৫ আগস্টের পর কিনেছেন অর্ধকোটির গাড়ি
এনামুল হক, কুষ্টিয়া: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর ব্যাপক চাঁদাবাজি, লুটপাট ও দখলবাজির অভিযোগ উঠেছে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল হক ও তার ক্যাডার বাহিনীর বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা বলেছেন, ৫ই আগষ্টের পূর্বে আর্থিক দৈন্যতার কারণে তিনি ছিলেন দিশেহারা ছিলেন আব্দুল হক। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর চাঁদাবাজি করে তিনি মাত্র ২৫ দিনের মাথায় ৪৪ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন ১টি মাইক্রো, ৩৩ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন ১টি প্রাইভেট কার। সেই সাথে তার নিজ গ্রাম গোয়াবাড়িয়াতে ৪তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে তৈরী করছেন আলীশান বাড়ী। সেখানেও তিনি ইতিমধ্যে ব্যয় করেছেন প্রায় ২০ লাখ টাকা।
জানাগেছে, আমলা সদরপুর এলাকায় আওয়ামীলীগের দখলে থাকা জলাশয় দখলে নিয়ে সমস্ত মাছ বিক্রি করে দিয়েছেন। আমলা স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক সাহাজুল ইসলামের কাছে লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে না পেয়ে তার দোকানঘর দখল করে নিয়েছেন। কাতলামারিতে পুকুর দখল করে নেয়ায় শফিউল্লাহ রাজ নামের একব্যক্তি হার্টএ্যাটাক করে মারা গেছেন। হুমকির কারণে তার পরিবারের সদস্যরা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
অপর দিকে আমলা সদরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফ্ফারের কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা চাঁদা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু তিনি মুখ খুলতে সাহস পাননি। আমলা কিন্ডার গার্টেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও শিক্ষক মাসুমুল ইসলাম মাঝির কাছে চাঁদা না পেয়ে তাকে স্কুল থেকে বিতাড়িত করেছেন। মাসুমুল ইসলাম মাঝি বলেন, এমপি থাকাকালীন সময় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু একবার আমার বাসায় এসেছিলেন এটাই আমার অপরাধ।
আমলা বিএডিসির ফার্মের ঠিকাদার রমজান আলী মেম্বারের কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন আব্দুল হকের ক্যাডার বাহিনী। রমজান আলী জানান, আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় আমাকে আব্দুল হকের ক্যাডার বাহিনী একের পর এক প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। হক বাহিনীর ভয়ে আমরা ভীতসন্ত্রস্থ।
মিরপুর এলাকায় অবস্থিত দিশা এনজিও, বড় বড় ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের কাছ থেকেও মোটা অংকের চাঁদা আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে আলহাজ্ব আব্দুল হকের বিরুদ্ধে। তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে এলাকাতে সৃষ্টি করেছেন চরম আতংক। হক বাহিনীর নাম শুনলেই আঁৎকে উঠছে মিরপুরবাসী। এলাকাবাসী বলছে আমরা আগেই ভালো ছিলাম।
মিরপুরের বিএনপি’র নেতারা বলেন, মিরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হক, ৫ই আগষ্টের পূর্বে যাকে বিএনপির প্রোগ্রামে আনতে তার বাড়ীতে মোটর সাইকেল পাঠানো লাগত, ৫ই আগষ্টের পরে তার ভাই মোশারফ হোসেন মুসা, ভাতিজা শাহীন, মাজহারুল ইসলাম মাঝা, আত্মীয় শাহাবুল ইসলাম, আব্দুল হামিদ, আশা মেম্বার ও আওয়ামীলীগের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে উপজেলাতে ব্যাপক চাঁদাবাজী ও জিম্মি করে অর্ধকোটি টাকা দামের গাড়ী, চারতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ী করা শুরু করেছে।
তার কর্মকান্ড জেলা উপজেলার সবাই অবগত। তার কারণে বিএনপির ভাবমূর্তি চরমভাবে নষ্ট হচ্ছে। বিভিন্ন অফিস আদালতে গিয়ে প্রভাব খাটাচ্ছে।
তার কথা যারা শুনতে নারাজ তাদেরকে হুমকি ধামকি প্রদান করছে এবং বলছে আমি কিন্তু আবার আগের রূপে ( জাসদ) ফিরে যাবো। আগের রূপ বলতে উনি ২০০০ সালের পুর্বে জাসদ গণবাহিনীর রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। অতিদ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে এলাকাবাসী সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। উপজেলার সাধারণ মানুষ জানান, বিগত ১৬ বছরে আওয়ামীলীগ নেতা কামারুল আরেফিন যে অত্যাচার নির্যাতন মানুষকে করতো তার ন্যয় আব্দুল হক সেই একই কাজ শুরু করেছে। মনে হচ্ছে কামারুলের জীবিত আত্মা হক সাহেবের উপর ভর করেছে।
এ বিষয়ে মিরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমি কারো কাছে চাঁদাবাজি করিনি। আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমার নিজের টাকা দিয়েই মাইক্রো ও প্রাইভেট কিনেছি, বাড়ী তৈরী করছি। আমার ব্যক্তিগত শত্রুরা মিথ্যা রটনা করছে।
এব্যাপারে মিরপুর উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক রহমত আলী রব্বান বলেন, মিরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল হকের চাঁদাবাজির কারণে মিরপুরবাসী অতিষ্ঠ। আমরা দলীয়ভাবে প্রতিবাদ করেও কোন সুরাহা করতে পারছিনা। বিষয়টি নিয়ে আমরা কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ করেছি। কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম বলেন আলহাজ্ব আব্দুল হকের চাঁদাবাজির বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ এসেছে। আমি বলতে চাই কুষ্টিয়ায় কোন চাঁদাবাজদের সঙ্গে বিএনপি’র সম্পর্ক নেই। একদল দূস্কৃতকারী পূর্ব ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে চাঁদাবাজী লুটপাট করে বিএনপি’র সুনাম অক্ষুন্ন করছে। যারা এধরনের অপকর্ম করছে তাদেরকে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিতে অনুরোধ করছি ।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিষ্টার রাগীব রউফ চৌধুরী বলেন, আলহাজ্ব আব্দুল হকের চাঁদাবাজির বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। শুধু তিনি নন অনেকেই এমন দুষ্কর্ম করে দলের ভাবমূতি নষ্ট করছে। আপনারা সবার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে সঠিক সংবাদ পরিবেশন করুন। আমরা তদন্ত করে দলীয় পর্যায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী বলেন মিরপুর বিএনপির সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি । এ ব্যাপারে কেন্দ্রকে অবহিত করা হয়েছে। দলের ভাবমূর্তি নষ্টকারীকে কোন ক্রমে প্রশয় দেয়া হবে না।
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন বলেন, মিরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। তাকে সর্তক করা হয়েছে। এরপরও যদি অভিযোগ ওঠে তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য আলহাজ্ব আব্দুল হক ২০০০ সালের আগে ছিলেন জাসদ গণবাহিনীর সক্রিয় নেতা। তিনি ছিলেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর দক্ষিণ হস্ত। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি’র তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক শহীদুল ইসলামের মাধ্যমে তিনি যোগদেন বিএনপিতে।
টি//দৈনিক দেশতথ্য//২২ সেপ্টম্বর,২০২৪//