রাশেদুজ্জামান, নওগাঁ সংবাদদাতা ।।জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে দেশের বৃহত্তর চালের মোকাম নওগাঁয় প্রতি কেজি ধান-চাল পরিবহনে ২ টাকা খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে পাইকারীতে ৩-৪ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৫-৬ টাকা। সংকট মোকাবিলা ও চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে সরকার আমদানি খুলে দিলেও ভারতে চালের বাজার উর্ধ্বমুখী হওয়ায় তাতেও মিলছে না সুফল।
চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় একদিকে উৎপাদন ঘাটতিতে ক্রমাগত ধানের মূল্য বৃদ্ধি, অন্যদিকে বাড়তি পরিবহন খরচের মুখে সহসাই চালের বাজার কমার সম্ভাবনা নেই বলছেন ব্যবসায়ীরা। এতে চরম বিপাকে পড়েছে নি¤œ আয়ের মানুষ।
সরেজমিনে জানা যায়, এবছর বোরো মৌসুমে জেলার ১১টি উপজেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে উৎপাদন ঘাটতি হয়েছে। যার প্রভাবে মৌসুমের শুরু থেকেই হাট বাজারগুলোতে ধানের আমদানি কমতে থাকে। ধান সংকটের কারনে গত কয়েক মাস যাবত ধানের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে মৌসুমের শুরু থেকেই জেলার পাইকারী ও খুচরা বাজারে দফায় দফায় বাড়ছিল চালের দাম। গত কয়েক মাসে দফায় দফায় চালের দাম বৃদ্ধির মূল কারন ছিলো হাট বাজারে ধানের সংকট। সংকট মোকাবিলা ও চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীরা শুল্কমুক্ত অবাধ আমদানির সুযোগ চেয়েছিল। সেই সুযোগ দেয়া হয়নি ব্যবসায়ীদের। ঘাটতির সঠিক পরিমান নিরূপন করতে বিলম্ব হওয়ায় আমদানিও শুরু করা হয় দেরীতে। ততদিনে দেশে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পায় এবং ভারতের বাজারে চালের দাম বেড়ে যায়। ফলে লোকসানের আশঙ্কায় ভারত থেকে চাল আমদানি করতে নিরুৎসাহিত হন জেলার মিল মালিকরা। এরই মধ্যে দেশে ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে জেলার পাইকারী ও খুচরা বাজারগুলোতে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ৩-৬ টাকা। বর্তমানে খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ৫-৬ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি কেজি জিরাশাইল চাল ৬৫-৭০ টাকা, কাটারি ৭০-৭৫ টাকা, ব্রি-২৯ ৫৬-৫৮ টাকা, ব্রি-২৮ ৫৬-৫৮ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ ৫৪-৫৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মোটা চালের সরবরাহ একেবারেই নেই বললেই চলে। এতে বাধ্য হয়ে নি¤œবিত্ত দিনমজুর শ্রেণীর মানুষদেরও চিকন চালের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ফলে দফায় দফায় চালের দাম বাড়ায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাঁদেরকেই।
জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতি মণ জিরা ধান ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৬৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত ১ সপ্তাহ আগে ১ হাজার ৫৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সম্পা কাটারী ধান প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬৪০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪৬০ টাকায়। যা গত ১ সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৬২০ টাকায়।
শহরের হাট নওগাঁ মহল্লার বাসিন্দা রিক্সা চালক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আগে মোটা চাল কিনতাম ৩৫-৩৮ টাকা কেজি। আর এখন বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোন চাল নাই। ৫৪ টাকা কেজি দরে ৩ কেজি চাল কিনলাম। বাজারে সবকিছুর দাম-ই বাড়তেছে। জিনিসপত্রের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে না খেয়ে মরা ছাড়া উপায় থাকবে না। চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে ডিজেলের দাম আবারো কমাতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
শহরের পৌর খুচরা চাল বাজারের ব্যবসায়ী মানিক প্রামাণিক বলেন, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পর মিলগেটে বস্তা (৫০ কেজি) প্রতি চালের দাম ২০০- ২৫০ টাকা বৃদ্ধি করেছে মিলাররা। বাড়তি দাম দিলেও আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের তারা চাল দিতে চান না। মিল গেট থেকে বাজার পর্যন্ত চাল আনতে প্রতি ট্রাকে বাড়তি ৮০০-৯০০ টাকা পরিবহন খরচ গুনতে হচ্ছে। বেশি দামে চাল কেনার কারণেই খরচ সমন্বয় করে মানভেদে প্রতি কেজি মোটা ও চিকন চালের দাম ৫-৬ টাকা বৃদ্ধি মূল্যে আমরাও বিক্রি করছি।
নওগাঁ জেলা চাউলকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, বর্তমানে বাজারে ধানের সরবরাহ কম থাকায় প্রতিযোগীতামূলক ভাবে বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কারনে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ধান কেনার পর মিল পর্যন্ত আনতে প্রতি কেজিতে ২ টাকা বাড়তি খরচ যোগ হয়েছে। তাই পরিবহনের বাড়তি খরচ সমন্বয় করে পাইকারী পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম ৩-৪ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভারতে চালের দাম বেশি। তাই আমদানিকৃত চাল আদৌ আসবে কি না? তা বলা যাচ্ছে না। আমাদের এমনিতেই প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন ঘাটতি আছে। এরই মধ্যে ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে পরিবহন খরচও অনেক বেড়ে গেলো। বাড়তি পরিবহন খরচের মুখে সহসাই চালের বাজার কমার সম্ভাবনা নেই। কৃষকদের প্রণোদনা দিয়ে হলেও দেশে অভ্যন্তরীন ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করা না গেলে আগামীতে চালের বাজার কমার কোন সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন তিনি।
আর//দৈনিক দেশতথ্য//১৭ আগষ্ট-২০২২

Discussion about this post