কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পুলিশ আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে মেহেদি হাসান সাগর ওরফে সাকবর (৪০) নামে এক কৃষকদল নেতার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়নের মহিষকুন্ডি মাঠপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। সাকবর কুষ্টিয়া জেলা কৃষকদলের আহŸায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।
সাকবরের পরিবার ও দলীয় নেতাদের অভিযোগ, আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে সামনে রেখে বুধবার রাতে পুলিশ স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালায়। এরই অংশ হিসেবে ওইদিন রাতে সাকবরের মহিষকুন্ডি মাঠপাড়া গ্রামের বাড়িতে অভিযান চালায় দৌলতপুর থানা পুলিশ। অভিযানের ঘটনাটি টের পেয়ে সাকবর বাড়ির ছাদের পিছন দিয়ে নেমে পালিয়ে চাচার বাড়ি যাওয়ার সময় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে তিনি মারা যান। পরিবারের সদ্যরা জানান, সাবকর দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন, তার শারীরিক অবস্থা ভাল ছিল না।
শরীরের এই অবস্থায় পুলিশের অভিযানে তিনি আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এতেই তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান বলেন পরিবারের দাবি। জানা গেছে, এলাকায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বেশ কয়েক বছর আগে সাকবর ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্ট কারাখানা স্থাপন করে ব্যবসা শুরু করেন। মেয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে তিনি দু’দিন আগে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। আজ শুক্রবার মেয়ের বিয়ের দিনক্ষণ নির্ধারণের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল।
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন সরকার অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ সাকবরের মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না। এ নেতার দাবি, কোন ওয়ারেন্ট ছাড়ায় সাকবরের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। তিনি এ ঘটনার তদন্তের দাবি জানান। তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর নেতা কর্মীদের ঢাকায় যাওয়া ঠেকাতে পুলিশ এভাবে কোন অভিযোগ ছাড়াই ধড়পাকড় শুরু করেছে।
তবে সাকবরের মৃত্যু নিয়ে পুলিশের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়। পর্যায়ক্রমে দৌলতপুর থানার ওসি, ভেড়ামারা সার্কেলের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার ও কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা কেউ ফোন ধরেননি।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে মহিষকুন্ডি বাজার জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে সাকবরের জানাযা নামাজ শেষে মহিষকুন্ডি মাঠপাড়া কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। জানাযা নামাজে বিএনপি দলীয় ও অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও গণমাধ্যম কর্মী, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ অংশ নেয়। সকবরের অকাল মৃত্যুতে জানাযা নামাজে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অনেকে আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
মৃত্যুকালে সাকবর স্ত্রী ও ৩কন্যাসহ আত্মীয় স্বজন ও অসংখ্য শুভাকাঙ্খী রেখে গেছেন। সাকবরের অকাল মৃত্যুতে দৌলতপুর বিএনপি ও জেলা কৃষক দলের নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ২৬ অক্টোবর ২০২৩