আশরাফুল ইসলাম অনিক:
ত্যাগে গড়া নেতৃত্বের জীবন্ত উদাহরণ সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী।
যিনি এক জীবন্ত রাজনৈতিক ইতিহাস, এক অনন্য অনুপ্রেরণা
কুষ্টিয়ার মাটি ও মানুষের সঙ্গে যার আত্মার যোগ তিনি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী।
জাতীয়তাবাদের আদর্শ, স্বাধীনতার আত্মত্যাগ আর গণমানুষের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে যিনি ছিলেন সম্মুখ সারির দীপ্ত এক আলোকবর্তিকা। তিনি শুধু একজন রাজনীতিক নন, বরং সংগঠনের অভিভাবক, কর্মীর আশ্রয়স্থল এবং একজন আদর্শিক পথপ্রদর্শক।
১৯৫২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর, কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কমলাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী। তাঁর জন্ম শুধু একটি পরিবারের নয়, কুষ্টিয়া জেলার রাজনৈতিক ও আদর্শিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা।
তাঁর পিতা মরহুম অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাছ-উদ-রুমী, ছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর এবং জাতীয়তাবাদী রাজনীতির একজন প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী সংগঠক। তিনি কেবল কুষ্টিয়া জেলার একজন সম্মানিত আইনজীবী ও সমাজসেবক ছিলেন না, বরং কুষ্টিয়ায় জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি গড়ে তোলার অন্যতম পথিকৃৎ।
একসময় যেসব আসন ছিল আওয়ামী রাজনৈতিক শক্তির ঘাঁটি, তার মধ্যে কুমারখালি-খোকসা ছিল অন্যতম। সেই শক্ত ঘাঁটি ভেঙে ১৯৭৯ সালে দেশের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে তিনি জাতীয়তাবাদী শক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করেন নতুন প্রেরণায়।
এটি ছিল কেবল একটি আসনে বিজয় নয়, বরং রাজনৈতিক ইতিহাসে এক সাহসী পালাবদলের ঘটনা।
পরে তিনি বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলা উন্নয়ন সমন্বয়কারী হিসেবে এমন একটি দায়িত্বে অধিষ্ঠিত ছিলেন, যা গভীর প্রশাসনিক বিশ্বাস ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার প্রতিফলন।
এই পদে থেকে তিনি কেবল উন্নয়ন পরিকল্পনায় নেতৃত্ব দেননি, বরং জনমানুষের প্রয়োজন বুঝে বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে রেখে গেছেন অবিস্মরণীয় ছাপ।
এই দৃঢ় নেতৃত্ব, আদর্শিক অঙ্গীকার ও রাজনৈতিক শিষ্টাচারের উত্তরাধিকার আজও গর্বের সঙ্গে বহন করছেন সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী।
পরিবার থেকেই তিনি পেয়েছেন আদর্শিক উত্তরাধিকার। দেশপ্রেম, ত্যাগ ও নেতৃত্বের শিক্ষা। সেই আদর্শিক উত্তরসূরি হিসেবেই সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী হয়ে উঠেছেন কুষ্টিয়া জাতীয়তাবাদী রাজনীতির অবিচল স্তম্ভ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতীক।
ইউনাইটেড হাইস্কুল, কুষ্টিয়া থেকে শিক্ষা জীবন শুরু করে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক শেষ করেন। এরপরই তিনি প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হন দেশ গঠনের মহান দায়িত্বে “মুক্তিযুদ্ধ”। তিনি ছিলেন সম্মুখ সারির মুক্তিযোদ্ধা, অস্ত্র হাতে লড়েছেন মাতৃভূমির জন্য।
তিনি ১৯৭১ সালে মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য সম্মুখসমরে জীবনবাজি রেখে লড়াই করেছেন। তিনি শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েই থেমে থাকেন নাই, বরং আজও সেই চেতনা বুকে নিয়ে দেশের জন্য কাজ করে চলেছেন। তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় জাতির প্রতি দায়িত্ব ও ত্যাগের সাক্ষ্য বহন করে।
১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল প্রতিষ্ঠার সময় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ব্যক্তিগতভাবে নিজেই সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমীকে বৃহত্তর কুষ্টিয়ার দায়িত্ব অর্পণ করেন। সেই সময় বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল বর্তমান কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা। যা তখন ছিল প্রশাসনিক গুরুত্ব ও রাজনৈতিক সম্ভাবনায় সমৃদ্ধ এক অঞ্চল। তখনই বৃহত্তর কুষ্টিয়ার এমন কোনো ইউনিয়ন নেই যেখানে তিনি নিজের পদচিহ্ন রেখে যাননি।
তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও আদর্শের প্রতি অটল নিষ্ঠা খুব দ্রুতই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নজর কেড়েছিল, যা তাঁকে করে তোলে এক বিশ্বস্ত ও যোগ্য সংগঠক।
এরপর থেকে শুরু হয় তার দুর্বার সংগঠনিক অভিযাত্রা, যার ভিত্তি আজও কুষ্টিয়ার জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে দৃঢ় করে রেখেছে।
১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০১৮ সালে তিনি কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পরপর দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের তথাকথিত নির্বাচন ছিল গণতন্ত্রের গলায় ছুরি চালানোর একটি নগ্ন উদাহরণ। গণতন্ত্রের নামে এটি ছিল রাষ্ট্রীয় কলঙ্কের এক ভয়ংকর নজির।
২০০১ সালে সংসদে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি ছিলেন অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, যা প্রমাণ করে তার প্রশাসনিক দক্ষতা ও নৈতিক অবস্থান।
রাজনীতির মাঠে সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী ছিলেন আন্দোলনের একজন প্রথম সারির সৈনিক।
১৯৯৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সভাপতি হিসেবে টানা নেতৃত্ব দিয়ে প্রমাণ করেন, ত্যাগ, ধৈর্য ও সংযমই রাজনীতির দীর্ঘস্থায়ী শক্তি।
এই দীর্ঘ ১৫ বছরে যখন বিএনপির ওপর দমন-পীড়ন, গুম-খুন-মিথ্যা মামলা ছিল নিত্যদিনের বাস্তবতা, তখন কুষ্টিয়ার রাজপথে সংগঠনকে দৃঢ়ভাবে টিকিয়ে রাখার নেতৃত্ব দেন সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী। তিনি শুধু নামেই সভাপতি ছিলেন না, ছিলেন আন্দোলনের সাহসী মুখ, কর্মীদের আশ্রয়স্থল এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতীক।
এই সময়টাতে কয়েকবার পুলিশি লাঠিচার্জে আহত হয়েছেন, ডজন খানেক ভিত্তিহীন রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার হয়ে বহুবার কারাবরণ করেছেন, তবু পিছু হটেননি।
যখন অনেকে রাজনীতি থেকে সরে গিয়েছিল, তিনি তখন দল, কর্মী ও আদর্শকে আগলে রেখেছিলেন বুক দিয়ে।
তার নেতৃত্বে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি ছিল ঐক্যবদ্ধ, শৃঙ্খলিত ও সাংগঠনিকভাবে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়ানো। তার ধৈর্য, প্রজ্ঞা ও সাহসিকতাই দলকে প্রতিকূল সময়েও সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি দিয়েছে।
তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
তার মত অভিজ্ঞ, ত্যাগী এবং পরীক্ষিত নেতার উপস্থিতি জাতীয় রাজনীতির জন্য এক মূল্যবান সম্পদ।
রুমী সাহেব রাজনীতিকে কখনো পদ-পদবি বা প্রচারের মোহে দেখেননি।
তিনি বিশ্বাস করেন কাজই পরিচয়, আর নেতৃত্ব মানেই দায়িত্ব। তাই সংগঠনের প্রতি তার অবদান সবসময় ছিল নিরব, নিঃস্বার্থ এবং নির্বিচারে।
