Print Date & Time : 22 April 2025 Tuesday 3:51 pm

দৌলতপুর আওয়ামী লীগের কমিটিতে বঞ্চিত ত্যাগী নেতারা : ক্ষুব্ধ কর্মীরা

দৌলতপুর প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এ কমিটিতে একই এলাকার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ একই ইউনিয়নের অন্তত ১০জনের স্থান হলেও কমিটিতে স্থান হয়নি দৌলতপুর আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা কর্মীদের। এনিয়ে দৌলতপুরের আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

প্রকাশিত কমিটিতে দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ-পশ্চিম ফিলিপনগর গ্রামের দৌলতপুর আসনের এমপি এ্যাড. আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশাহ্কে সভাপতি ও এ্যাড. শরীফ উদ্দিন রিমনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ফিলিপনগর ইউনিয়নের একই পাড়ার ও একে অপরের প্রতিবেশী হওয়ার সুবাধে ৭১ সদস্যের কমিটির মধ্যে ফিলিপনগর ইউনিয়নেরই বিভিন্ন পদে অন্তত ১০জন আছেন ওই কমিটিতে। বর্তমান এমপি সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ সভাপতির হওয়ায় তার শ্বশুর একসময়ের দৌলতপুর জাতীয় পার্টির সভাপতি পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে দৌলতপুর বিএনপি’র সহ-সভাপতি আব্দুল হামিদকে নবগঠিত দৌলতপুর আওয়ামী লীগের কমিটিতে রাখা হয়েছে। এমপি’র শ্বশুর আব্দুল হামিদ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন কিনা তাও কারো জানা নেই বলে বিক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় পড়কালীন এক নেতাকে নবগঠিত ওই কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে বলে ফিলিপনগর এলাকার সাবেক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা কর্মীরা জানিয়েছেন। এছাড়াও একই পরিবারের অর্থাৎ সাবেক এমপি রেজাউল হক চৌধুরীসহ তার দুই ভাইকে কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হলেও কমিটিতে জায়গা হয়নি পরপর তিনবারের নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নির্যাতনে শিকার ফিরোজ আল মামুনের। জায়গা হয়নি দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রবীন নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রেজওয়ানুল হক রেজুর, জায়গা হয়নি দৌলতপুর আওয়ামী লীগ পরিবার ও দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শামছদ্দিন আহমেদের ছেলে বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সাক্কির আহমেদের, জায়গা হয়নি চরাঞ্চলের একসময়ের ত্রাস লালচাঁদ বাহিনীর হাতে নির্যাতিত সাবেক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা ওরুশ কবিরাজের, জায়গা হয়নি ২০০১ সালের নির্বাচনের পর নির্যাতন ও অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে এলাকা ছাড়তে হয়েছিল সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মইন উদ্দিন মোহনের। জায়গা হয়নি নির্যাতিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাসির উদ্দিনের। এরকম অসংখ্য দৌলতপুর আওয়ামী লীগ পরিবার ও আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মী আছেন যাদের দৌলতপুর আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটিতে রাখা হয়নি। রাখা হয়নি শেহালার নির্যাতিত নেতা রাশেদ মিজান টুকুকে। আবার কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সহ-সভাপতি পদে জায়গা হয়েছে এক কিশোরীর সাথে অপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হওয়া বিতর্কিত ব্যক্তি আব্দুর রশীদ বাবলুর। এ নিয়ে চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। ক্ষুব্ধ মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীরা। কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. শরীফ উদ্দিন রিমনের পরিবারেরও কয়েকজনকে পদ দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে দৌলতপুর আওয়ামী লীগের কমিটিকে দলীয়করণ না করে আত্মীয়করণ করা হয়েছে বলেও ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা অভিমত ব্যক্ত করেছে।

নতুন কমিটির বিষয়ে নির্যাতিত সাবেক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা ওরুশ কবিরাজ তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নতুন কমিটিকে সাধুবাদ জানাতে পারছিনা। কমিটি নিয়ে ক্ষোভ আছে, দুঃখ আছে। এ নিয়ে প্রয়োজনে দলের ত্যাগী ও দুঃসময়ের নেতা কর্মীদের সাথে নিয়ে প্রতিবাদে মাঠে নামবো। কমিটিতে অনুপ্রবেশকারী বিএনপি-শিবিরদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলবো।

কমিটির পদ বঞ্চিত তিন তিনবারের নির্বাচিত আড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ আল মামুন বলেন, আল্লাহ্ যা করে ভালোর জন্যই করে। আমাদের কমিটিতে না রেখে ওরা ভাল থাকুক। জামায়াত বিএনপি নিয়ে গঠিত কমিটি নিয়ে তারা দল ভাল চালাক। আমাদের প্রয়োজন নাই বলে কমিটিতে রাখেনি, এজন্য আমি খুশি। আমাদের ঘর থেকে যখন বাইরে বের করে দিয়েছে, তখন আর কি করবো, রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে টিকে থাকতে পারি কিনা দেখি।

তবে এবিষয়ে কথা বলতে দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. শরীফ উদ্দিন রিমনের সাথে স্থানীয় এক গণমাধ্যম কর্মী মোবাইলফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য, গত বুধবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান ও সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী স্বাক্ষরিত ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির তালিকা দৌলতপুর আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটির নেতৃবৃন্দের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপরই দৌলতপুরে সর্বত্র আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে।