গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউনিয়নের গাড়াবড়িয়া গ্রামের চাঞ্চল্যকর ইলিয়াস আলী হত্যা মামলার এজাহার নামীয় দুই আসামিকে গ্রেফতার ও অজ্ঞাতনামা আসামিদের চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ।
গত দেড় মাসেও মামলার আসামি সাবেক ইউপি সদস্য আওয়ামীলীগ নেতা ময়নাল হোসেন ও তার স্ত্রী সুখিয়ারা খাতুনকে গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের দাবি করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার।
জানা গেছে, গত ৮মে ভোরে উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা ময়নাল হোসেনের ছেলে মাদকাসক্ত সবুজ আহমেদের ছুরিকাঘাতে তার চাচা শশুর গাড়াবাড়িয়া স্কুল পাড়ার মৃত লেকসার আলীর ছেলে ইলিয়াস হোসেন (৪৪) নিহত হয়।
এঘটনায় নিহত ইলিয়াস হোসেনের মেজো ভাই মাবুদ হোসেন বাদি হয়ে ঘাতক সবুজ আহমেদ ও তার পিতা সাবেক ইউপি সদস্য আওয়ামীলীগ নেতা ময়নাল হোসেন ও মা সুখিয়ারা খাতুনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর আগে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পরিবারের সদস্যরা হত্যাকান্ডের সময় সবুজকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করলেও অন্য আসামিদের গ্রেফতারের জন্য মানববন্ধন হলেও আসামি গ্রেফতারে তৎপর নেই প্রশাসন।
এদিকে হত্যাকান্ডের প্রায় দেড়মাস হতে চললেও সাবেক ইউপি সদস্য আওয়ামীলীগ নেতা ময়নাল হোসেন ও তার স্ত্রী সুখিয়ারা খাতুনকে গ্রেফতার ও অজ্ঞাতনামা আসামিদের চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই ওয়াহিদের বিরুদ্ধে নিস্ক্রিতার অভিযোগ তুলে নিহতের পরিবার বলছেন ঘাতক সবুজ আহমেদের পিতার অবৈধ কালো টাকার কাছে অসহায় হয়েছে পড়েছে ইলিয়াস হত্যা মামলা।
কাথুলী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান ফেরদৌস ওয়াহেদ বেল্টু বলেন, ইলিয়াস হত্যাকান্ড নিয়ে কোন ষড়যন্ত্র দেখতে চাইনা। অবিলম্বে এজাহার নামীয় সহ অজ্ঞাতনামাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে হবে অন্যথায় কঠোর কর্মসূচী দেয়া হবে।
নিহত ইলিয়াস হোসেনের চাচাতো ভাই আব্দুল জাব্বার বলেন, সবুজের বাবা চাচার কালো টাকার কাছে ধীরগতি মামলার তদন্ত কার্যক্রম। আসামীরা এলাকায় অবস্থান করলেও অজ্ঞাত কারনে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছেনা।
ঘাতক সবুজ আহমেদের স্ত্রী সালমা খাতুন বলেন, তার স্বামী সবুজ আহমেদের ফাঁসি না হলে সে জেলখানা থেকে বের হয়ে তাকে ও তার সন্তানকে হত্যা করবে।
তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, সবুজের বাবা, মা ও পরিবারের সদস্যদের নিরব ভুমিকার কারনে একের পর এক অপরাধ করলেও টাকার জোরে পার পেয়ে যায় সবুজ। তার পরিবারের লোকজন শাসন করলে হত্যাকান্ডের মত ঘটনা ঘটনোর সাহস পেতনা। সবুজের নানা অপকর্ম তার বাবা, মা ও চাচাদের জানানো হলেও কর্নপাত করতো না। একারনে সে বেপরোয়া হয়ে উঠে। পারিবারিক সুশিক্ষা না থাকার কারণে সবুজ মাদকাশক্ত থেকে ঘাতকে পরিনত হয়েছে। জীবনের ভয়ে স্বামীর ঘর থেকে পালিয়ে এসেছেন দাবি করে খুনির সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করার পাশাপাশি এজাহার ও অজ্ঞাত নামা আসামীদের গ্রেফতারের দাবি জানান সালমা।
নিহত ইলিয়াস হোসেনের মেজো ভাই আব্দুল মাবুদ হোসেন বলেন, এমন কুলাঙ্গার জামাই যেন আর কারো ঘরে না আসে। আমরা তার ফাঁসির পাশাপাশি হত্যাকান্ডের উসকানিদাতাদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। কালো টাকার প্রভাবে আসামিরা এখন পর্যন্ত ধোঁয়ার বাইরে রয়েছে।
স্থানীয় বিএনপি নেতা রহিদুল ইসলাম মাস্টার বলেন, সবুজ একজন কুলাঙ্গার জামাই তার কারণে সালমা খাতুন নানাভাবে নির্যাতিত হয়ে আসছে, তাই হত্যাকারী সবুজের ফাঁসির দাবি করছি। ইতোপূর্বে সালমা খাতুন বারবার তার শশুর সাবেক ইউপি সদস্য আওয়ামীলীগ নেতা ময়নালকে সবুজ সম্পর্কে অভিযোগ দিলেও সবুজকে শাসন করেনি। ছেলেকে শাসন করলে আজ এ ঘটনা ঘটতো না। সবুজের দ্রুত ফাঁসি দাবি করেন তিনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই ওয়াহিদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে একাধিকবার কল দেয়া হলে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বানী ইসরাইল বলেন, ইলিয়াস হোসেন হত্যার ঘটনায় সবুজ আহমেদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।