হেলাল উদ্দিন,দৌলতপুর(কুষ্টিয়া): গত বছরের ৫-ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে সারাদেশে বড় ধরনের পরিবর্তনের অংশ হিসাবে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলাও তার ব্যতিক্রম নয়।
এই উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়গুলো নিয়েও সাধারণ জনগণের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।এমনকি জনমনে রয়েছে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও নানা ধরনের প্রশ্ন?
এমন অবস্থায় উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধী ও অবৈধ ব্যবসায়ীরা নানাভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তাদের অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে।
তারই ধারাবাহিকতায় রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে লক্ষ্য করলে দেখা যায় উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বড় বড় ড্রাম ট্রাকে করে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছে উপজেলার চিহ্নিত মাটি কাটা ও বিক্রি চক্রের সদস্যরা এবং সেই মাটি ড্রাম ট্রাকে করে রাতারাতি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন অবৈধ ইটভাটায়, ফলে মাটি ব্যবসায়ীরা পাচ্ছে মোটা অংকের অর্থ এবং এই অর্থ মাটি ব্যবসায়ী শুধু একাই ভোগ না করে তাদের অবৈধ ব্যবসার বৈধতা নিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন মহলে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায় উপজেলার রিফাইতপুর ইউনিয়নের দিঘলকান্দি গ্রামের নতুন ঝাউদিয়া এলাকার বিশিষ্ট মাটি ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান নামের এক ব্যক্তি দৌলতপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে নানা ধরনের অবৈধ সুবিধা দিয়ে নিয়ম করে প্রতি বছর পুকুর খননের নাম করে তিন ফসলি জমির মাটি কেটে তা ড্রাম ট্রাকে পরিবহনের মাধ্যমে বিক্রি করে আসছে উপজেলার বিভিন্ন অবৈধ ইটভাটায়।এমন কার্যক্রমের ফলে রিফাইতপুর ইউনিয়ন তথা দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের আশপাশের নানা ধরনের গ্রামীণ অবকাঠামো,পাকা রাস্তা ও সড়ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।এত জনদুর্ভোগ চরমে।
রিফাইতপুর ইউনিয়নে বসবাসরত নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক ব্যক্তি জানান, গত কয়েকদিন আগে ইউনিয়নের গলাকাটি এলাকা থেকে থানা বাজার পর্যন্ত এক কোটি টাকা ব্যয় নির্মিত আমাদের এলাকায় নতুন রাস্তাটির যে ফাটল ধরেছিল বা পিচ সরে গিয়েছিল তা একমাত্র অবৈধ ড্রাম ট্রাক ও মাটি ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমানের লোভের কারণেই।তাই আমরা উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করব তিন ফসলী জমি রক্ষা ও কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত এলাকার বিভিন্ন রাস্তাগুলো রক্ষায় মাটি ব্যবসায়ী ও ড্রাম ট্রাক গুলোকে অনতিবিলম্বে এই উপজেলা থেকে নিষিদ্ধ করুন। আরো অভিযোগ আছে এ সকল বিষয়ে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করতে গেলেই এলাকাবাসীকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয় নানা ধরনের মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলায়। আর এমন সুযোগ কাজে লাগিয়েই মতিয়ার রহমান বছরের পর বছর করে যাচ্ছে তার অবৈধ মাটির ব্যবসা।
অন্যদিকে মাটি পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত ড্রাম ট্রাকের মাত্রা অতিরিক্ত ওজনের কারণে গ্রামের ভেতরে যে পাকা সড়কগুলো রয়েছে তা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
দৌলতপুর উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী শামিম আলমের তথ্য মতে গ্রামগঞ্জের ভিতরে নির্মিত রাস্তার লোড ক্যাপাসিটি থাকে ১০/১২ টন যখনই সেই রাস্তায় ৫০ টনের অধিক যানবাহন চলাচল করবে তখন সেই রাস্তাটিকে আর টিকানো সম্ভব হবে না। তাই এলাকাবাসীর সচেতনতা ছাড়া গ্রামীন সড়কের পাকা রাস্তাগুলো রক্ষা করা বড়ই মুশকিল।
এ বিষয়ে জানার জন্য মতিয়ার রহমানের ব্যবহৃত মুঠো ফোনে কল দিলে তার নাম্বারটি ওই সময় বন্ধ পাওয়া যায়।
অন্যদিকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হোসেন আহমেদ জানান, মাছ চাষের জন্য পুকুরের কাদা মাটি তুলে পাড়ে জমা রাখার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু উনি যে মাটি বিক্রি করছে এটা আমাদের জানার বাহিরে।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী’র সাথে প্রতিবেদক কথা বললে তিনি জানান, বিভিন্ন সহায়তার ক্ষেত্রে মতিয়ার রহমানকে মাছ চাষের জন্য পুকুর উপযোগী করে তোলার জন্য বলা হয়েছে। মাটি কেটে বিক্রির জন্য নয়।তাকে এরই মধ্যে আমরা কয়েকবার ওয়ার্নিং দিয়েছি যদি সে না শুনে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এবং পরবর্তীতে তিনি এলাকার জনগণের উদ্দেশ্যে আরো নির্দেশনা দেন যদি রাতে ড্রাম ট্রাকে করে পূনরায় সে মাটি বিক্রি করে তাহলে গ্রামের লোকজন প্রতিরোধ গড়ে তুলে মাটি পরিবহনের ড্রাম ট্রাক আটকে দিন।

Discussion about this post