সিলেট অফিস:
দখলে-দূষণে সিলেট বিভাগের ৩১টি নদ-নদী এখন চরম সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। বাড়িঘর তৈরিসহ বহুমুখী কাজে ভরাট করা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে দখল, ময়লা আবর্জনা ফেলে দূষণ ও ভরাট, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানার বর্জ্য দ্বারা দূষণ ও কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপের অভাবের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে সিলেটের নদ-নদী।
সিলেট বিভাগের ৩১টি বেশি সংকটাপন্ন নদীর মধ্যে সিলেট জেলার আছে ৯টি নদী, সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি নদী, মৌলভীবাজার জেলার ৫টি নদী ও হবিগঞ্জ জেলার ৬টি নদী।
সিলেট জেলার সংকটাপন্ন নদীগুলো হলো- সুরমা, কুশিয়ারা, ডাউকি, পিয়াইন, ধলাই, লোভা, সারি, বাসিয়া, চেঙ্গের খাল। সুনামগঞ্জ জেলার সংকটাপন্ন নদীগুলো হলো- ধোপাজান, যাদুকাটা, নলজুর, বৌলাই, রক্তি, চেলা, খাশিয়ামারা, কুশিউড়া, মাহরাম, মহাসিং, বোকানদী। মৌলভীবাজার জেলার সংকটাপন্ন নদীগুলো হলো- ধলাই, মনু, জুড়ী, কণ্ঠীনালা, গোপলা নদী। হবিগঞ্জ জেলার সংকটাপন্ন নদীগুলো হলো- খোয়াই, সুতাং, সোনাই, বরাক, কাষ্টি, করাঙ্গী।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের তথ্য অনুযায়ী সিলেট বিভাগের ১৭টি নদ-নদী দখল করেছেন ১১৯৪ জন। এর মধ্যে সুরমা নদী সিলেট অংশে দখল করেছেন ১৫১ জন ও সুনামগঞ্জ অংশে দখল করেছেন ৩২ জন। কুশিয়ারা নদী সিলেটে ২০০ জন, মৌলভীবাজারে ১২৫ জন ও হবিগঞ্জে ৯ জন। হবিগঞ্জ জেলার খোয়াই নদী ১৩৫ জন, বিবিয়ানা নদী ৩৫ জন, ডেবনা নদী ১৯ জন ও কাষ্টি নদী ৬ জন দখল করেছেন। সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী ৪৪ জন। লাউয়া নদী ৩২ জন। নলজুর নদী ৪৯ জন। রত্না নদী ৩৭ জন। টগী নদী ১৪ জন, কুশিউড়া নদী ৭০ জন। রক্তি নদী ২৪ জন। বৌলাই নদী ১৭ জন। মরাচেলা নদী ৪৪ জন দখল করেছেন। সিলেটের বাসিয়া নদী ১৮৬ জন ও সারি নদী ১১৭ জন দখল করেছেন।
সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্বনাথ উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একসময়ের খরস্রোতা নদী বাসিয়া। নদীটি দখল করে কেউ কেউ এখন দোকান, বসতঘর ও বিপণিবিতান নির্মাণ করেছেন। কেউবা নদীর চর দখল করে স্থাপনা বানিয়েছেন। এই নদীর উৎসমুখ ও নিষ্পত্তি মুখ দুটি ভরাট ও দখল হয়ে গেছে। তাই স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় দখল-দূষণে প্রায় ৬০০ ফুট প্রস্থের বাসিয়া নদী এখন কোথাও মরা খাল, কোথাও ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
দখল, দূষণের পাশাপাশি সিলেটের নদ-নদীগুলো সংকটাপন্ন হওয়ার আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে ভারতের পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে নেমে আসা পলিমাটিতে নদীর উৎসমুখ ভরাট হওয়া। এ ছাড়া মানুষের অসচেতনতা ও লোভের কারণে বর্তমানে অস্তিত্বসংকটে সিলেটের নদ-নদীগুলো।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ সাহেদা আখতার বলেন, কৃষিকাজ, যোগাযোগব্যবস্থা, পানীয় জল ও গৃহস্থালি কাজ, প্রতিবেশগত ভারসাম্য, অর্থনৈতিক, প্রাকৃতিক এমনকি আমাদের সংস্কৃতিতেও নদ-নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু সিলেটের অনেক নদ-নদীই বর্তমানে তার আসল রূপ হারিয়ে ফেলেছে। দখল-দূষণে জর্জরিত হয়ে সিলেট বিভাগে ৩১টি নদ-নদী এখন সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। অপরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা, বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে অবৈধ দখলের মাধ্যমে নদীগুলো ভরাট করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো নদী আজ আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বলা যায় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চলেছে দখলবাজি। এ ছাড়াও খনিজ সম্পদ আহরণের নামে নদী চলে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের দখলে। নদীরক্ষায় আমরা বেলা থেকে আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি সামাজিকভাবেও কাজ করছি। কিন্তু এই কাজ একা করা সম্ভব নয়। সবার সম্মিলিত উদ্যোগ ও আইন প্রয়োগে কঠোর না হলে আমাদের নদ-নদীগুলো রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে।

Discussion about this post