতে এই নদীর সৃষ্টি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরাঞ্চলের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল এই নদী দিয়ে ১৩৫ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে গিয়ে পড়ে। উত্তরাঞ্চলের প্রধান নদী তিস্তা ও ধরলা পানিতে টইটুম্বর । লোকালয়ে পানি ঢলে পড়েছে। তলিয়ে গেছে নদী উপকূলের প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের ঘর বাড়ি। এসব জেলার নদী উপকূলের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। বন্যা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও পেটের পীড়া দেখা দিয়েছে। তিস্তা নদীর পানি তৃতীয় দিনের মত বিপদ সীমার ৫২ সেঃমিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দোয়ানির তিস্তা ব্যারেজের সব গুলো ৪৪টি জলকপাট খুলে পানি উজানে ছেড়ে দিয়েছে। ব্যারেজ রক্ষায় রেড এলার্টজারী করা হয়েছে। ধরলা নদীর পানি শিমুলবাড়ি পয়েন্টে কিছুটা কমেছে। উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা অবনতির দিকে গেছে। সরকারি সহায়তা প্রয়োজনের চেয়ে অপতুল।
তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান, রতœাই, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে যাওয়ায় নদী উপকূলের পাট, ধান, ভুট্টা, কাঁচামরিচ, বাদাম ও সবজি জাতীয় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবচাইতে ক্ষতি হয়েছে চরের প্রদান ফসল বাদাম, কাঁচামরিচ ও পাট। কোথাও কোথাও নমল ভুট্টা ও ধান ক্ষেত তলিয়ে গেছে। সাধারণ মানুষের মাঝে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। রংপুরে কাউনিয়া, মধুপুর, হারাগাছ, লক্ষীটারী, মহিপুর , লালমনিরহাটের রাজপুর, খুনিয়াগাছ, তাজপুর, মহিষখোচা, হলদিবাড়ি, পাটিকাপাড়া, সিন্দুর্ণা, পূর্ববিচনদই, পারুলিয়া,দক্ষিগড্ডিমারী, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি, রাজারহাট, নাজিমখাঁ, উলিপুর, যাত্রাবাড়ি, গাইবান্ধার সাঘাটা, গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও নীলফামারী জেলার জলডাকা, ডিমলা, পূর্ববিছনদই, ঝাড়সিংহেরশ্বর, পূর্বছাতনাই এলাকায় তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রবেশ করেছে। নদীপাড়ের সাধার মানুষের ঘর বাড়িতে হাটু পানি, কোথাও কোথাও কমর পানি উঠেছে। পানিবন্দি মানুষ রান্না করতে পারছে না। কোথাও কোথাও নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ঘর বাড়ি ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (বাপাউবো), পানি ভবন, ঢাকা সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীসমূহের পানি সমতল সম্পর্কিত পূর্বাভাস (২১ জুন) আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ হতে ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে এবং রংপুর জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে। ৫২ সেঃমিঃ বিপদসীমার উপর দিয়ে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অভ্যন্তরে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত কোথাও হয়নি। ভারতের গ্যাংটক (সিকিম) ৩১.০ মিঃমিঃ বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, গজলডোবায় পানি ছেড়ে দেওয়ার কারণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সকাল থেকে তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫২ সেঃমিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। পানি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post