তার প্রতি কুষ্টিয়া জেলা থেকে শুরু করে খুলনা বিভাগের অসংখ্য নেতাকর্মীর শ্রদ্ধাবোধ এমন এক উচ্চতায় পৌঁছেছে, যেখানে তাকে “হেড স্যার” বলে সম্মোধন করা হয়।
এটি কোনো আনুষ্ঠানিক পদ নয়, এটি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার এক নিখাদ স্বীকৃতি।
তার রাজনীতির মধ্যে একটা সৌন্দর্য, একটা শৈল্পিক ব্যঞ্জনা আছে। যেখানে নেই অহংকার, নেই দ্বন্দ্ব, আছে সংগঠনের প্রতি দায়বদ্ধতা, কর্মীদের প্রতি ভালবাসা এবং আদর্শের প্রতি আনুগত্য।
তিনি রাজনীতিতে যেমন পরিণত, তেমনি ব্যক্তিত্বে একজন অভিভাবকের প্রতিচ্ছবি।
এই কারণেই তিনি নেতা নয়, তিনি একজন দায়িত্ববান ঐতিহ্যবাহী রাজনীতিবিদের জীবন্ত প্রতীক।
তিনি ছিলেন এক দৃঢ়চেতা, স্পষ্টভাষী এবং নীতিনিষ্ঠ নেতা তার মাঝে ছিল এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।
কারও ভুল দেখলে মুখে বলে দিতেন নিঃসংকোচে, শাসন করতেন কড়া ভাষায়, কিন্তু সেটা হতো শুধুই গঠনমূলক উদ্দেশ্যে।
তেমনি আবার কেউ যদি সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসত ‘চাচা, একটা ফোন দিলে উপকার হয়’ তিনি বিন্দুমাত্র চিন্তা না করেই সাথে সাথে ফোনটা করে দিতেন। তার মধ্যে ছিল দায়িত্ববোধ, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভ্যাস ও কর্মীদের প্রতি অকৃত্রিম মমতা।
এই সহজাত মানবিকতা, সংগঠনের প্রতি অগাধ ভালোবাসা এবং কঠোর শাসনের মধ্যেও সহানুভূতির যে ভারসাম্য, সেটাই সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী সাহেবকে অন্য সবার থেকে আলাদা করেছে।
তিনি যদি মনস্থ করতেন কাউকে যেকোনো ব্যাপারে সাহায্য করবেন, সেটা যত কঠিনই হোক না কেন, সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন এবং সফল হওয়ার সম্ভাবনাই থাকত বেশি।
এই দৃঢ় মনোবল, দায়িত্ববোধ আর “না” বলতে না পারার মানবিক দুর্বলতাই তাকে কর্মীদের কাছে ভরসার একমাত্র আশ্রয় করে তুলেছিল।
কারও সুপারিশে নয়, নিজের বিবেচনায় যদি মনে করতেন কেউ ন্যায্য কিছু চাইছে। তিনি ঝুঁকি নিয়ে হলেও পাশে দাঁড়াতেন।
এই মানসিকতা থেকে তৈরি হয়েছে এক কিংবদন্তি রুমী সাহেব, যিনি পদের চেয়ে সম্পর্ককে বড় করে দেখতেন। এটাই ছিল তার রাজনৈতিক মানবিকতার সবচেয়ে বড় শক্তি।
কুষ্টিয়া জেলার নেতাকর্মীদের মধ্যে নিঃসন্দেহে তিনিই সবচেয়ে বেশি মানুষকে সাহায্য করেছেন নিঃস্বার্থভাবে।
আশ্চর্যজনক হলেও অনস্বীকার্য এক বাস্তবতা সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, তার দুই সন্তান কিংবা সহধর্মিণীর কারো নামেই ঢাকা বা কুষ্টিয়ায় নেই কোনো বাড়ি, ফ্ল্যাট কিংবা জমির মালিকানা।
দীর্ঘ ষাট দশকের বেশি রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন সংসদ সদস্য, জেলা বিএনপির সফল সভাপতি, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দায়িত্বশীল নেতা, কিন্তু ব্যক্তি স্বার্থে কিছুই সংগ্রহ করেননি।
এটাই তাঁর রাজনীতির প্রকৃত পরিচয়।
সুবিধাভোগ নয়, বরং আদর্শিক অবস্থান, আত্মত্যাগ এবং দায়িত্বশীলতার এক নিখাদ উদাহরণ।
সংগঠনের কাজে দরকার হলে মাঝে মাঝে বড় ছোটো নেতাদের থেকে সহায়তা নেওয়াটা কোনো লজ্জার নয়। তিনি নিজের জন্য নয়, এটা কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে, মানুষের প্রয়োজন মেটাতেই লাগে। তিনি সহযোগিতা নিতেন। এটাই একজন দায়িত্ববান, বাস্তবমুখী নেতার বৈশিষ্ট্য।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি সেই সহযোগিতা দিয়ে কি করেন? নিজের জন্য বিলাসিতা নাকি কর্মীদের পাশে দাঁড়ান?
সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী কখনো রাজনীতিকে আয়ের মাধ্যম হিসেবে দেখেননি।
তিনি এই কুষ্টিয়া জেলায় নেতাদের নেতা, সংগঠনের অভিভাবক। নেতাকর্মীদের নিয়েই তো তার পথচলা, তাদের সাথেই তার ত্যাগ-সাহচর্য।
তিনি যদি কখনো সংগঠনের প্রয়োজনে ছোটো-বড় কোনো নেতার কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়েও থাকেন, তা ছিল মানুষের কল্যাণেই। কারণ রাতের আঁধারে তিনি তা শতগুণ ফিরিয়ে দেন সাধারণ মানুষের মাঝে। কারও চিকিৎসা ব্যয়, কারও আইনি লড়াইয়ের খরচ, আবার কারও সন্তানের শিক্ষার ফিস।
আর কণ্যাদায়গ্রস্ত পিতার নিঃশব্দ আক্ষেপ তিনি বুঝে নেন চোখের ভাষায়। কথা না বলে পাশে দাঁড়ান নিঃশব্দ সহায়তায়।
সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী সেই নেতা, যিনি নিজের প্রয়োজন নয়, মানুষের কষ্টকে গুরুত্ব দেন। মানবিকতা ও দায়িত্ববোধে তাঁর এই ভূমিকা নিছক রাজনীতি নয়, এটি আদর্শিক নেতৃত্বের প্রকৃত প্রতিফলন।
তিনি বিশ্বাস করেন, নেতার আসল শক্তি হচ্ছে মানুষের দোয়া আর বিপদের সময় পাশে দাঁড়ানো।
তাই তার দরজায় কেউ এসে খালি হাতে ফেরত গিয়েছে, এমন নজির কুষ্টিয়ায় নেই বললেই চলে।
এই নিঃস্বার্থ সহযোগিতার সংস্কৃতি গড়েছেন বলেই তিনি এখনো হাজারো মানুষের হৃদয়ে স্থান করে আছেন।
তিনি যখন সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন, তখন ব্যক্তি নয়। কর্মীদের মর্যাদা ছিল তার প্রধান অগ্রাধিকার।
নিজের পরিবার, নিরাপত্তা, এমনকি ব্যক্তিগত স্বস্তির বিপরীতে দাঁড়িয়ে থেকেছেন দলের আদর্শে অটল।
অবশ্যই পারতেন। সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী চাইলে বহু আগেই রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে পরিবার নিয়ে নিশ্চিন্ত, স্বস্তিময় জীবন কাটাতে পারতেন।
তিনি জানতেন, পিছিয়ে গেলে শুধু নিজের শান্তি হবে, কিন্তু দল, সংগঠন ও অসংখ্য কর্মী হারাবে একজন অভিভাবক।
তাই তিনি ঝুঁকি নিয়ে থেকেছেন, মানুষের পাশে থেকেছেন, প্রতিনিয়ত মাঠে থেকেছেন। এটাই তাকে আলাদা করে, এটাই তাকে রুমী ভাই করে।
কিন্তু ত্যাগী রাজনীতির যে নৈতিকতা, তার সঙ্গে আপোষ করেননি তিনি কখনও।
২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিংবা ‘জুলাই যোদ্ধা’দের উত্তাল সময়ে সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমীর ভূমিকা ছিল যেন ৭১-এর একজন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা কিংবা ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামের এক সাহসী নেতৃত্ব।
তিনি সরাসরি মাঠে না থেকেও যেভাবে নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রেখেছেন, সংগঠনের প্রতিটি পর্যায়ে পরামর্শ, কৌশল, সাহস, অর্থ ও মানবিক সহায়তা দিয়েছেন, তা সত্যিকার অর্থেই একজন দূরদর্শী রাজনৈতিক নেতার পরিচয় বহন করে।
প্রতিটি কর্মী যখন বিপদের মুখোমুখি, তখন তিনি হয় পাশে থেকেছেন, নয়তো ছায়া হয়ে রক্ষা করেছেন।
তার দেওয়া কৌশল, অনুপ্রেরণা ও সহমর্মিতা কর্মীদের আন্দোলনে বেঁচে থাকার শক্তি দিয়েছে।
মাঝেমধ্যে নিজেও রাজনৈতিক সীমা ছাড়িয়ে মাঠে নেমে গেছেন, শুধু দল নয়, আদর্শকে বাঁচাতে।
রাজনীতিকে তিনি কেবল ক্ষমতার প্ল্যাটফর্ম নয়, দায়িত্ব ও সম্পর্কের ক্ষেত্র হিসেবে দেখেছেন।
তাকে থামানো কঠিন ছিল, কারণ তিনি কোনো চেহারার জন্য নয়। আদর্শের জন্য রাজনীতি করেন।
তার চলার পথে বর্তমান স্পষ্ট লক্ষ্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা জাতীয় রূপরেখার বাস্তবায়ন। এই রূপরেখার প্রতিটি ধারা তার চিন্তা, পদক্ষেপ ও কর্মসূচিতে প্রতিফলিত হয়। দল পুনর্গঠন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তিনি এই দিকনির্দেশনাকে রাজনৈতিক দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
আজ কুমারখালী-খোকসার উন্নয়নের কথা উঠলে, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, মন্দির, কিংবা ঢাকা-কুষ্টিয়া সংযোগের জীবনরেখা ‘সৈয়দ মাসুদ রুমী সেতু’। সবকিছুর পেছনেই আছে একটি নাম, সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী।
