কম ঘুষে বেশি ঘুরাঘুরি, বেশি ঘুষে কাজ তাড়াতাড়ি
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা ভূমি অফিসে ঘুষ-দুর্নীতি ও দালাল ছাড়া কোন কাজই হয় না। দালাল না ধরলে নড়ে না কোন ফাইল। ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের মূল্য তালিকা সম্বলিত সাইনবোর্ড থাকলেও তা’ কেবলই লোক দেখানো মাত্র। সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী সেবা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। এমন অভিযোগ আকছার।
অভিযোগকারীরা বলছেন ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারিরা থাকেন দালাল পরিবেষ্টিত। দালালদের কাছে এমন কোন কাজই নেই যা তাদের অসাধ্য। বৈধ কাগজপত্র থাকা স্বত্বেও ঘুষের রেটে হেরফের হলেই প্রকৃত ভূমি মালিকদের হতে হয় চরম হয়রানির শিকার।
জমির নামজারি কেস জমা দিতেই লাগে ১০০ থেকে ২০০ টাকা। নামজারি করতে সরকার-নির্ধারিত ফি যেখানে ১ হাজার ১৫০ টাকা। সেখানে ভুক্তভোগীদের গুনতে হয় হাজারো টাকা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের সত্যতা খুঁজতে পরিচয় গোপন রেখে গ্রাহক সেজে এক দালালের কাছে নামজারি করার কথা বলতে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, কাগজপত্র সঠিক থাকলে ‘খাজনাসহ ৮,০০০/= টাকায় নামজারি পর্চা করে দিতে পারবেন।’
খাজনা পরিশোধ রয়েছে এমন কথা জানালে দালাল বলেন তা’ হলে ৫,০০০/= টাকা লাগবে। দালাল আরো বলেন, কাগজপত্র ঠিক না থাকলে অফিসকেই দিতে হবে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। সে কারনে কাগজপত্র ঠিক না থাকা নামজারি কেস ১৫ হাজার টাকার নিচে হাতেই নেয় না বলে জনায় ওই দালাল। দালাল-কর্মচারী সবাই মিলে দৌলতপুর ভূমি অফিসে গড়ে তুলেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। দালাল-কর্মচারীর নেই কোন লুকোচুরি, লাজ-লজ্জা ও ভয়ভীতি।
অনিয়মে প্রতিনিয়ত সর্বস্বান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। নামজারি শুনানীর দিনে নির্ধারিত লোকের অনুপস্থিতিতে দালাল কিংবা কর্মচারীরায় করে দেয় খারিজসহ সব ধরনের কাজ। দলিলপত্র ঠিক থাকলে টাকার পরিমাণ কম রাখা হয়। একটু এদিক-সেদিক হলে আর রক্ষা নেই, কাড়ি কাড়ি টাকা ঢেলেও নিস্তার মেলে না। এমনকি ‘র’ এর কাছে ‘ব’ মানে নিচে বিন্দু না পড়লেই টাকার অংক বেড়ে যায় কয়েক হাজার।
জানাযায়, দৌলতপুর উপজেলা ভূমি অফিসসহ ১৪টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রায় দুই শতাধিক দালাল সক্রিয়। তাদের হাত দিয়েই নামজারি কেস একসাথে জমা করে প্যাকেজ হিসেবে জমির মালিক ছাড়াই জমা দেয় খারিজ করার জন্য। এই সব দালাল ও অসাধু কর্মচারীরা নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে উপজেলা ভূমি অফিসসহ সকল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কাজকর্ম।
যারা টাকার বিনিময়ে নামজারী আবেদন করে তাদের নামজারি কেসের রিপোর্ট হয়ে যায় কোন বাঁধা ছাড়াই। কয়েকজন ভূক্তভোগী বলেন, ভূমি অফিসের দেয়ালও যেন ঘুষ খায়।
ভূমি অফিসের ঘুষ দুর্নীতির বিষয় সকলেরই জানা। তারপরও কোন প্রতিকার নেই। প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেনের এমন দৃশ্য দেখলে মনে হবে এ যেন সর্ষের মধ্যে ভূত। অফিসের সিসি ক্যামেরাগুলো সুবিধাজনকভাবে বসানো থাকে। কয়েকটি কক্ষে অকেজো করে অথবা ক্যামেরার মূখ অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখা হয় যাতে ঘুষ লেন-দেনের কোন ডকুমেন্ট ক্যামেরায় না আসে।
সরেজমিনে দৌলতপুর ভুমি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, নামজারি কেস জমা নেওয়ার সময় ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে ঘুষ নিচ্ছে অফিস সহায়ক মনোয়ার হোসেন মিন্টু এবং প্যাকেজ খারিজ করে দেওয়ার জন্য প্রকাশ্যে টাকা ঘুষ নিচ্ছে সার্ভেয়ার আহসানুজ্জামান। তাদের দু’জনকে কিসের টাকা নেওয়া হচ্ছে? এমন প্রশ্নে কোন উত্তর দিতে পারেননি তারা।
এব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহিদুল ইসলাম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘুষ নেওয়ার মত কোন কিছু হয়না আমার অফিসে, যদি প্রমান হয় আমি ব্যবস্থা নেবো বলে জানান।
সেসময় তিনি সংবাদিকের করা ঘুষ নেওয়ার ভিডিও কিংবা ছবি থাকলে তাকে দিতে বলেন তিনি। তবে এর পূর্বে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর বক্তব্য নেওয়ার জন্য কম পক্ষে পনের বার ফোন করেছিলেন এই প্রতিবেদক।
খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ২৮ আগষ্ট ২০২৩

Discussion about this post