Print Date & Time : 5 July 2025 Saturday 12:07 pm

দৌলতপুরে সাংবাদিককে ধাক্কা দেয়া গাড়ির চালক কারাগারে

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সাংবাদিক তাশরিক সঞ্চয়কে ধাক্কা দেয়া অবৈধ গাড়ির চালক তরিকুল ইসলামকে (২৭) কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

তাশরিক সঞ্চয় মাছরাঙা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

গত ৮ জানুয়ারি সকালে পেশাগত দায়িত্ব পালনে মোটরসাইকেলে করে পাশের উপজেলা মিরপুরের উদ্দেশে যাওয়ার পথে দৌলতপুর উপজেলার শীতলাইপাড়া এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন সাংবাদিক তাশরিক সঞ্চয়।
ওই এলাকার একটি ইটভাটার কাজে ব্যবহৃত শ্যালো ইঞ্জিনের অবৈধ স্টিয়ারিং গাড়িটি তাকে ধাক্কা দিয়ে গুরুতর আহত করে চালক তরিকুল পালিয়ে যান।

এ ঘটনায় সাংবাদিক তাশরিক বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় একটি মামলা করেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর বের হলে প্রশাসনের কিছুটা তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে মামলার প্রেক্ষিতে আসামি তরিকুলকে গ্রেপ্তার এবং অবৈধ গাড়িটির সন্ধানে ছিল দৌলতপুর থানা পুলিশ। কিন্তু তরিকুল পুলিশের কাছে ধরা দেননি।

সোমবার (১৭ জানুয়ারি) মামলার আসামি তরিকুল ইসলাম কুষ্টিয়ায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে অবৈধ গাড়িটির চালক এ উপজেলার আড়িয়া গ্রামের তরিকুলকে জেলা কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ। তরিকুল আদালতে গিয়ে ধরা দিলেও অবৈধ গাড়িটি এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানান দৌলতপুর থানার ওসি এসএম জাবীদ হাসান।

চিকিৎসাধীন সাংবাদিক তাশরিক সঞ্চয় বলেন, ওইদিন সহযোগিকে সঙ্গে নিয়ে দৌলতপুর থেকে মিরপুর উপজেলায় পূর্বনির্ধারিত একটি অনুষ্ঠান কভার করতে যাচ্ছিলাম। শ্যালো ইঞ্জিনচালিত লোহার ওই অদ্ভুত গাড়িটি বাঁ দিকের পার্শ্ব রাস্তা থেকে দ্রুত বেগে আচমকা উঠে এসে আমাদের প্রায় থেমে থাকা মোটরসাইকেলের সামনের অংশে ধাক্কা দেয়। এতে আমার কাঁধের হাড় ভেঙেছে, মোটরসাইকেল এবং সঙ্গে থাকা যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি জানান, শ্যালো ইঞ্জিনের গাড়িটির চালকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য মূল রাস্তা থেকে তারা মোটরসাইকেলের হর্ন বাজিয়ে চিৎকার করেও ব্যর্থ হন।

এদিকে ড্রাম ট্রাক নামে পরিচিত বিশেষ ধরনের ভারি ট্রাক এবং শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নানা ধরনের অবৈধ গাড়ির নিয়ন্ত্রণহীন চলাচলের কারণে দৌলতপুরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এসব গাড়ির বেপরোয়া চলাচলে মানুষের মাঝে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।

উল্লেখ্য, নদী থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করা বালু বহন, ইটভাটার মাটি বহন ও সস্তায় ইটভাটা সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে শ্যালো ইঞ্জিনের এসব অবৈধ গাড়ি ব্যবহার করা হয়। যার কোনো অননুমোদন নেই। এসব অবৈধ গাড়ির চলাচল বন্ধের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু পদক্ষেপ কামনা করেছেন দুর্ঘটনার আতঙ্কে থাকা এলাকাবাসী।

অবৈধ গাড়ি চালক তরিকুল ইসলামকে কারাগারে নেয়ার পর সাংবাদিক তাশরিক সঞ্চয় ফেসবুকে স্ট্যাটাসে যা লেখেন : ‘বিকট শব্দ আর বেপরোয়া চলাচলের সম্পূর্ণ অবৈধ এবং ভয়ঙ্কর ঝুঁকিপূর্ণ এই কথিত গাড়ি পথঘাটে নিষিদ্ধ হোক। আর কোনো পরিবার এই গাড়ির আঘাতে স্বজন হারা না হোক। কথিত এসব গাড়ির বিড়ম্বনায় কেউ পঙ্গু না হোক। অহেতুক এমন ভয়ঙ্কর অবৈধ পেশায় নিজের শ্রম বিক্রি করতে গিয়ে এই সব গাড়িতে কোনো চালক-শ্রমিকও হতাহত না হোক। কাউকে কারাগারে যেতে না হোক সেই প্রত্যাশা রইলো। আশা করি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা অচিরেই দৌলতপুরকে ড্রাম ট্রাক আর শ্যালো ইঞ্জিনচালিত গাড়ির বেপরোয়া কবল থেকে মুক্ত করবেন। এই মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবেন সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর ব্যবসায়ী এবং শ্রমজীবীরা। নিজে নিরাপদ থাকুন অন্যকে নিরাপদ রাখুন।’

দৈনিক দেশতথ্য//এল//