উন্নয়নের প্রতিটি ছোঁয়ায় তার দূরদর্শিতা, সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা ও মানুষের প্রতি দায়বোধ প্রতিফলিত হয়েছে।
তিনি রাজনীতিকে দেখেছেন মানুষের কল্যাণের হাতিয়ার হিসেবে, আর সংগঠনকে দেখেছেন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্র হিসেবে।
তৃণমূল থেকে কেন্দ্র। সবখানেই তার গ্রহণযোগ্যতা, সম্মান এবং আস্থা রয়েছে।
যখন রাজনীতিতে আদর্শচ্যুতি, নেতৃত্ব সংকট ও ব্যক্তিস্বার্থ মুখ্য হয়ে উঠছে, তখন একজন মানুষ তাঁর দৃঢ় নীতিবোধ, সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও ত্যাগী নেতৃত্ব দিয়ে আজও কুষ্টিয়ার রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আস্থার প্রতীক হয়ে আছেন। তিনি হলেন সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী।
পিতা: সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম এ্যাড. সৈয়দ মাছ-উদ-রুমী
মাতা: মরহুমা সৈয়দা শাহানা বানু
জন্ম: ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৫২, কমলাপুর, খোকসা, কুষ্টিয়া।
সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমীর উন্নয়ন দর্শন মানুষকেন্দ্রিক, বাস্তবভিত্তিক এবং সময়োপযোগী। তিনি বিশ্বাস করেন, রাজনীতি মানেই মানুষের পাশে দাঁড়ানো। শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তবায়নই হলো তার মূল ব্রত। তার স্বপ্ন, কুমারখালী-খোকসাকে এমন এক আধুনিক, ঐতিহ্যবাহী ও মানবিক উপজেলায় রূপান্তর করা, যেখানে মানুষ গর্ব করে বলবে “এটাই আমার এলাকা।”
তিনি চান, একটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যাতে ছেলে-মেয়েরা দূরে না গিয়ে এলাকায় থেকেই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। তাঁত শিল্পে আধুনিকায়ন ও বাজার সম্প্রসারণ, যেনো তাঁতিরা মর্যাদা নিয়ে জীবন চালাতে পারে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গ্যারান্টি, যাতে হিন্দু-মুসলমান সবাই নিরাপদে ও শান্তিতে বসবাস করতে পারে। ইউনিয়নভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, বিশেষ করে গর্ভবতী মা ও শিশুদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা।কর্মসংস্থানের সুযোগ, যুবকদের চাকরি, মেয়েদের প্রশিক্ষণ, যেন কেউ বেকার না থাকে। রাস্তা-ঘাট, সেতু ও বাজার উন্নয়ন, যাতে যাতায়াত সহজ ও নিরাপদ হয়। মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তা, যেন দারিদ্র্য কোনো শিশুর ভবিষ্যৎ থামিয়ে না দেয়।
তাঁর অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ঘোরার ঘাট থেকে কয়া ও শিলাইদহসহ কুমারখালির গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে যাতায়াত সহজ করতে সংযোগ সেতু নির্মাণ, যা এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে।
এর পাশাপাশি ইতিহাস, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশেও তার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিলাইদহ কুঠিবাড়িকে আন্তর্জাতিক পর্যটনকেন্দ্রে রূপান্তর। কাঙাল হরিনাথ ও মীর মশাররফ হোসেনের সাহিত্যচর্চার জাতীয় পরিসরে পুনঃপ্রতিষ্ঠা। লালন শাহ স্মৃতি রক্ষায় গবেষণা কেন্দ্র ও সাংস্কৃতিক মঞ্চ নির্মাণ। বাঘা যতীনের বিপ্লবী জীবন শিক্ষাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা। আবরার ফাহাদের স্মৃতিতে মানবাধিকার সচেতনতা কেন্দ্র স্থাপন। খোকসা-কুমারখালিকে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রাণসত্তা হিসেবে গড়ে তোলা। ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর সংরক্ষণ ও পর্যটন উন্নয়ন। তরুণদের জন্য ‘ইতিহাস ও সংগ্রাম স্মারক ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা।
মানুষ বলেন “রুমী সাহেব থাকলে অন্তত কথা রাখেন। অন্যদের মতো শুধু আশ্বাস দেন না।”
সেই আস্থাই আজ তৈরি করছে একটি নতুন কুমারখালী-খোকসা। সমৃদ্ধ, মানবিক ও ঐতিহ্যভিত্তিক।
এটাই সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমীর রাজনীতি। স্বপ্ন নয়, বাস্তবকে ছুঁয়ে যাওয়া দায়িত্ববোধ।

Discussion about this post