হেলাল উদ্দিন,দৌলতপুর (কুষ্টিয়া):পুলিশের ঘুষের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ কেন্দ্র করে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ঘরছাড়া আট পরিবার।
লুট করে ভেঙে দেয়া হয়েছে তাদের ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, বাহন। বেধড়ক মারপিট করা হয়েছে নারী-শিশু ও বৃদ্ধকেও।
গত ৪ থেকে ৬মে পালাক্রমে এসব ঘটনা ঘটায় অভিযুক্তরা।
জীবন মৃত্যুর মাঝে লড়াই করছেন যুবক মারুফ।
জানা গেছে, দৌলতপুরের ফিলিপনগর ইউনিয়নের আলীনগর গ্রামের কৃষক তসি মালিথা তামাক পাতা পোড়ানোর জন্য বাঁকিতে কয়েকশো টাকার খড়ি কেনেন স্থানীয় ফারুক মন্ডলের স্ত্রীর কাছে থেকে। দিন কুড়ি পর ফারুক মন্ডলের স্ত্রী পাওনা টাকা চাইতে গেলে বাকবিতন্ডা ও মারামারি সৃষ্টি হয়। এসময় ফারুক মন্ডলের স্ত্রীর সাথে, তার ভাসুর বল্টু মন্ডল উপস্থিত ছিলেন। এতে গুরুতর আহত হোন বল্টু।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ওইদিনই দৌলতপুর থানায় মামলা করেন বল্টু মন্ডলের স্ত্রী। পালিয়ে যায় তসি মালিথাসহ অভিযুক্তরা। অভিযোগের প্রায় ২০ দিন পর পুলিশের বিট অফিসার এসআই মোহসীনের নেতৃত্বাধীন পুলিশের একটি দল আসামি ধরতে গেলে অভিযুক্ত এক আসামি আলমগীর তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়। এসআই মোহসীন মধ্যস্থতার স্বার্থে নিজেই ডেকে নেন একই গ্রামের জাহিদুল ইসলামকে। আসামি পালালেও তিন হাজার টাকায় এসআই মোহসীন মোটরসাইকেল ছেড়ে দিয়েছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। মধ্যস্থতায় অংশ নেয়া জাহিদুলের ওপর তিন হাজার টাকার দায় চাপায় পলাতক আসামি আলমগীরের চাচা আব্বাস। ৪ মে সন্ধ্যায় জনসম্মুখে লাঞ্ছিত করেন জাহিদুলকে, এর খানেক পরেই মোতালেব মালিথার ছেলে মারুফ গুরুতর হামলার শিকার হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে যান। এই হামলায় প্রধান অভিযুক্ত করা হয় জাহিদুলকে। যদিও জাহিদুলের দাবি, মারুফের ওপর হামলার সময় তিনি ছিলেন পুলিশের সাথে।এসব ঘটনায় পুলিশকে বিশৃঙ্খলার বিষয় মৌখিক ভাবে জানানো হলেও তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ ভূক্তভোগীদের। এদিন আটক করা হয় জাহিদুলকে। জাহিদুল পুলিশের আওতায় থাকা অবস্থায় ওইদিনই সংঘবদ্ধ পঞ্চাশোর্ধ মানুষ হামলা চালায় জাহিদুল ও তার স্বজনদের বসতবাড়িতে। মারধর করে বের করে দেয়া হয় গ্রাম থেকে। বাড়িঘর লুট ও ভাঙচুর করা হয় তাদের। এই হামলায় রেহাই পায়নি নারী-শিশু-বৃদ্ধও। ছয় পরিবারের বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত ৫ মে দৌলতপুর থানায় এসব হামলা-লুট-ভাঙচুরের অভিযোগ দায়ের করেন জাহিদুলের চাচাতো ভাই খালিদ হোসেন। পরে ৬ মে দিনগত রাতে ফের হামলা চালিয়ে ভেঙে দেয়া হয় আরও দু’টি বাড়ি। অভিযোগ পাওয়া গেছে আত্মীয়ের বাড়ি আশ্রয় নেয়া গৃহহীন ওইসব ব্যাক্তিদের পুনরায় হুমকি দিচ্ছেন হামলাকারীরা।
হামলার শিকার গৃহবধূ সোমা খাতুন বলেন, হঠাৎ বাড়ি ঘিরে ধরে ভাঙচুর শুরু করে তারা, বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। স্থানীয় শাহীন, সজন, আব্বাস, জনি, জামিল, তসি, রাসেল, আতিয়ার, তসিকুল সহ আরও অনেকে ঘিরে ধরে ধর্ষণের হুমকি দিলে দৌড়ে পালায়।লুট ও ভাঙচুর হওয়া আরেক বাড়ির মালিক নাসিরুল মালিথা বলেন, সবার প্রথমে আমার বাড়ি লুট হয়। বাড়ির সবাইকে বেধড়ক মারপিট করা হয়।আহত তরুন বিকাশ ইসলাম জানান, ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘুম ভেঙে কিছুই বুঝতে পারিনি। অনেক মানুষ একযোগে হামলা চালাচ্ছিলো। পালানোর চেষ্টা করার সময় আমাকে আটকে মারধর করে, মাথা ফাটিয়ে দেয়।এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। এখনও পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অন্তত পাঁচ। আহতাবস্থায় অজানা আতঙ্কে ৬ বছরের শিশু জ্যানি অস্বাভাবিক জীবনযাপন করছে।
তামাক পোড়ানো খড়ি ক্রেতা তসি মালিথা জানান, তিনশো টাকার খড়ি কিনি। ওই মহিলা টাকা চাইতে আসলে তার সাথে কথা বলছিলাম, এরইমধ্যে তাদের সাথে গন্ডগোল সৃষ্টি হয়।
বল্টু মন্ডলের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ছোটো ভাই ঢাকায় থাকায় তার স্ত্রীর সাথে খড়ি বিক্রির পাওনা টাকা চাইতে যান বল্টু মন্ডল। তসি মালিথা গালাগাল দেয়, বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে তার (তসি’র) লোকজন ডেকে হামলা চালায়। দু’পা ভেঙে দেয়া হয় বল্টু মন্ডলের।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: রুহুল জানান, এলাকায় ত্রিমূখী অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। অনেক হতাহত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনতিবিলম্বে পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে আরও খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।ঘুষ লেনদেন ও শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যার্থতা প্রসঙ্গে এসআই মোহসীন বলেন, ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ আসেনি, এ বিষয়ে কিছু জানা নেই। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে গন্ডগোল আর লিখিত অভিযোগ হয়েছে।
আলীনগর এলাকার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি প্রসঙ্গে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল। একটি মামলা হয়েছে, দু’জন আসামী আটক হয়েছে। আরেকটি অভিযোগ তদন্ত চলছে, সত্যতা পেলে মামলা নেয়া হবে।পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানায়, নানা ঘটনার সুত্র ধরে প্রায় এক মাস যাবৎ হতাহত আর ভাঙচুর ঘটেই চলেছে। কিন্তু পুলিশ যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না। শিগগিরই জননিরাপত্তা বাড়ানো প্রয়োজন।

Discussion about this post