দৌলতপুর প্রতিনিধি : তীব্র শীতের কারণে ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়ে পুকুরে চাষকরা পাঙ্গাস মাছ মরে পুকুর হয়েছে সাবাড়। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কয়েক কোটি টাকার মাছ মরে যাওয়ায় মাছ চাষীরা এখন সর্বশান্ত। প্রতিদিনই মাছ মরে পুকুরে ভেসে উঠলেও মৎস্য দপ্তরের কর্মকর্তারা খোঁজ নেননি এখনও। এমন অভিযোগ মৎস্য চাষীদের।
দৌলতপুর উপজেলার কিশোরীনগর গ্রাম যা পাঙ্গাস পল্লী হিসেবে পরিচিত। এই গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে এক বা একাধিক পুকুর। এ গ্রামে সহ¯্রাধিক পুকুর রয়েছে। আর এসব পুকুরে চাষ হয়ে থাকে পাঙ্গাস মাছের। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। আমিসের চাহিদা পুরণে এ গ্রামের মাছ চাষীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
নিজেরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখার ক্ষেত্রেও তাদের অবাদান অনস্বীকার্য। তীব্র শীতের কারণে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ভাইরাস জনিত ফাঙ্গাস রোগে ওইসব পুকুরের মাছ মরে সাবাড় হয়ে তারা এখন নিঃস্ব ও সর্বশান্ত। কয়েক কোটি টাকার মাছ মরে দূর্গন্ধ ছাড়ালেও সে গন্ধ এখনও মৎস্য কর্মকর্তার নাকে পৌঁছাইনি বলে মাছ চাষীদের অভিযোগ।
জহুরুল ইসলাম নামে একজন মাছ চাষী অভিযোগ করে বলেন, ভাইরাস জনিত রোগের কারনে কিশোরীনগর গ্রামের পাংগাস চাষীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে গ্রামের অধিকাংশ মাছ চাষী নিঃস্ব ও সর্বশান্ত হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানীর ঔষধেও কোন কাজ হচ্ছেনা। তিনি অভিযোগ করেন দৌলতপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অদ্যাবদি কোন খোজ খবরও নেননি।
মোমিনুল ইসলাম নামে অপর এক ক্ষতিগ্রস্থ মাছ চাষী বলেন, তার ১২ বিঘা পুকুরের ৬ বিঘার মাছ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তার প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার মাছ মরেছে। তিনি বলেন অনুদান চাইনা, চাই শুধু মৎস্য কর্মকর্তাদের সঠিক পরামর্শ।
মাছ চাষী মো. সাহাব উদ্দিন জানান, ৬ বিঘা পুকুরে ১০ লক্ষ টাকা খরচ করে মাছ চাষ শুরু করেছিলাম। কয়েক সপ্তাহে ভাইরাস রোগে ৮ লক্ষ টাকার মাছ মারা গেছে। এখন সে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় ও বিভিন্ন এলাকার খুচরা ও পাইকার মাছ ব্যবসায়ীরাও এ গ্রামের মাছের ওপর নির্ভরশীল। তারা প্রতিদিন এখান থেকে মাছ ক্রয় করে বিভিন্ন হাটে বাজারে বিক্রয় করে থাকেন। তারাও এখন কর্মবিমুখ হয়ে পড়ছেন। তারা বলছেন, মাছ কিনতে এসে আমরা হতাস, সব খামারীদের পুকুরে মাছ মরে ভাসছে। এতেকরে মাছের ঘাটতি শুরু হয়েছে।
তবে মাছ মরে যাওয়ার বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হোসেন আহমদ বলেন, শীতকালে মাছের রোগ হওয়ার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি। পানির তাপমাত্রা কমে গেলে মাছ খাদ্য গ্রহন করতে পারেনা। অক্সিজেন কমে গেলে মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ফলে শীতকালে মাছের রোগ বালাই বেশি হয়।
কুষ্টিয়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারী বলেন, শীতে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় মাছের খাবারও কমে যায়। পানিতে অক্সিজেন কমে যাওয়ায় মাছেরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারায়। ফলে শীতকালে মাছের রোগ বৃদ্ধি পায়। মাছের রোগ প্রতিরোধে চাষীদের প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ দিচ্ছে মৎস্য দপ্তর।
মাছ চাষে স্বাবলম্বী ক্ষতিগ্রস্থ চাষীরা আবারও যাতে ঘুরে দাড়াতে পারে, পারে দেশের অর্থনীতির গতি স ারে অবদান। সে দিকটি নজরে নেওয়ার দাবী সংশ্লিষ্ট মহলের।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

Discussion about this post