এনামুল হক কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার শ্যামপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (আইসি) এসআই আশিকের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি প্রদর্শন, ঘুষ গ্রহণ এবং মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দৌলতপুর উপজেলার শেহালা গ্রামের সৌদি প্রবাসী খোরশেদ সম্প্রতি দেশে ফেরেন। অভিযোগ রয়েছে, এসআই আশিক ও তার সঙ্গীরা খোরশেদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তল্লাশির নামে মাদকের মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখান এবং তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। প্রথমে পরিবারের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হলেও বাকি টাকা দিতে না পারায় খোরশেদকে বাড়িতে থাকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তার স্বজনরা।
খোরশেদের পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, গত ২৭ জুন রাত ১১টা ৩০ মিনিটে এসআই আশিক আবারও ঘুষ দাবি করেন এবং ১৫ জুলাই রাত ১টার দিকে খোরশেদের বাড়ির গেটে লাথি মেরে গালিগালাজ করেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রায় প্রতিদিনই রাতের বেলায় এসে পরিবারের সদস্যদের অশ্লীল ভাষায় হেনস্তা করছেন।
একই গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জমির উদ্দিন জানান, “এসআই আশিক আমার কাছে এক লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করেন। টাকা দিতে না চাইলে তিনি আমাকে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। এ ঘটনায় আমি আতঙ্কিত।”
স্থানীয় সমাজকর্মী মোমিরুল ইসলাম বলেন, “এসআই আশিক নিয়মিত মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারা গ্রহণ করেন। আমি প্রতিবাদ করায় তিনি আমাকে হুমকি দিয়েছেন এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়েছেন।”
এছাড়া স্থানীয় শিক্ষক, সমাজ প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, এসআই আশিক একজন বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি জনগণকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করেন, এবং কেউ প্রতিবাদ করলে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করেন।
বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে জানা যায়, এসআই আশিক গত জুলাই মাসে দায়িত্বে থাকাকালীন শেহালা, গোয়ালগ্রাম ও নাটনা পাড়াসহ আশপাশের এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এবং মাসোহারা নিয়ে অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন। সম্প্রতি তিনি আবারও শ্যামপুর ফাঁড়িতে দায়িত্ব গ্রহণের পর সেই চক্র ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ শিক্ষক জানান, “আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে কিছু অনিয়ম সম্পর্কে জানাতে গেলে তিনি খারাপ আচরণ করেন এবং বলেন, ‘আমার বাড়ি বগুড়ায়, আমার সঙ্গে হিসাব করে কথা বলবেন।’”
এলাকাবাসীর প্রশ্ন—কোন ‘খুঁটির জোরে’ একজন বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা আবারও আগের কর্মস্থলে ফিরে এসে ঘুষ বাণিজ্য ও মাদক চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারছেন?
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, আমি তো নতুন এসেছি কিছু জানান নাই আমার তবে “বিষয়টি তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
অন্যদিকে, শ্যামপুর ফাঁড়ির এসআই আশিক বলেন, “আমি একটি মামলার আইও। সেই কারণে আমার বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না, যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।”
স্থানীয় জনগণ কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি এবং ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা এসআই আশিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।