ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল বনবিভাগে অতিমাত্রায় গাছ চুরি, অবৈধ দখল, যত্রতত্র পাহাড় কাটা, বনের ভেতর ২ শতাধিক করাতকল, ২০টি ইটভাটার কালো ধোঁয়া,শত শত পোল্ট্রি ফার্ম ও কলকারাখানার অপরিশোধিত আবর্জনায় বনভূমির পরিবেশ দিন দিন হয়ে পড়ছে বিপর্যস্ত।
অভিযোগ রয়েছে, রক্ষকরাই বনের গাছ চুরি করতে সুকৌশলে করাত কল স্থাপনের সুযোগ করে দিয়ে চোরদের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। তারা বনের জমি রক্ষা করার বদলে টাকার বিনিময়ে বসতবাড়ি ও দোকানঘর স্থাপন এবং প্রভাবশালীদের কাছে ফসল চাষে অলিখিত লিজ দিয়ে দখলের সুযোগ করে দিচ্ছে। যার ফলে সাগরদিঘী ও ধলাপাড়া সদর বিটে বন নেই বললেই চলে। সেখানে বনের গাছের পরিবর্তে গড়ে উঠেছে প্রভাবশালীদের লেবুর বাগান, পেঁপের বাগান, কলার বাগান, আম ও আনারসের বাগান।
এভাবে ঘাটাইল বনবিভাগে শত শত একর বনের জমি বেদখল হয়ে গেছে। তাছাড়াও বনের ভিতর ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। একদিকে বনের গাছ ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করায় ধ্বংস হচ্ছে বন, অপরদিকে কালো ধোঁয়ায় সর্বক্ষণ পরিবেশ দূষিত করছে।
পরিসংখ্যানে জানা যায়, দেশে জনসংখ্যার তুলনায় বনজসম্পদ ও বনভূমি অপ্রতুল। পরিবেশ রক্ষায় বনকে রক্ষা করার পরিবর্তে দায়িত্বপ্রাপ্তদের নানামুখী বাণিজ্যের খবর বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত হলেও অদৃশ্য ইশারায় প্রতিরোধ ব্যবস্থা থেমে যাচ্ছে বার বার। ফলে প্রত্যক্ষ প্রমাণের পরেও আইনগত ব্যবস্থা না থাকায় বন ধ্বংসের নানামুখী বাণিজ্যে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে স্থানীয় বিট কর্মকর্তা ও তাদের নিজস্ব দালালরা।
গত ২৯মার্চ সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সাগরদিঘী, ধলাপাড়া ঝড়কা বটতলী বিট কর্মকর্তার নানা অনিয়মে প্রতিদিন অতিরিক্ত গাছ চুরি, অবৈধ দখল যত্রতত্র পাহাড় কাটা ও বনের ভিতর করাত কল স্থাপন করায় বন দিন দিন ধ্বংস হচ্ছে। কিন্তু পরিবেশ রক্ষায় বন সংরক্ষণ করতে প্রতি বছর সরকারের খরচ হয় কোটি কোটি টাকা। রক্ষকদের সেদিকে নজর না থাকায় বনের পরিবেশ ক্রমেই হয়ে উঠেছে বিষাক্ত, হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও গাছ। এ বিষযে বন রক্ষায় মাঝেমধ্যে সভা সেমিনার করা হলেও অতিরিক্ত গাছ চুরি, অবৈধ দখল, যত্রতত্র পাহাড় কাটা, বেআইনি করাত কল স্থাপন ও বনের ভিতরে ইটভাটা স্থাপন বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ বার বার থেকে যাচ্ছে উপেক্ষিত।
বনের এহেন অবস্থার ফলে বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা উপজেলা শাখার সভাপতি সুকুমার সরকার সরকারি নীতিমালার পরিপন্থি করাত কল, ইটভাটা স্থাপন, লালমাটির টিলা কাটা, জবরদখল ও বন উজাড়ে সরকারের রাজস্ব কর ভ্যাট থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মর্মে ১৬ মার্চ রেঞ্জ অফিসকে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রমের জন্য চিঠি দিয়েছেন।
ঘাটাইল বন বিভাগের নানামুখী অনিয়মের অবস্থা দেখে খোদ উপজেলা বন ও পরিবেশ কমিটির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম লেবু বলেন, কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে বনের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আমি জেলা আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির মিটিংয়ে এক দাগী চোরের নাম উল্লেখ করে কথা বলেছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এখনো প্রতিদিনি গাছ চুরি, পাহাড় কাটা চলছেই। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে বন বলতে আর কিছুই থাকবে না।
এসব বিষয়ে ধলাপাড়া রেঞ্জের দায়িত্বে থাকা রেঞ্জার সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকার চাইছে দেশের উন্নয়ন। আমার তো বাধা দিতে পারি না। সরকার যদি বনের ভিতরে রাস্তাঘাট করে তবে বনের ক্ষতি হবেই।
ধলাপাড়া ও মধুপুর উত্তর টাঙ্গাইল রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. আবুল সালেহ্ বলেন, মিডিয়ার সঙ্গে আমাদের কথা বলতে মানা আছে। আমাদের সবার কথা একমাত্র ডিএফও বলবেন।
টাঙ্গাইল জেলা বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাজ্জাদুজ্জামান জবরদখলের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, স্থানীয়রাই বনের জমি জবরদখল করছে। আমাদের জনবল অনেক কম তারপরেও আমাদের সাধ্যের মধ্যে থেকে জবর দখল ঠেকাতে চেষ্টা অব্যাহত আছে।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//